সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামিম ইকবাল এবং বে*শ্যা রাজনীতি

 

চিনি চিনি ভাই সব সাধুরেই হরেক রকম সাজ
সুযোগ পেলেই দরবেশী ছেড়ে দেখাও উদ্দাম নাচ!
(সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে, কাজী নজরুল ইসলাম)
৫ আগষ্ট (২০২৪) এর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল এক পরিবর্তনের পাশাপাশি নতুন একধরনের আনন্দ উৎযাপনের রীতি তৈরি হয়েছে তা হলো প্রতিপক্ষকে হাতের নাগালে পেলে গণ ধো লা ই অথবা না পেলে বাড়িঘর লুটপাট শেষে আ গু ন ধরিয়ে দেয়া, অহেতুক মামলা দেয়া, এলাকা থেকে বিতারিত করা। এই নতুন রীতি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এই রীতি থেকে বেরিয়ে আসা শুধু অসম্ভব নয় একধরনের নাফরমানির শামিল।
রাজনীতির মাঠ বিশাল। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার কয়েশ মাঠের থেকেও হাজারগুণ বড়। এখানে কেউ টিকে থাকে না। একজন আরেকজনকে মাড়িয়ে চলে যায়। গ্রাম থেকে উঠে আসা কদু মিয়া, অনেক সময় রাজনৈতিকর মাঠে এসে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যায়। গাড়ি-বাড়ি-নারী – সব দিয়ে একাকার হয়ে যায় কদু মিয়ার জীবন আবার রাজনৈতিক মাঠে এসে সম্পদশালী যদু খান হয়ে যায় পথের ভিখারি। ফায়দার থেকে খরচার খাতায় হিসাব বাড়ে। অতীত পর্যালোচনায় রাজনীতির মাঠে এই যদু খানের সংখ্যাই বেশি।
রাজনৈতিক মাঠে পা দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, যিনি ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত‌। সেখানে আম্পায়ারের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের কাছে বর্তমান যে তরুণ প্রজন্ম তারা প্রথমবারের মতো ভারত বি দ্বে ষী হয়ে উঠে। তরুণ প্রজন্মের মাঝে কার্যত সেইদিন থেকেই ভারতের প্রতি একধরণের বি দ্বে ষী মনোভাব লালন করতে থাকে এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়ে যান তরুণদের আইডল। তিনি যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে বল করতেন তখন তরুণদের বুকের মাঝে প্রত্যাশার জন্ম দিতো। তিনি শুধু‌ বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের নয়, তিনি সামগ্রিক বাংলাদেশের তরুণদের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার উইকেট লাগত না, চার-ছয় অথবা শতক করা লাগতো না। তিনি মাঠে থাকলেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠত বাংলাদেশ। তুমুল এই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে গিয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতিতে। ব্যাস, জনপ্রিয়তার যে পাহাড় কোনদিন ঢলানো যেতো না, সেই পাহাড় বরফ হয়ে গেলো এবং গলে গেলো নিমেষেই। ইতিহাসের সেরা এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার যার বিদায় হতো ইতিহাস স্মরণীয় তার বিদায়ের ম্যাচটিও দেখলেন না কেউ কেউ। তরুণরা আগ্রহ হারিয়ে ফেললো তার ওপর থেকে। যার বিরুদ্ধে কেউ কখনও খারাপ কিছু কল্পনাও করতে পারতো না, তাকে নিয়ে ট্রল, প্রতিবেদন, সমালোচনা শুরু হলো না। ভুলে গেলো মাশরাফি বিন মর্তুজা বলে একজন ছিলেন যিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন, দৌড়াতেন, মাঠে বসে নিজ হাতে ইনজেকশন পুশ করে হাঁটু থেকে পানি বের করতেন।
