
ভাষা আন্দোলনের প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট লেখক আহমদ রফিকের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি ইসমাইল সাদী।
আহমদ রফিক বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল রাত ১০টা ১২ মিনিটে বারডেম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তার মরদেহ বর্তমানে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
পারিবারিক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রফিক দীর্ঘদিন কিডনি সমস্যার পাশাপাশি কয়েকবার মাইল্ড স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। ১১ সেপ্টেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাকে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় গত রোববার তাকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রফিকের বিশেষ সহকারী রাসেল জানিয়েছেন, রাত ১০টার দিকে তাঁর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হওয়ায় গত বুধবার বিকেলে তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল।
মরদেহ দাফন করা হবে না, কারণ তিনি মৃত্যুর আগে নিজের দেহ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে দান করেছেন। সম্মানসূচক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর মরদেহ শোক র্যালির মাধ্যমে হাসপাতালকে হস্তান্তর করা হবে।
আহমদ রফিক ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারান এবং নিঃসন্তান ছিলেন। নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের একটি ভাড়া বাসায় একা বসবাস করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে বিপুলসংখ্যক বই।
ভাষা আন্দোলনের প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ রফিক শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা। দুই বাংলার রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদান অনন্য। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।
বয়স ও অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সাল থেকে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করলে অস্ত্রোপচার করা হয়, তবে ফল আশানুরূপ হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে তিনি প্রায় দৃষ্টিশক্তিহীন ছিলেন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতিও বেড়ে যায়। বুদ্ধিজীবী মহল থেকে বারবার তাঁর উন্নত চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তার দাবি জানানো হয়েছিল।