বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিমল সরকারের গল্প সিরিজ; কালের চিঠি’র ঠিকানা

অধ্যায় ১ : তুলসীঘাটের ভোর—মানবতার নতুন ঘর
তুলসীঘাট—যে জায়গায় তুলসীমাঝির নাম থেকে “ঘাট” শব্দটি এসেছে, অথচ কোনো নদী নেই।
ব্রহ্মপুত্র অনেকটা দূর, তবু তার হাওয়া ভোরের কুয়াশায় আজও মিশে থাকে এখানে ।সকাল ৫টা। শীতের ভেজা হাওয়া তালের পাতায় এসে ঠেকে।
দু’চালা টিনের ঘর, পিছনে আমগাছ, সামনে লোহার ফটক—
এটাই “কালের চিঠির ঠিকানা”,এক মানবতার আশ্রম।
সাদা মিয়া দরজাটা খোলেন। সাদা দাড়ি, গভীর চোখ, জীবনের অভিজ্ঞতায় ভরা মুখ।তিনি বলেন—
“এইটাকে শুধু ঘর বইলা লাভ নাই। এ তো মায়ের ঘর, বাবার ঘর, মানুষের ঘর।”এখানে ৪০ জন প্রবীণ নারী-পুরুষ।সবার গল্প এক, তবু আলাদা—
বয়সের ভারে তারা অসহায়, কিন্তু হৃদয়ে এখনো আলো আছে।
রওশন আরা জানালার পাশে বসে দোয়া পড়েন।
হাফিজ উদ্দিন স্যারের হাতে আদি ব্রহ্মপুত্রের দিকে তাকানো চশমাটি কাঁপছে। আজহার আলী এক কোণে বসে খাতায় কিছু লিখছেন—
যেন তার জীবনের বেদনা শব্দ হয়ে ঝরছে।
সাদা মিয়া হেসে বলেন—
“চলুন বাবা-মা, আজকের দিনটা নতুন করে শুরু হোক!”
অধ্যায় ২ : শিক্ষক রিজুর ক্লাস—মানুষ হওয়া শিখতে হয়
তুলসীঘাট কাশীনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের রিজু স্যার প্রতিদিন বিকেলে এখানে আসেন।তিনি পড়ান না—
মানুষ শেখান।আজ তার B.Sc ক্লাসের কয়েকজন ছাত্র এসে দাড়িয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে।রিজু স্যারের কণ্ঠ গভীর—
“তোমরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেই মানুষ হবে না।মানুষ হবে যখন এক বুড়ো মানুষের হাত ধরবে।যখন কারও চোখের জল মুছিয়ে দেবে।তখনই তোমরা সত্যিকারের উত্তীর্ণ হবে।”
ছাত্ররা মাথা নিচু করে শোনে।তারা আজ বুঝল—
মানুষ হওয়া গণিতে নেই,আছে ভালোবাসার অংকে।
আজহার আলী দূর থেকে তাকিয়ে ছিলেন।তার ঠোঁটে হাসি—
“এরা বদলাবে পৃথিবী, দেখবা।”

