
পুনর্জন্মের ধারাবাহিক সিম্ফনি
– বিমল সরকার
আমি পথিক-
সময়টাকে মনে হয় একটা ট্রেন
যার প্রতিটি কামরা থেকে ভেসে আসে –
হাসি, কান্না, জয় কিংবা পরাজয় !
কখনো জীবনটা এক দীর্ঘ নদী,
যা শান্ত স্রোতে ভেসে চলে,
আবার হঠাৎ ঝড়ে ভেঙে পড়ে বাঁধ,
সেখানে আমি দাঁড়াই,
কখনো একা, কখনো জনতার ভিড়ে,
তবে শেষমেশ নিজের আত্মার কাছে আমি একা।
প্রত্যেকটা অচেনা মানুকেও
আমার আপন মনে হয়
আর একটু ভালোবাসা দেখালে তো কথাই নেই
মনে হয় তাকে সাধ্যের সবকিছু দিয়ে দিই !
তাই বার বার মানুষকে বিশ্বাস করে ভুল করি
কষ্টের তিলোত্তমার মতো এই আমি !
আমি ভুল করেছি-
অপাত্রকে বিশ্বাস করেছি,
তাই জীবনের বুকে জমেছে হাজারো ক্ষতচিহ্ন।
তবে শিখেছি ভুল থেকে
আর দুঃখগুলো হয়েছে ভবিষ্যতের আলো।
আমার জীবন তাই শুধুই হারানোর ইতিহাস নয়,
বরং পুনর্জন্মের ধারাবাহিক সিম্ফনি।
আমি বিশ্বাস করি-
ভালোবাসা হলো একমাত্র শক্তি,
যা ভাঙা হৃদয়েও বপন করে নতুন স্বপ্নের বীজ।
ভালোবাসা মানে কেবল প্রিয়া নয়,
ভালোবাসা মানে পৃথিবী, প্রকৃতি, মানুষ,
অচেনা কারো কষ্টের ভাগীদার হয়ে ওঠা।
ভালোবাসাই একমাত্র ভাষা
যা দারিদ্র্য ও প্রতারণার দেয়াল ভেঙে
মানবতাকে করে অমর।
তাই আমি লিখি,
শব্দকে শ্বাসের মতো ব্যবহার করি,
যেখানে ছন্দ গড়ে ওঠে নিছক হৃদস্পন্দনের ভেতরেই।
আমার কবিতা গদ্যের মতো সোজা,
নদীর ঢেউয়ের মতো ছন্দময় হয়তো নয়
তবে ছন্দ্যের ধুপধাপ আওয়াজে বাজে
জীবনের অনন্ত দোলকে।
আমি জানি-
আমরা সবাই অতিথি এখানে-
পৃথিবী একটা ক্ষণস্থায়ী মেলা।
কেউ খালি হাতে আসে,
কেউ ক্ষত-বিক্ষত বুকে ফেরে,
কিন্তু যিনি ভালোবাসা বিলিয়ে যান
তিনিই রেখে যান অমর ইতিহাস।
আমি তাই প্রার্থনা করি-
আমার কণ্ঠের প্রদীপ নিভে গেলে
আমার শব্দগুলো যেন নদীর মতো বয়ে চলে,
মানুষের বুকের ভেতর জেগে থাকে
আত্মমর্যাদা, ভালোবাসা আর সততার গান।
পুনর্জন্মের ধারাবাহিক সিম্ফনি” কবিতাটি কবির জীবনদর্শন ও আত্মজীবনীর এক সঙ্গীতধর্মী রূপ। এখানে সময়কে তিনি কল্পনা করেছেন একটি ট্রেন হিসেবে, যেখানে প্রতিটি কামরা বহন করে জীবনের বহুমাত্রিক অনুভূতি-হাসি, কান্না, জয় ও পরাজয়। আবার নদীর উপমায় তিনি বলেছেন জীবনের স্রোতের কথা-যেখানে কখনো শান্ত ভেসে চলা, কখনো ভাঙা বাঁধের মতো আকস্মিক বিপর্যয়।
এই কবিতার প্রেক্ষাপট আসলে কবির নিজের জীবন-সংগ্রাম, প্রতারণা, ভুল সিদ্ধান্ত, বারবার হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানো। তাই কবিতাটি কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং মানবতার এক কালোত্তীর্ণ গান।
কবির অনুভূতিঃ
কবিতাটির প্রতিটি চরণে কবি নিজের ভেতরের
ক্ষতচিহ্নকে অকপটে প্রকাশ করেছেন। বিশেষত-আমি ভুল করেছি-
অপাত্রকে বিশ্বাস করেছি,
তাই জীবনের বুকে জমেছে হাজারো ক্ষতচিহ্ন।”
এখানে স্পষ্ট যে তাঁর অভিজ্ঞতা কেবল আনন্দের নয়, বরং বিশ্বাসঘাতকতার দহনও রয়েছে। কিন্তু সেই দহন তাঁকে থামাতে পারেনি। তিনি দুঃখকে শিখায় রূপান্তরিত করেছেন।আরও গভীরে গেলে বোঝা যায়- কবি বিশ্বাস করেন, দুঃখ ও প্রতারণা থেকেও জন্ম নিতে পারে নতুন আলো।
বিশ্লেষণঃ
সময়কে ট্রেন ও জীবনকে নদীর রূপকে ধরেছেন।ভালোবাসাকে দেখেছেন অক্লান্ত পুনর্জন্মের শক্তি হিসেবে।এখানে কবির দর্শন স্পষ্ট: ভালোবাসা মানে কেবল প্রিয়া নয়, বরং পুরো পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতা ! কবিতাটিতে ছন্দময় রিদম গড়ে উঠেছে গদ্যের ভেতরেই, যা বিমল সরকারের নিজস্ব ধারা ।
তিনি নিজের ভুল প্রকাশ করতে লজ্জা পাননি। বরং তা থেকেই তিনি সত্যিকারের শক্তি খুঁজেছেন । যা কবিতাটির ব্যক্তিগত বেদনাকে সার্বজনীন করে তুলেছেন।জীবন মানেই কেবল ভোগ বা ক্ষণস্থায়ী আনন্দ নয়; জীবন মানেই ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, ভুল থেকে শিক্ষা আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনা । কবিতাচির ছন্দে লুকানো দর্শনে বলে- আমরা সবাই অতিথি পৃথিবীতে, একমাত্র ভালোবাসাই অমর ইতিহাস গড়ে।
কবিতার সারমর্মঃ
“পুনর্জন্মের ধারাবাহিক সিম্ফনি” হলো এক আত্মজীবনীর গান-যেখানে হারানো ও প্রাপ্তির সুর মিলেছে,যেখানে ভুল থেকে জন্ম নিয়েছে শিক্ষা,
এবং যেখানে ভালোবাসা হয়েছে মানবতার সর্বোচ্চ ভাষা।
কোটেশনঃ
ভালোবাসার রিদমই একমাত্র সিম্ফনি, যা ভুলের ক্ষতচিহ্নকে রূপান্তরিত করে মানবতার অমর ইতিহাসে।- বিমল সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