মাশরাফি বিন মর্তুজার এই পরিণতি শিক্ষা দেননি অন্য আরেক বিশ্বসেরা বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা। তিনি হয়তো তার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখেছিলেন রাজনীতি মানেই টাকা আর টাকা এবং টাকার প্রতি একটা ঐশ্বরিক আকর্ষণ সাকিব আল হাসানের ছিলেন। এই আকর্ষণের কারণে তার নাম হয়ে গিয়েছিলো বিজ্ঞাপন আল হাসান, শোরুম উদ্বোধন আল হাসান। বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়েই তিনি খেলার থেকে বেশি বিজ্ঞাপন করতে আগ্রহী ছিলেন। খেলার মাঝে গিয়ে করতেন শোরুম উদ্বোধন। দেশের বাহিরে খেলতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হতেন। টাকার বিনিময়ে তুলতেন ছবি। টাকার বিনিময়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন করছেন। ম্যাচ ফিক্সারদের সাথে ছিলো যোগাযোগ। টাকা, টাকা, টাকা। এই টাকার মেশিন রাজনীতি। কথায় মানবসেবা এবং মনেমগজে, অস্থিমাজ্জায় শিরার শিরায় টাকার নেশায় রাজনীতির মাঠে ডুকলেন। জয় লাভ করলেন। এমপি হয়েই ক্রয় করলেন শুল্কমুক্ত গাড়ি। তারপর ৫ আগষ্ট। সব এলোমেলো হয়েগেলো তার। টাকার মেশিন আটকে গেলো। বাড়িঘর ভা ঙ চু র হলো। দেশের হয়ে আর তেমন খেলা হলো না। বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটার যিনি অগনিত ম্যাচ জিতিয়েছেন দেশের হয়ে। দেশকে নিয়ে গেছেন অন্য একমাত্রায়। ক্রিকেট বিশ্ব যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সমিহ করে সেই ক্রিকেটার দেশের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলতে চাইলেন দেশের মাটিতে। শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না। বিদায় হলো এক কিংবদন্তির কিন্তু জানলো না প্রকৃতি, হলো না আয়োজন। বৃথা গেলো জীবনের সকল অর্জন। রাজনীতির পিচ্ছিল পথ তাকে ফেলে দিলেন। দেশের মাটি ভবিষ্যত ছুঁয়ে দেখতে পারবেন কিনা তাও অনিশ্চিত। কারণ জীনটাই বড় অনিশ্চিত।
রাজনীতি সবার জন্য নয়। তারা তুমুল জনপ্রিয় অথবা সবার প্রিয়। তাদের জন্য অবশ্যই রাজনীতি নয়। রাজনীতি মতভেদ তৈরি করে, রাজনীতি ভাগ করে। রাজনীতি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। রাজনৈতিক কোন ব্যক্তি যতই ভালো হোক না কেন তিনি কখনোই সবার প্রিয় হতে পারবেন না। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা রাজনীতিতে আসার আগে সবার প্রিয় ছিলেন। ছিলেন পূজনীয়। কিন্তু রাজনীতি সব বদলে দিলো।
তামিম ইকবাল, তিনি এই দুই ক্রিকেটারদের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি হয়েছেন অতিচালক। তিনি সরাসরি মাঠে নেই। তবে তিনি তৎকালীন প্র ধা ন মন্ত্রী শে খ হা সি না কাছে যেতেন মাঝে মাঝেই। গণভবনে প্রবেশ/বাহিরের এন্টি খাতা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ৪ আগষ্টও (২০২৪) তিনি গিয়েছিলেন গণভবনে। সেই তামিম ইকবাল ৫ আগষ্টের পর বৌ বাচ্চাসহ গিয়েছিলেন ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। ছবি তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