অধ্যায় ৩ : ডাক্তার জীম—জীবনের বাকি সময়টুকু আলো দিয়ে ভরতি করে দেন
ডা. ওয়াজেদ হোসেন জীম সাইকেলে চেপে আসেন প্রতিদিন। ফ্রি চেম্বার, ফ্রি ওষুধ, ফ্রি ভালোবাসা।একদিন তিনি ঢাকার ডাক্তারদের একটি টিম নিয়ে এলেন—
সবাই প্রবীণদের সেবা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
তার পরিচিতি শুধু ডাক্তার নয়, মানুষের ডাক্তার।
শামীম সরকার পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে দেন।অল্প উপার্জন, তবু বলেন—
“মেয়ের একটু দুধ কিনবার মতো টাকা বাঁচাইলে আর ক্ষতি কি? একটা প্যারাসিটামলও কারো প্রাণ ফিরাইতে পারে!”
তার এই কথায় বৃদ্ধদের চোখ ভিজে ওঠে।
অধ্যায় ৪ : রিয়াদ হাসানের বই পৌঁছে দেওয়া — জ্ঞানের আলো মানুষকে বদলায়
রিয়াদ হাসান বয়সে ছোট, স্বভাবে শান্ত।প্রতিদিন একটি ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে । কারও হাতে গল্পের বই,কারও হাতে কালের চিঠিতে প্রকাশিত নতুন সংখ্যা। বিমল সরকারের কবিতা—
যেন তাদের মনের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।রিয়াদ বলে—
“দাদুদের কি বই চাই –
বই মানে জীবন।বই মানে আলো।”
হাফিজ উদ্দিন স্যার বই দেখে বলেন—
“রিয়াদ, তুমি শুধু চাকরি করো না রে ভই ! তুমি আলোর চাকরি করো।”

অধ্যায় ৫ : সাংবাদিক সিয়ামের চোখে মানুষ—কালের চিঠির পাতায় জীবনের গল্প
তাসলিমুল হাসান সিয়াম “দৈনিক কালের চিঠি”-র প্রতিবেদক। প্রতিদিন নোটবুক হাতে এসে বুড়োদের গল্প নেন। সিয়ামের লেখায় দেশের মানুষ জানতে পারে—
এই ছোট আশ্রমটিই মানুষের শেষ আশ্রয়।প্রতিবেদন ছাপা হতেই পাঠকেরা দান শুরু করে।
সাদা মিয়া একদিন বলেন—
“বাবা, তোমার লেখায় আমাদের বাড়ি আলোকিত হয়।”
সিয়াম চোখে জল চেপে রাখে।

অধ্যায় ৬ : বিমল সরকারের কবিতার আলো—আশ্রমের দেয়ালে লেখা মানবতার উচ্চারণ
দেয়ালে বড় করে লেখা—
“মানুষ বড় নয় জন্মের পরিচয়ে
মানুষ বড় হয় ভালোবাসায়।
শেষ বয়সেও মানুষ খোঁজে না বাড়ি,
খোঁজে মমতার ঠিকানা।”
—বিমল সরকার

বইয়ের বিক্রির সমস্ত টাকা যায় এ আশ্রমে।সাদা মিয়া গর্ব করে বলেন—
“এই আশ্রমের পেছনে সবচেয়ে বেশি হাত—বিমল সরকারের কলম।”
প্রবীণদের মুখে তার কবিতার আলো—
এটাই গল্পে কবির উপস্থিতি।

অধ্যায় ৭ : আজহার আলীর চিঠি — এক জীবনের আর্তি, আশ্রয়ের ঘোষণা
আজহার আলী প্রতিদিন খাতায় কিছু লিখতেন।
কেউ বুঝতে পারত না।একদিন সিয়ামকে ডেকে বললেন—
“বাবা, এই চিঠিটা ছাপবে?
এতে আছে মানুষের ঠিকানার কথা।”
চিঠির নাম—
“কালের চিঠির ঠিকানা”
চিঠিতে লেখা—
“মানুষের শেষ বয়সে ঘর থাকে না,
হৃদয় থাকে।
সন্তান ভুলে যায়,
কিন্তু আল্লাহ ভুলেন না।
যারা আমার হাত ধরেছে—
তারা-ই আমার পরিবার।”

সিয়াম সেই চিঠিটি “দৈনিক কালের চিঠি”-তে প্রকাশ করলেন।পরদিন সারা দেশে সাড়া পড়ে গেল।হাজার মানুষ ফোন করল সাহায্য করতে।

