লাভের আশায় আলু চাষ করে লোকসান গুনছে চাষীরা উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা গাইবান্ধায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ হলেও এবার দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় আলু বিক্রি করছেন প্রায় অর্ধেক দামে। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে । সার্বিকভাবে চলতি বছরে আলু চাষে লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধার কৃষকরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্যে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৭.২৬ টাকা। জমি তৈরি, সার, বীজ, শ্রমিক, সেচ, কীটনাশক, জমি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় নিয়ে এ উৎপাদন খরচ নিরূপণ করা হয়।
গাইবান্ধার পাইকারি বাজারে বর্তমানে জাত ভেদে প্রতি মণ (৪০কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। এতে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায় । স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারা জমি থেকে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনছে । মাথার উপর ঋনের বোঝা থাকায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে লোকসান থাকা সত্ত্বেও আলু বিক্রি করছে ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছরে ১২ হাজার ৩৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আলু চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমিতে।
জেলার সাত উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। ফুলপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। গড়ে ৯০ মণের মতো এবার ফলন হতে পারে। সে হিসাবে, প্রতি মণে প্রায় ৪৫০-৫০০ টাকা খরচ হয়েছে।
কিন্তু বাজারে দাম এর অর্ধেক। এ কারণে এখনও বিক্রি করিনি আলু রোদে শুকিয়ে ঘরে বস্তা করে রেখেছি । আরও কয়েকদিন পর তুলে কোল্ড স্টোরেজে রাখব।’
কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বৃদ্ধি আরেক দফা চাপ সৃষ্টি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর বস্তা ৩৫০ টাকায় রাখতাম। ৫০ কেজির বস্তায় ৬৫ কেজি আলু ধরত। কিন্তু এবার কেজিতে ৮ টাকা দিতে হবে। ৮ টাকা স্টোরেজ ভাড়া দিয়ে পরে কয় টাকায় আলু বিক্রি করতে পারি, বলতে পারছি না।’
একই কথা জানান সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘রোমানা ও হল্যান্ড জাতের আলু চাষ করেছি। আমার প্রতি বিঘায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে যারা বীজ কিনে আলু চাষ করে তাদের খরচ আরও অনেক বেশি। গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল, এ কারণে বেশি জমিতে আলু চাষ করেছি। কিন্তু এই দামে আলু চাষ করলে কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
গত বছরের বেশিরভাগ সময় আলুর দাম ছিল অস্বাভাবিক বেশি। ফলে বাড়তি লাভের আশায় কৃষকরা আলু চাষ বেশি করেছেন। তবে এখন উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘যে বছর দাম বেশি থাকে এর পরের বছর কৃষকরা সে ফসল বেশি করেন। আবার দাম কম থাকলে পরের বছর কম ফসল করেন। এটা কমন সমস্যা। এখন ফলন বেশি হলে আবার দাম কমে যায়।