বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ণিল আয়োজনে শেষ হলো উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন

টেক্সাস থেকে বিমল সরকার : টেক্সাসের স‍্যান এন্টোনিও শহরের Palo Alto College- এর নীলাভ ক্যাম্পাস সেজেছিলো বাঙ্গালীদের মিলনায়তনে । সকাল থেকে রাত অবধি চললো বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক মহোৎসব-যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত মুখরিত ছিলো নতুন প্রজন্ম ও প্রবাসী সমাজের ইতিহাস গড়ার গল্পে !

ভোরের সূর্যালোকে ক্যাম্পাস ভরে উঠলো অতিথিদের আগমনে। বাংলা শাড়ি, পাঞ্জাবি, আলপনা আর ব্যানারে সেজে উঠলো পালো আল্টো কলেজ। উদ্বোধনীতে আমন্ত্রিত অতিথিরা বললেন- “এই সম্মেলন শুধু প্রবাসী বাঙালির নয়, বরং গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদার প্রতীক।”জাতীয় সঙ্গীত, কোরাস, আর তরুণ প্রাণের কণ্ঠে কবিতা , বইমেলার শুভ উদ্বোধনে শুরু হলো দিনভর অনুষ্ঠানমালার নান্দনিকতা ।

ভাষার শিকড়ে দাঁড়ানো এ আয়োজনের অতিথিরা ছিলেন বড় পর্দায় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচিত্র “আয়নাবাজি”র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী,বাংলাদেশের বিখ্যাত সংগীত তারকা -মিমি আলাউদ্দিন,স্বপন দত্তের ,আহমাদ মাযহার , শফিক আহমেদ, শিরীন বকুল, আলী তারেক অস্টিনের কবি ,সম্পাদক ও প্রকাশক বিমল সরকার , এসআই টুটুল ,NABLCC এর প্রতিষ্ঠাতা দিদারুল আলম পান্না প্রমুখ ।

একুশের চেতনায় বাংলাএকাডেমীর আদলে সজ্জিত বইমেলার মুক্ত মঞ্চে এক লাইনে দাঁড়িয়ে ফিতা কেটে সুসজ্জিত বইমেলার উদ্বোধন করেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও আগত অতিথিরা ।পরিচালনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন বিমল সরকার ! যা বিশ্ববরেণ‍্যে কবি ,লেখক ছবি , কথা এবং বাণীতে সাজানো এবং গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলার ডেকোরেশনে ও অজস্র সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের পদচারণা মুখরিত হয় ।

অতিথিদের আগমন, অভ্যর্থনা এবং সামাজিকীকরণের পর দেখানো হয় চলচ্চিত্র “আয়নাবাজি”

দুপুরের সেশনে হলরুম পরিণত হলো এক খোলা পাঠশালায়। গবেষক, লেখক ও প্রবাসী শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করলেন প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও কবিতা। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল- বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ, সাহিত্য আন্দোলনের ভূমিকা এবং প্রবাসে সন্তানদের কাছে মাতৃভাষা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ।

শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে রবীন্দ্র-নজরুল আবৃত্তি। প্রবাসে থেকেও তারা কীভাবে ভাষার আলো আঁকড়ে ধরে আছে-তা দেখে প্রবীণরাও আপ্লুত হলেন ।

বিকেল গড়িয়ে আসতেই বই প্রদর্শনীতে ভিড় জমলো। অস্টিনের কবি বিমল সরকার এর সৌজন‍্যে

বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আনা নতুন গ্রন্থ, কালের চিঠির সংগ্রহে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ও চিরাচরিত বইয়ের দিকে সবাই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখলেন, এমন ভাবে অজস্র পাঠক বই নিয়ে মনোনিবেশ করলেন দেখে মনে হলো একটুকরো বাংলাদেশ, প্রবাসের বুকে এ যেন কোন একুশের বইমেলা ! একজন প্রবাসী বললেন- “বইয়ের গন্ধে আমরা যেন ছুঁয়ে ফেললাম আমাদের হারিয়ে যাওয়া আঙিনা।”এ সময়েই সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠলো মুক্ত আড্ডা। বাঙালির আড্ডা মানেই স্মৃতি, তর্ক, আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনা।

রাত নেমে আসতেই শুরু হলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। মঞ্চ ভরে উঠলো রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লালনের আধ্যাত্মিক গান, আধুনিক সঙ্গীত ও নাট্যাংশে। নাচের ছন্দে তরুণ-তরুণীরা যেন তুলে ধরলো বাংলাদেশের উৎসবমুখর রূপ।বিমল সরকারের স্বরচিত কবিতায় উঠে এলো উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত‍্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের স্মৃতিমেদুর ইতিহাস – যা মুহুরমুহু করতালিতে অভিসিক্ত হলো ! বাংলা না জানা বিদেশি দর্শকরাও মুগ্ধ হয়ে বললেন- “এ যেন এক জাদুকরী সন্ধ্যা, যেখানে শিল্প-সংস্কৃতি ভাষার সীমা পেরিয়ে যায়।”

রাতের শেষ প্রহরে আয়োজকরা ঘোষণা করলেন- এ সম্মেলন শুধু একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আনার দায় এখন সবার।

স‍্যান এন্টোনিওর পালো আল্টো কলেজে সীমানায় রোপিত হলো বাংলার প্রাণ,প্রবাসের নতুন প্রজন্মের হাতে উন্মোচিত হলো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এক নতুন দিগন্ত ।

 

 

 

জনপ্রিয়

ন্যায়, ঐক্য ও মানবিক বাংলাদেশের সন্ধানে বহুত্ববাদের আলো

বর্ণিল আয়োজনে শেষ হলো উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন

প্রকাশের সময়: ০৪:২৭:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

টেক্সাস থেকে বিমল সরকার : টেক্সাসের স‍্যান এন্টোনিও শহরের Palo Alto College- এর নীলাভ ক্যাম্পাস সেজেছিলো বাঙ্গালীদের মিলনায়তনে । সকাল থেকে রাত অবধি চললো বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক মহোৎসব-যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত মুখরিত ছিলো নতুন প্রজন্ম ও প্রবাসী সমাজের ইতিহাস গড়ার গল্পে !