গতকাল গিয়েছিলেন (১০ মে ২০২৫) বিএনপির সভায়। বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে অবশ্য বলেছেন রাজনীতি তিনি করবেন না, রাজনীতিতে হয়তো আসবেও না । কিন্তু আক্ষরিক অর্থে তিনি রাজনীতিটাই করছেন একদম পাকা হাতে। রাজনীতির অনেকগুলো স্তরের একটা স্তর হলো ‘বেশ্যা রাজনীতি’। ক্ষমতা যার আমি তার। এই বেশ্যা রাজনীতিটা করছেন তামিম ইকবাল। এই বেশ্যা রাজনীতির ভাবটা ইতিমধ্যে জনগণ বুঝে গেছে। সাকিব আল হাসান যেমন মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়েছেন তিনি তামিম ইকবালের ওই দুই হবার সময় খুব নিকটবর্তী। বাংলাদেশের জনগণ অতি উৎসাহী কিন্তু বোকা না। তারা কথার লেজ বোঝে, তারা বোঝে কোন নদীর স্রোত কোন সাগরে গিয়ে মেশে, তারা জানে কোনটা রাজনীতি, কোনটা টাকার রাজনীতি আর কোনটা বেশ্যা রাজনীতি।
তামিম ইকবালের উচিত, বাংলাদেশের কাছে এবং তার ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া। যতবেশি অন্তরালে থাকবে ততবেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তামিম ইকবালদের মতো লোকদের রাজনীতি করতেন না। মানবসেবার ইচ্ছে থাকলে, নিজ এলাকাকে পরিবর্তনের ইচ্ছে থাকলে তারা কি চায় তা জানালেই তা হয়ে যাবে। কারণ একজন জনপ্রতিনিধিকে তার নিজ এলাকা মান্য করে কিন্তু তামিম ইকবালদের মতো জাতীয় ব্যক্তিত্বদের পুরো দেশ মান্য করে। তাই ক্ষমা চেয়ে ইতিপূর্বের ভুলগুলো ধুয়ে ফেলার সময় এখন। তামিম ইকবাল যেন মনে রাখে, সময় গেলে সাধন হবে না।
লেখা : ওয়াজেদ হোসেন জীম
জনপ্রিয়

সরকার পরিবর্তনের জন্য এটি একটি সুযোগ: ইরানের সাবেক যুবরাজ রেজা পাহলভি

তামিম ইকবাল এবং বে*শ্যা রাজনীতি

প্রকাশের সময়: ০২:২৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

 

চিনি চিনি ভাই সব সাধুরেই হরেক রকম সাজ
সুযোগ পেলেই দরবেশী ছেড়ে দেখাও উদ্দাম নাচ!
(সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে, কাজী নজরুল ইসলাম)
৫ আগষ্ট (২০২৪) এর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল এক পরিবর্তনের পাশাপাশি নতুন একধরনের আনন্দ উৎযাপনের রীতি তৈরি হয়েছে তা হলো প্রতিপক্ষকে হাতের নাগালে পেলে গণ ধো লা ই অথবা না পেলে বাড়িঘর লুটপাট শেষে আ গু ন ধরিয়ে দেয়া, অহেতুক মামলা দেয়া, এলাকা থেকে বিতারিত করা। এই নতুন রীতি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এই রীতি থেকে বেরিয়ে আসা শুধু অসম্ভব নয় একধরনের নাফরমানির শামিল।
রাজনীতির মাঠ বিশাল। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার কয়েশ মাঠের থেকেও হাজারগুণ বড়। এখানে কেউ টিকে থাকে না। একজন আরেকজনকে মাড়িয়ে চলে যায়। গ্রাম থেকে উঠে আসা কদু মিয়া, অনেক সময় রাজনৈতিকর মাঠে এসে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যায়। গাড়ি-বাড়ি-নারী – সব দিয়ে একাকার হয়ে যায় কদু মিয়ার জীবন আবার রাজনৈতিক মাঠে এসে সম্পদশালী যদু খান হয়ে যায় পথের ভিখারি। ফায়দার থেকে খরচার খাতায় হিসাব বাড়ে। অতীত পর্যালোচনায় রাজনীতির মাঠে এই যদু খানের সংখ্যাই বেশি।
