রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলছড়ির চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

গাইবান্ধা জেলার চরাঞ্চলগুলোতে নেই কোন কলেজ এবং পর্যাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা । ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাইবান্ধার চার উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় সবমিলিয়ে ১৬৫টি চর-দ্বীপচর রয়েছে। এ চার উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের মধ্যে এসব চরের বিস্তৃতি।

জানা যায়, গাইবান্ধার চার উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। সাক্ষরতার শতকরা হার ৬৬.৮৭%। স্বাধীন দেশের নাগরিকের অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার শিক্ষা। কিন্তু এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজারো শিক্ষার্থী। নদী বেষ্টিত এসব চরাঞ্চলে ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা নেই বললেই চলে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩টি মাদ্রাসা। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় এই কয়েকটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারেই কম। তারপর আবার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে । ১৬৫ দ্বীপ চরের বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য একটিও কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পরপরই পড়াশোনা করা হয়ে উঠে না । কলেজ না থাকায় চরাঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ঝরে পড়ছে অকালে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জেলার সামগ্রিক শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। শিক্ষার্থীরা অকালে ঝড়ে পড়ার কারণে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে বাল্যবিয়েসহ শিশুশ্রমে। জানা যায়, গাইবান্ধার চরাঞ্চলের ৩০-৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। যারা ভর্তি হয় তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। এর পিছনে দারিদ্র্যতা , চর এলাকায় পর্যাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা, এলাকার অভিভাবকদের অসচেতনতা, কষ্টসাধ্য যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বাল্যবিবাহ অন্যতম।

 

চরাঞ্চলের অভিভাবকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে আর পড়াশোনার সুযোগ হয়ে উঠে না। এ বিষয়ে তারা বলছেন, এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। আবার নদী ভাঙ্গন ও দারিদ্র্যতার কড়াল গ্রাসে অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থার বেহাল দশার কারণে তাদের সন্তানকে অন্য চরে বা শহরের স্কুলে পড়ানোর সাধ্য তাদের নেই । তবে কিছু অভিভাবকদের সামর্থ আছে, কেবল তারাই সন্তানদের শহরে আবাসিক হোস্টেল বা মেসে রেখে পড়াশুনা করাতে পারেন। তারা বলেন, চরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী যথেষ্ট মেধাবী। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি বাংলাদেশের অনেক বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাইবান্ধার চরের শিক্ষার্থীদের বিচরণ রয়েছে। এ থেকে আমরা বলতেই পারি ইচ্ছে থাকলেও যেন উপায় মিলছে না। যেহেতু চরগুলো প্রায়ই নদীভাঙনের কবলে পড়ে সেক্ষেত্রে প্রতিটি চরে অস্থায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থাপন করা হলে ওইসব এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যেতো। যেহেতু রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা। সামগ্রিকভাবে একটি সুন্দর সমাজ গড়ার জন্যও সবার জন্য নিশ্চিত হোক শিক্ষার সমান সুযোগ। তাই চরাঞ্চলবাসীর দাবী, বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রমকে যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে তেমনি চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের জন্যও সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পূর্ণতা দেওয়া অতীব জরুরী ।

সদ্য চরাঞ্চলের কয়েকজন এসএসসি পরিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে জানায়, আমারা চর থেকে এসে কালির বাজারে মেসে থেকে এস,এস,সি পরিক্ষা দিচ্ছি। পরিক্ষা শেষ হলে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথায় ভর্তি হবো তা জানা নেই। কারণ চরঞ্চালে আমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন কলেজ নেই। আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও অস্বচ্ছল। তাই শহরে বা উপজেলা শহরে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালানোর টাকা জোগানো আমাদের পরিবারের জন্য খুবই কস্টকর ব্যাপার। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি চরাঞ্চলে অন্তত একটি কলেজ স্থাপন করা হলে আমরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবো।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। চরাঞ্চলের যেসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সেসব এলাকাকে অগ্রধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।

 

 

 