ভোরের সূর্যালোকে ক্যাম্পাস ভরে উঠলো অতিথিদের আগমনে। বাংলা শাড়ি, পাঞ্জাবি, আলপনা আর ব্যানারে সেজে উঠলো পালো আল্টো কলেজ। উদ্বোধনীতে আমন্ত্রিত অতিথিরা বললেন- “এই সম্মেলন শুধু প্রবাসী বাঙালির নয়, বরং গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদার প্রতীক।”জাতীয় সঙ্গীত, কোরাস, আর তরুণ প্রাণের কণ্ঠে কবিতা , বইমেলার শুভ উদ্বোধনে শুরু হলো দিনভর অনুষ্ঠানমালার নান্দনিকতা ।

ভাষার শিকড়ে দাঁড়ানো এ আয়োজনের অতিথিরা ছিলেন বড় পর্দায় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচিত্র “আয়নাবাজি”র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী,বাংলাদেশের বিখ্যাত সংগীত তারকা -মিমি আলাউদ্দিন,স্বপন দত্তের ,আহমাদ মাযহার , শফিক আহমেদ, শিরীন বকুল, আলী তারেক অস্টিনের কবি ,সম্পাদক ও প্রকাশক বিমল সরকার , এসআই টুটুল ,NABLCC এর প্রতিষ্ঠাতা দিদারুল আলম পান্না প্রমুখ ।

একুশের চেতনায় বাংলাএকাডেমীর আদলে সজ্জিত বইমেলার মুক্ত মঞ্চে এক লাইনে দাঁড়িয়ে ফিতা কেটে সুসজ্জিত বইমেলার উদ্বোধন করেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও আগত অতিথিরা ।পরিচালনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন বিমল সরকার ! যা বিশ্ববরেণ‍্যে কবি ,লেখক ছবি , কথা এবং বাণীতে সাজানো এবং গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলার ডেকোরেশনে ও অজস্র সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের পদচারণা মুখরিত হয় ।

অতিথিদের আগমন, অভ্যর্থনা এবং সামাজিকীকরণের পর দেখানো হয় চলচ্চিত্র “আয়নাবাজি”

দুপুরের সেশনে হলরুম পরিণত হলো এক খোলা পাঠশালায়। গবেষক, লেখক ও প্রবাসী শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করলেন প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও কবিতা। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল- বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ, সাহিত্য আন্দোলনের ভূমিকা এবং প্রবাসে সন্তানদের কাছে মাতৃভাষা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ।

শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে রবীন্দ্র-নজরুল আবৃত্তি। প্রবাসে থেকেও তারা কীভাবে ভাষার আলো আঁকড়ে ধরে আছে-তা দেখে প্রবীণরাও আপ্লুত হলেন ।

বিকেল গড়িয়ে আসতেই বই প্রদর্শনীতে ভিড় জমলো। অস্টিনের কবি বিমল সরকার এর সৌজন‍্যে

বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আনা নতুন গ্রন্থ, কালের চিঠির সংগ্রহে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ও চিরাচরিত বইয়ের দিকে সবাই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখলেন, এমন ভাবে অজস্র পাঠক বই নিয়ে মনোনিবেশ করলেন দেখে মনে হলো একটুকরো বাংলাদেশ, প্রবাসের বুকে এ যেন কোন একুশের বইমেলা ! একজন প্রবাসী বললেন- “বইয়ের গন্ধে আমরা যেন ছুঁয়ে ফেললাম আমাদের হারিয়ে যাওয়া আঙিনা।”এ সময়েই সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠলো মুক্ত আড্ডা। বাঙালির আড্ডা মানেই স্মৃতি, তর্ক, আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনা।

রাত নেমে আসতেই শুরু হলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। মঞ্চ ভরে উঠলো রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লালনের আধ্যাত্মিক গান, আধুনিক সঙ্গীত ও নাট্যাংশে। নাচের ছন্দে তরুণ-তরুণীরা যেন তুলে ধরলো বাংলাদেশের উৎসবমুখর রূপ।বিমল সরকারের স্বরচিত কবিতায় উঠে এলো উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত‍্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের স্মৃতিমেদুর ইতিহাস – যা মুহুরমুহু করতালিতে অভিসিক্ত হলো ! বাংলা না জানা বিদেশি দর্শকরাও মুগ্ধ হয়ে বললেন- “এ যেন এক জাদুকরী সন্ধ্যা, যেখানে শিল্প-সংস্কৃতি ভাষার সীমা পেরিয়ে যায়।”

রাতের শেষ প্রহরে আয়োজকরা ঘোষণা করলেন- এ সম্মেলন শুধু একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আনার দায় এখন সবার।

স‍্যান এন্টোনিওর পালো আল্টো কলেজে সীমানায় রোপিত হলো বাংলার প্রাণ,প্রবাসের নতুন প্রজন্মের হাতে উন্মোচিত হলো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এক নতুন দিগন্ত ।