রাজনৈতিক মাঠে পা দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, যিনি ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত‌। সেখানে আম্পায়ারের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের কাছে বর্তমান যে তরুণ প্রজন্ম তারা প্রথমবারের মতো ভারত বি দ্বে ষী হয়ে উঠে। তরুণ প্রজন্মের মাঝে কার্যত সেইদিন থেকেই ভারতের প্রতি একধরণের বি দ্বে ষী মনোভাব লালন করতে থাকে এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়ে যান তরুণদের আইডল। তিনি যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে বল করতেন তখন তরুণদের বুকের মাঝে প্রত্যাশার জন্ম দিতো। তিনি শুধু‌ বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের নয়, তিনি সামগ্রিক বাংলাদেশের তরুণদের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার উইকেট লাগত না, চার-ছয় অথবা শতক করা লাগতো না। তিনি মাঠে থাকলেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠত বাংলাদেশ। তুমুল এই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে গিয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতিতে। ব্যাস, জনপ্রিয়তার যে পাহাড় কোনদিন ঢলানো যেতো না, সেই পাহাড় বরফ হয়ে গেলো এবং গলে গেলো নিমেষেই। ইতিহাসের সেরা এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার যার বিদায় হতো ইতিহাস স্মরণীয় তার বিদায়ের ম্যাচটিও দেখলেন না কেউ কেউ। তরুণরা আগ্রহ হারিয়ে ফেললো তার ওপর থেকে। যার বিরুদ্ধে কেউ কখনও খারাপ কিছু কল্পনাও করতে পারতো না, তাকে নিয়ে ট্রল, প্রতিবেদন, সমালোচনা শুরু হলো না। ভুলে গেলো মাশরাফি বিন মর্তুজা বলে একজন ছিলেন যিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন, দৌড়াতেন, মাঠে বসে নিজ হাতে ইনজেকশন পুশ করে হাঁটু থেকে পানি বের করতেন।
মাশরাফি বিন মর্তুজার এই পরিণতি শিক্ষা দেননি অন্য আরেক বিশ্বসেরা বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা। তিনি হয়তো তার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখেছিলেন রাজনীতি মানেই টাকা আর টাকা এবং টাকার প্রতি একটা ঐশ্বরিক আকর্ষণ সাকিব আল হাসানের ছিলেন। এই আকর্ষণের কারণে তার নাম হয়ে গিয়েছিলো বিজ্ঞাপন আল হাসান, শোরুম উদ্বোধন আল হাসান। বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়েই তিনি খেলার থেকে বেশি বিজ্ঞাপন করতে আগ্রহী ছিলেন। খেলার মাঝে গিয়ে করতেন শোরুম উদ্বোধন। দেশের বাহিরে খেলতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হতেন। টাকার বিনিময়ে তুলতেন ছবি। টাকার বিনিময়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন করছেন। ম্যাচ ফিক্সারদের সাথে ছিলো যোগাযোগ। টাকা, টাকা, টাকা। এই টাকার মেশিন রাজনীতি। কথায় মানবসেবা এবং মনেমগজে, অস্থিমাজ্জায় শিরার শিরায় টাকার নেশায় রাজনীতির মাঠে ডুকলেন। জয় লাভ করলেন। এমপি হয়েই ক্রয় করলেন শুল্কমুক্ত গাড়ি। তারপর ৫ আগষ্ট। সব এলোমেলো হয়েগেলো তার। টাকার মেশিন আটকে গেলো। বাড়িঘর ভা ঙ চু র হলো। দেশের হয়ে আর তেমন খেলা হলো না। বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটার যিনি অগনিত ম্যাচ জিতিয়েছেন দেশের হয়ে। দেশকে নিয়ে গেছেন অন্য