অধ্যায় ৮ : একটি কবিতা—মানুষের জীবনের পূর্ণ দর্শন
“মানুষের উপরে মানুষ”
– বিমল সরকারের দর্শন-কবিতা
মানুষের উপরে মানুষ—
এ সত্য যত পুরনো, ততই নতুন—
যেখানে জন্মের নিয়ম নেই,
আছে হৃদয়ের আলোর কানুন ।
মানুষ ধন-সম্পদে বড় নয়,
বড় হয় দানে,
বড় হয় ক্ষমায়,
বড় হয় অন্যের কান্না মুছিয়ে।
একটা হাত ধরলে
একটা পথ খুলে যায়—
সেই পথেই জন্ম নেয় মানবতা।
যাদের ঘর নেই,
তারা ঘর বানায় মানুষের হৃদয়ে।
যাদের সন্তান নেই,
তারা সন্তান খুঁজে পায়
মায়ের প্রার্থনায়
পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত
বেঁচে থাকে শুধু একটি নাম—
“মানুষ”
আর কিছুই নয়।

অধ্যায় ৯ : সমাপ্তি — তুলসীঘাটের আকাশে এক মানবতার আলো
সন্ধ্যায় তুলসীঘাটের আকাশে শঙ্খচিল উড়ে যায়।
বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে আলো জ্বলে ওঠে।রিজু স্যার ছাত্রদের সঙ্গে দাঁড়ান।ডা. জীম ওষুধ দিচ্ছেন।
রিয়াদ বই বিলাচ্ছে।সিয়াম ছবি তুলছে সংবাদের জন্য।সাদা মিয়া ভাত পরিবেশন করছেন। আর দূরে আদি ব্রহ্মপুত্রের হাওয়া এসে বলে—
“মানুষের শেষ আশ্রয়
মানুষের মমতার ভিতরেই।”
এত মানুষের ভালোবাসায়
“কালের চিঠির ঠিকানা”
এখন একটি আশ্রম নয়—
একটি আলোর চিহ্ন।
একটি মানবতার বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি জীবনের শেষ ঠিকানা,
যেখানে কেউ একা নয়

– বিমল সরকার

প্রকাশক ও সম্পাদক:  কালের চিঠি ডটকম

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

বিমল সরকারের গল্প সিরিজ; কালের চিঠি’র ঠিকানা

প্রকাশের সময়: ০৫:৩২:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

অধ্যায় ১ : তুলসীঘাটের ভোর—মানবতার নতুন ঘর
তুলসীঘাট—যে জায়গায় তুলসীমাঝির নাম থেকে “ঘাট” শব্দটি এসেছে, অথচ কোনো নদী নেই।
ব্রহ্মপুত্র অনেকটা দূর, তবু তার হাওয়া ভোরের কুয়াশায় আজও মিশে থাকে এখানে ।সকাল ৫টা। শীতের ভেজা হাওয়া তালের পাতায় এসে ঠেকে।
দু’চালা টিনের ঘর, পিছনে আমগাছ, সামনে লোহার ফটক—
এটাই “কালের চিঠির ঠিকানা”,এক মানবতার আশ্রম।
সাদা মিয়া দরজাটা খোলেন। সাদা দাড়ি, গভীর চোখ, জীবনের অভিজ্ঞতায় ভরা মুখ।তিনি বলেন—
“এইটাকে শুধু ঘর বইলা লাভ নাই। এ তো মায়ের ঘর, বাবার ঘর, মানুষের ঘর।”এখানে ৪০ জন প্রবীণ নারী-পুরুষ।সবার গল্প এক, তবু আলাদা—
বয়সের ভারে তারা অসহায়, কিন্তু হৃদয়ে এখনো আলো আছে।
রওশন আরা জানালার পাশে বসে দোয়া পড়েন।
হাফিজ উদ্দিন স্যারের হাতে আদি ব্রহ্মপুত্রের দিকে তাকানো চশমাটি কাঁপছে। আজহার আলী এক কোণে বসে খাতায় কিছু লিখছেন—
যেন তার জীবনের বেদনা শব্দ হয়ে ঝরছে।
সাদা মিয়া হেসে বলেন—
“চলুন বাবা-মা, আজকের দিনটা নতুন করে শুরু হোক!”
অধ্যায় ২ : শিক্ষক রিজুর ক্লাস—মানুষ হওয়া শিখতে হয়
তুলসীঘাট কাশীনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের রিজু স্যার প্রতিদিন বিকেলে এখানে আসেন।তিনি পড়ান না—
মানুষ শেখান।আজ তার B.Sc ক্লাসের কয়েকজন ছাত্র এসে দাড়িয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে।রিজু স্যারের কণ্ঠ গভীর—
“তোমরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেই মানুষ হবে না।মানুষ হবে যখন এক বুড়ো মানুষের হাত ধরবে।যখন কারও চোখের জল মুছিয়ে দেবে।তখনই তোমরা সত্যিকারের উত্তীর্ণ হবে।”
ছাত্ররা মাথা নিচু করে শোনে।তারা আজ বুঝল—
মানুষ হওয়া গণিতে নেই,আছে ভালোবাসার অংকে।
আজহার আলী দূর থেকে তাকিয়ে ছিলেন।তার ঠোঁটে হাসি—
“এরা বদলাবে পৃথিবী, দেখবা।”