ফুলছড়ির চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশের সময়: ০২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গাইবান্ধা জেলার চরাঞ্চলগুলোতে নেই কোন কলেজ এবং পর্যাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা । ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাইবান্ধার চার উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় সবমিলিয়ে ১৬৫টি চর-দ্বীপচর রয়েছে। এ চার উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের মধ্যে এসব চরের বিস্তৃতি।

জানা যায়, গাইবান্ধার চার উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। সাক্ষরতার শতকরা হার ৬৬.৮৭%। স্বাধীন দেশের নাগরিকের অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার শিক্ষা। কিন্তু এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজারো শিক্ষার্থী। নদী বেষ্টিত এসব চরাঞ্চলে ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা নেই বললেই চলে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩টি মাদ্রাসা। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় এই কয়েকটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারেই কম। তারপর আবার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে । ১৬৫ দ্বীপ চরের বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য একটিও কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পরপরই পড়াশোনা করা হয়ে উঠে না । কলেজ না থাকায় চরাঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ঝরে পড়ছে অকালে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জেলার সামগ্রিক শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। শিক্ষার্থীরা অকালে ঝড়ে পড়ার কারণে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে বাল্যবিয়েসহ শিশুশ্রমে। জানা যায়, গাইবান্ধার চরাঞ্চলের ৩০-৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। যারা ভর্তি হয় তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। এর পিছনে দারিদ্র্যতা , চর এলাকায় পর্যাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা, এলাকার অভিভাবকদের অসচেতনতা, কষ্টসাধ্য যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বাল্যবিবাহ অন্যতম।

 

চরাঞ্চলের অভিভাবকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে আর পড়াশোনার সুযোগ হয়ে উঠে না। এ বিষয়ে তারা বলছেন, এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। আবার নদী ভাঙ্গন ও দারিদ্র্যতার কড়াল গ্রাসে অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থার বেহাল দশার কারণে তাদের সন্তানকে অন্য চরে বা শহরের স্কুলে পড়ানোর সাধ্য তাদের নেই । তবে কিছু অভিভাবকদের সামর্থ আছে, কেবল তারাই সন্তানদের শহরে আবাসিক হোস্টেল বা মেসে রেখে পড়াশুনা করাতে পারেন। তারা বলেন, চরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী যথেষ্ট মেধাবী। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি বাংলাদেশের অনেক বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাইবান্ধার চরের শিক্ষার্থীদের বিচরণ রয়েছে। এ থেকে আমরা বলতেই পারি ইচ্ছে থাকলেও যেন উপায় মিলছে না। যেহেতু চরগুলো প্রায়ই নদীভাঙনের কবলে পড়ে সেক্ষেত্রে প্রতিটি চরে অস্থায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থাপন করা হলে ওইসব এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যেতো। যেহেতু রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা। সামগ্রিকভাবে একটি সুন্দর সমাজ গড়ার জন্যও সবার জন্য নিশ্চিত হোক শিক্ষার সমান সুযোগ। তাই চরাঞ্চলবাসীর দাবী, বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রমকে যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে তেমনি চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের জন্যও সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পূর্ণতা দেওয়া অতীব জরুরী ।

সদ্য চরাঞ্চলের কয়েকজন এসএসসি পরিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে জানায়, আমারা চর থেকে এসে কালির বাজারে মেসে থেকে এস,এস,সি পরিক্ষা দিচ্ছি। পরিক্ষা শেষ হলে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথায় ভর্তি হবো তা জানা নেই। কারণ চরঞ্চালে আমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন কলেজ নেই। আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও অস্বচ্ছল। তাই শহরে বা উপজেলা শহরে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালানোর টাকা জোগানো আমাদের পরিবারের জন্য খুবই কস্টকর ব্যাপার। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি চরাঞ্চলে অন্তত একটি কলেজ স্থাপন করা হলে আমরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবো।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। চরাঞ্চলের যেসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সেসব এলাকাকে অগ্রধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।