
বিমল সরকার: ঢাকার মতো একটি রাজধানী শহর, যেখানে কোটি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা নির্ভর করে, একটু বৃষ্টি কিংবা প্রতিটি বর্ষাকালে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে-রাস্তায় হাঁটু সমান জল, যানজটের অচলাবস্থা, রোগবালাইয়ের আশঙ্কা, আর মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি। বৃষ্টি প্রাকৃতিক নিয়মে আসে, কিন্তু তার পরিণতি যখন হয় মৃত্যুফাঁদে আটকে পড়া শহর, তখন প্রশ্ন ওঠে-এটি কি সত্যিই কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ? নাকি দুর্নীতির, অব্যবস্থাপনার এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের নির্মম খেসারত?
ঢাকার বুকে অগণিত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, বাস্তবে তাদের বড় অংশই কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার যে অভাব, তার সাথে যোগ হয়েছে এলোমেলোভাবে রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, আর ক্ষমতাবানদের স্বার্থকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এর ফলশ্রুতিতে রাজধানী এক টুকরো বৃষ্টিতেই জর্জরিত নগর-দুর্ভোগে ডুবে যায়।
প্রশ্ন জাগে- যারা দেশের নেতৃত্বে আছেন, তারা কি সত্যিই এই নগরের মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করেন? নাকি তাদের কাছে শহর মানে কেবলই প্রজেক্টের বাজেট, ঠিকাদারী স্বার্থ আর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মঞ্চ?
রাজনীতি যখন হয়ে ওঠে কেবল ক্ষমতার খেলায়, তখন সাধারণ মানুষ ডুবে যায় কাদা-জলে, আর নেতারা ডুবে যান ভোগ-বিলাসে।
ইতিহাস সাক্ষী-যে রাষ্ট্র প্রধান,যে নেতা জনগণের কষ্ট ভুলে যান, তারা টেকেন না সময়ের আদালতে। আজকের ঢাকা কেবল একটি নগর নয়; এটি এক নির্মম আয়না, যেখানে প্রতিফলিত হয় দুর্নীতি, ভণ্ডামি এবং দায়িত্বহীনতার ছবি।বৃষ্টির জল ঢাকার রাস্তায় কেবল কাদা আনে না-এটি আনে বিবেকের প্রশ্ন, নেতৃত্বের হিসাব, এবং একটি প্রজন্মের ক্রোধ।
একটি নগরকে উন্নত করা সম্ভব কেবল পরিকল্পিত নগরায়ণ, স্বচ্ছ শাসন, এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার মাধ্যমে। প্রতিটি ড্রেন, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি পরিকল্পনা হতে হবে আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে। নয়তো প্রতিবার বর্ষাকালে ঢাকা ডুববে, আর ইতিহাসে লেখা হবে—এটি সেই রাজধানী, যেটি ভেঙে পড়েছিল নিজের নেতৃত্বের অযোগ্যতায়।
পরিশেষ বলি-
রাজধানীকে টিকিয়ে রাখে ইট-পাথর নয়, টিকিয়ে রাখে নেতৃত্বের বিবেক – বিমল সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















