
বিমল সরকার, কালের চিঠি গ্লোবাল ডেস্ক : সত্য ও সাহসীর পথে হাঁটা মানে কি আজও মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া? যে পেশা অপরাধ উন্মোচন করে, মানুষের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় নিজের জীবনকে পণ রাখে, সেই পেশার মানুষকে কি আজও বেতনহীন, সুরক্ষাহীন, আর রক্ষাহীন থাকতে হবে? গাজীপুরে এক দিনের ব্যবধানে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা- একজন নিহত, অন্যজন গুরুতর আহত। মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে একটি অপরাধের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে প্রকাশ্য সড়কে এলোপাতাড়ি কোপানো হলো ।
আনোয়ার হোসেন- চাঁদাবাজির প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে একদল মানুষের বেধড়ক প্রহারে রক্তাক্ত। প্রশ্ন হলো- এরা কি নিজের জন্য ভিডিও করছিলেন? না, করছিলেন জনগণের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, সেই সরকার ও আইনের জন্য যা নাকি নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার শপথ নিয়েছে।তাহলে আজ সরকারের কাছে আমাদের সরাসরি প্রশ্ন-আপনার শপথ কোথায় গেল? আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি ঘটনার সময় দাঁড়িয়ে থেকেও নীরব দর্শকের ভূমিকা নেবে? আপনারা কি এভাবে প্রমাণ করতে চান, যে সাংবাদিকতা এই দেশে আসলেই মৃত্যুর সমার্থক ? বেতনহীন, চুক্তিবিহীন, নিরাপত্তাবিহীন সাংবাদিকদের কথা চিন্তা করার কি কেউ নেই । একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের এ এ অবস্থা আর সহ্য করা যায় না ।যারা মাঠে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে, আর্থিক দুর্বলতা সত্ত্বেও যাদের চ্যালেন্জে সত্য পৌঁছায় জনগণের কাছে তাদের পুরস্কার যদি মৃত্যু হয় তবে কি এ পথের পথিকেরা সত্যের লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারবে? আপনারা কি এও চান, তারা সত্যের বদলে বিজ্ঞাপনের কমিশন আর প্রভাবশালীর পক্ষে কাজ করুক? এই যে রাষ্ট্রের সম্মানিত কর্ণধার ,তোমাকেই বলছি- সাংবাদিকের মৃত্যু শুধু একজনের প্রাণহানি নয়, এটি গণতন্ত্রের বুকের ভেতর ঢুকে যাওয়া একটি ছুরি। তুহিন ও আনোয়ারের রক্ত কেবল দুইটি পরিবারকে শোকের সাগরে ফেলেনি- এটি পুরো পেশাকে আতঙ্কিত করেছে।
আপনারা কি বুঝতে পারছেন, প্রতিদিন একজন সাংবাদিক ভয় পেলে, প্রতিদিন একটি খবর জন্ম নেওয়ার আগেই মারা যায় ! এভাবেই ধীরে ধীরে নির্বাক হয়ে যায় রাষ্ট্র। তুহিনের ভাই আজ মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে বিচার চেয়েছেন, কিন্তু বিচার কি হবে? সাগর-রুনির বিচারটা কিভাবে কোথায় আটকে আছে তা কি জনগণ জানতে চায় না ? আনোয়ারের মা মামলার কাগজ হাতে ধরেছেন, কিন্তু ন্যায়বিচার কি পাবেন? আমরা কি আরও একবার দেখব, মামলা ধুলো জমিয়ে ফাইলের স্তূপে চাপা পড়ে যাবে? সরকার কি প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, আর কোনো সত্যসন্ধানী তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারাবে না? নাকি এই প্রতিশ্রুতিও হবে কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতার অলংকার? কালের চিঠি গ্লোবাল ডেস্ক থেকে আমরা এই প্রশ্ন রাষ্ট্রের দরবারে রেখে দিচ্ছি- কত তুহিনের রক্ত, কত আনোয়ারের কান্না লাগবে, সরকারের বিবেক জাগাতে? সত্যের পথে হাঁটা কি বেতনবিহীন মৃত্যুর পথ হয়েই থাকবে, নাকি আমরা দেখব-রাষ্ট্র তার সাংবাদিকদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সুরক্ষা দিচ্ছে? তুহিন ও আনোয়ার-তাদের নাম যেন কেবল শোকের খাতায় না থাকে। তাদের নাম হোক এক স্থায়ী স্মারক—যা রাষ্ট্রকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেবে: সাংবাদিক হত্যা মানেই গণতন্ত্রের হত্যা !
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