একমাত্রায়। ক্রিকেট বিশ্ব যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সমিহ করে সেই ক্রিকেটার দেশের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলতে চাইলেন দেশের মাটিতে। শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না। বিদায় হলো এক কিংবদন্তির কিন্তু জানলো না প্রকৃতি, হলো না আয়োজন। বৃথা গেলো জীবনের সকল অর্জন। রাজনীতির পিচ্ছিল পথ তাকে ফেলে দিলেন। দেশের মাটি ভবিষ্যত ছুঁয়ে দেখতে পারবেন কিনা তাও অনিশ্চিত। কারণ জীনটাই বড় অনিশ্চিত।
রাজনীতি সবার জন্য নয়। তারা তুমুল জনপ্রিয় অথবা সবার প্রিয়। তাদের জন্য অবশ্যই রাজনীতি নয়। রাজনীতি মতভেদ তৈরি করে, রাজনীতি ভাগ করে। রাজনীতি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। রাজনৈতিক কোন ব্যক্তি যতই ভালো হোক না কেন তিনি কখনোই সবার প্রিয় হতে পারবেন না। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা রাজনীতিতে আসার আগে সবার প্রিয় ছিলেন। ছিলেন পূজনীয়। কিন্তু রাজনীতি সব বদলে দিলো।
তামিম ইকবাল, তিনি এই দুই ক্রিকেটারদের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি হয়েছেন অতিচালক। তিনি সরাসরি মাঠে নেই। তবে তিনি তৎকালীন প্র ধা ন মন্ত্রী শে খ হা সি না কাছে যেতেন মাঝে মাঝেই। গণভবনে প্রবেশ/বাহিরের এন্টি খাতা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ৪ আগষ্টও (২০২৪) তিনি গিয়েছিলেন গণভবনে। সেই তামিম ইকবাল ৫ আগষ্টের পর বৌ বাচ্চাসহ গিয়েছিলেন ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। ছবি তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
গতকাল গিয়েছিলেন (১০ মে ২০২৫) বিএনপির সভায়। বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে অবশ্য বলেছেন রাজনীতি তিনি করবেন না, রাজনীতিতে হয়তো আসবেও না । কিন্তু আক্ষরিক অর্থে তিনি রাজনীতিটাই করছেন একদম পাকা হাতে। রাজনীতির অনেকগুলো স্তরের একটা স্তর হলো ‘বেশ্যা রাজনীতি’। ক্ষমতা যার আমি তার। এই বেশ্যা রাজনীতিটা করছেন তামিম ইকবাল। এই বেশ্যা রাজনীতির ভাবটা ইতিমধ্যে জনগণ বুঝে গেছে। সাকিব আল হাসান যেমন মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়েছেন তিনি তামিম ইকবালের ওই দুই হবার সময় খুব নিকটবর্তী। বাংলাদেশের জনগণ অতি উৎসাহী কিন্তু বোকা না। তারা কথার লেজ বোঝে, তারা বোঝে কোন নদীর স্রোত কোন সাগরে গিয়ে মেশে, তারা জানে কোনটা রাজনীতি, কোনটা টাকার রাজনীতি আর কোনটা বেশ্যা রাজনীতি।
তামিম ইকবালের উচিত, বাংলাদেশের কাছে এবং তার ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া। যতবেশি অন্তরালে থাকবে ততবেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তামিম ইকবালদের মতো লোকদের রাজনীতি করতেন না। মানবসেবার ইচ্ছে থাকলে, নিজ এলাকাকে পরিবর্তনের ইচ্ছে থাকলে তারা কি চায় তা জানালেই তা হয়ে যাবে। কারণ একজন জনপ্রতিনিধিকে তার নিজ এলাকা মান্য করে কিন্তু তামিম ইকবালদের মতো জাতীয় ব্যক্তিত্বদের পুরো দেশ মান্য করে। তাই ক্ষমা চেয়ে ইতিপূর্বের ভুলগুলো ধুয়ে ফেলার সময় এখন। তামিম ইকবাল যেন মনে রাখে, সময় গেলে সাধন হবে না।
লেখা : ওয়াজেদ হোসেন জীম