অধ্যায় ৩ : ডাক্তার জীম—জীবনের বাকি সময়টুকু আলো দিয়ে ভরতি করে দেন
ডা. ওয়াজেদ হোসেন জীম সাইকেলে চেপে আসেন প্রতিদিন। ফ্রি চেম্বার, ফ্রি ওষুধ, ফ্রি ভালোবাসা।একদিন তিনি ঢাকার ডাক্তারদের একটি টিম নিয়ে এলেন—
সবাই প্রবীণদের সেবা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
তার পরিচিতি শুধু ডাক্তার নয়, মানুষের ডাক্তার।
শামীম সরকার পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে দেন।অল্প উপার্জন, তবু বলেন—
“মেয়ের একটু দুধ কিনবার মতো টাকা বাঁচাইলে আর ক্ষতি কি? একটা প্যারাসিটামলও কারো প্রাণ ফিরাইতে পারে!”
তার এই কথায় বৃদ্ধদের চোখ ভিজে ওঠে।
অধ্যায় ৪ : রিয়াদ হাসানের বই পৌঁছে দেওয়া — জ্ঞানের আলো মানুষকে বদলায়
রিয়াদ হাসান বয়সে ছোট, স্বভাবে শান্ত।প্রতিদিন একটি ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে । কারও হাতে গল্পের বই,কারও হাতে কালের চিঠিতে প্রকাশিত নতুন সংখ্যা। বিমল সরকারের কবিতা—
যেন তাদের মনের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।রিয়াদ বলে—
“দাদুদের কি বই চাই –
বই মানে জীবন।বই মানে আলো।”
হাফিজ উদ্দিন স্যার বই দেখে বলেন—
“রিয়াদ, তুমি শুধু চাকরি করো না রে ভই ! তুমি আলোর চাকরি করো।”

অধ্যায় ৫ : সাংবাদিক সিয়ামের চোখে মানুষ—কালের চিঠির পাতায় জীবনের গল্প
তাসলিমুল হাসান সিয়াম “দৈনিক কালের চিঠি”-র প্রতিবেদক। প্রতিদিন নোটবুক হাতে এসে বুড়োদের গল্প নেন। সিয়ামের লেখায় দেশের মানুষ জানতে পারে—
এই ছোট আশ্রমটিই মানুষের শেষ আশ্রয়।প্রতিবেদন ছাপা হতেই পাঠকেরা দান শুরু করে।
সাদা মিয়া একদিন বলেন—
“বাবা, তোমার লেখায় আমাদের বাড়ি আলোকিত হয়।”
সিয়াম চোখে জল চেপে রাখে।

