ভারতীয় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দু একদিনের মধ্যেই দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, রমজানের পেঁয়াজের কোন কোন সমস্যা হবে না। কেউ যদি যোগ সাজোস করে পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে যদি কোন মিল গেটে সয়াবিন তেলের দাম এক টাকা বেশি নেয় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত ‘পিয়ার রিভিউ ডিসিমিনেশন ওয়ার্কশপ কম্পিটিশন এ্যাক্ট-২০১২ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চিনির দাম বেড়ে গেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের চিনির ফেক্টরিতে আগুনের কারণে ৩০ হাজার টন ক্ষতি হয়েছে।আমাদের চাহিদা ৩ লাখ টন। এ কারণে কোনো ক্ষতি হবে না। কোন জায়গায় দাম বাড়লো তা নিউজ না কোন জায়গায় দাম কমলো এই নিউজ হলে ভাল হয়।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, স্বাধীনতার পরে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশনের সংযোগ আছে। বাজারে প্রতিযোগিতামূলক যৌক্তিক মূল্য চাই। প্রতিযোগিতা না থাকলে বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন।
তিনি বলেন, কোনো গোষ্ঠী বাজারে যেনো কোন ধরনের নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আইন দরকার হয়।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইন বাস্তবায়নে প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করা হবে। দেশে পণ্যের দাম কত হওয়া দরকার তা বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সম্প্রতি মিটিংয়ে ঐক্যমত হতে পারেনি। দেশে কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য কত হওয়া দরকার তা নির্ধারণ করতে হবে।
আমদানিকারণরা পণ্য না আনলে আমরা বাজারে পাবো না। উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ঠিক থাকতে হবে। সঠিক দাম না পেলে যেমন উৎপাদন হবে না, তেমনি আমদানিকারকরাও আমদানি করবে না।
প্রতিযোগিতা কমিশন কেন দরকার সে সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনের পটভূমিতে বলা হয়েছে- যেহেতু দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎসাহিতকরণ, নিশ্চিত ও বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।
আইনের ধারা রিভিউ সম্পর্কে বলেন, আমরা আনক্টেডের সহায়তায় রিভিউ করছি। এটি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য আইনবিদদের কাছে প্রত্যাশা করি। আগামীতে যাতে নিজেরা করতে পারি।
প্রতিযোগিতা আইন সম্পর্কে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আইনপ্রয়োগে আমাদের দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভালোভাবে বুঝতে হয়। চাহিদা ও যোগানে সমন্বয় করতে প্রচুর লোক থাকে। এতে উৎপাদনকারী স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির কাজই হচ্ছে ঠকানো। অর্থনীতি বৃদ্ধি পেলে প্রতিযোগিতা কমিশন তা সমন্বয় করতে কাজ করে। অনেকটা বাধার মুখে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়।
তিনি বলেন, সব ধরনের সংস্কারের এখনই সময় হয়নি। উৎপাদনকারীদের বুঝতে হবে ব্যবসা হচ্ছে মানুষের জন্য। মানুষ না কিনলে তারা কোথায় বিক্রি করবে। সরকারের পলিসি হচ্ছে চলমান প্রবাহের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করা। ডব্লিউটির আইন বোঝার লোক দেশে কম। এটি যেমন প্রশাসনে নেই, তেমনি সাধারণভাবেও নেই। এসব বোঝার ক্ষেত্রে নতুন লোক তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলক এটি দেখাতে পারলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবসায় এগিয়ে আসবে।
উন্মুক্ত আলোচনায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে। এসব আইনগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তিতে কাজ করা দরকার। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন নিজ থেকে কিছু মামলা করে অনেককে শাস্তির আওতায় এনেছে। সমন্বিতভাবে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
সংস্থাটির চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহঅতিথিসানুল ইসলাম টিটু, বিশেষ ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনক্টেডের ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স এলিজাবেথ গাছুরি, বক্তব্য রাখেন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
কালের চিঠি/শর্মিলী