অধ্যায় ৬ : বিমল সরকারের কবিতার আলো—আশ্রমের দেয়ালে লেখা মানবতার উচ্চারণ
দেয়ালে বড় করে লেখা—
“মানুষ বড় নয় জন্মের পরিচয়ে
মানুষ বড় হয় ভালোবাসায়।
শেষ বয়সেও মানুষ খোঁজে না বাড়ি,
খোঁজে মমতার ঠিকানা।”
—বিমল সরকার

বইয়ের বিক্রির সমস্ত টাকা যায় এ আশ্রমে।সাদা মিয়া গর্ব করে বলেন—
“এই আশ্রমের পেছনে সবচেয়ে বেশি হাত—বিমল সরকারের কলম।”
প্রবীণদের মুখে তার কবিতার আলো—
এটাই গল্পে কবির উপস্থিতি।

অধ্যায় ৭ : আজহার আলীর চিঠি — এক জীবনের আর্তি, আশ্রয়ের ঘোষণা
আজহার আলী প্রতিদিন খাতায় কিছু লিখতেন।
কেউ বুঝতে পারত না।একদিন সিয়ামকে ডেকে বললেন—
“বাবা, এই চিঠিটা ছাপবে?
এতে আছে মানুষের ঠিকানার কথা।”
চিঠির নাম—
“কালের চিঠির ঠিকানা”
চিঠিতে লেখা—
“মানুষের শেষ বয়সে ঘর থাকে না,
হৃদয় থাকে।
সন্তান ভুলে যায়,
কিন্তু আল্লাহ ভুলেন না।
যারা আমার হাত ধরেছে—
তারা-ই আমার পরিবার।”

সিয়াম সেই চিঠিটি “দৈনিক কালের চিঠি”-তে প্রকাশ করলেন।পরদিন সারা দেশে সাড়া পড়ে গেল।হাজার মানুষ ফোন করল সাহায্য করতে।

অধ্যায় ৮ : একটি কবিতা—মানুষের জীবনের পূর্ণ দর্শন
“মানুষের উপরে মানুষ”
– বিমল সরকারের দর্শন-কবিতা
মানুষের উপরে মানুষ—
এ সত্য যত পুরনো, ততই নতুন—
যেখানে জন্মের নিয়ম নেই,
আছে হৃদয়ের আলোর কানুন ।
মানুষ ধন-সম্পদে বড় নয়,
বড় হয় দানে,
বড় হয় ক্ষমায়,
বড় হয় অন্যের কান্না মুছিয়ে।
একটা হাত ধরলে
একটা পথ খুলে যায়—
সেই পথেই জন্ম নেয় মানবতা।
যাদের ঘর নেই,
তারা ঘর বানায় মানুষের হৃদয়ে।
যাদের সন্তান নেই,
তারা সন্তান খুঁজে পায়
মায়ের প্রার্থনায়
পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত
বেঁচে থাকে শুধু একটি নাম—
“মানুষ”
আর কিছুই নয়।

অধ্যায় ৯ : সমাপ্তি — তুলসীঘাটের আকাশে এক মানবতার আলো
সন্ধ্যায় তুলসীঘাটের আকাশে শঙ্খচিল উড়ে যায়।
বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে আলো জ্বলে ওঠে।রিজু স্যার ছাত্রদের সঙ্গে দাঁড়ান।ডা. জীম ওষুধ দিচ্ছেন।
রিয়াদ বই বিলাচ্ছে।সিয়াম ছবি তুলছে সংবাদের জন্য।সাদা মিয়া ভাত পরিবেশন করছেন। আর দূরে আদি ব্রহ্মপুত্রের হাওয়া এসে বলে—
“মানুষের শেষ আশ্রয়
মানুষের মমতার ভিতরেই।”
এত মানুষের ভালোবাসায়
“কালের চিঠির ঠিকানা”
এখন একটি আশ্রম নয়—
একটি আলোর চিহ্ন।
একটি মানবতার বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি জীবনের শেষ ঠিকানা,
যেখানে কেউ একা নয়

– বিমল সরকার

প্রকাশক ও সম্পাদক:  কালের চিঠি ডটকম