
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনও না এলেও, কমিশনের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সিইসি। তিনি বলেন, “আমরা মনে করছি দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে নির্বাচনী আয়োজন নিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়ে যাবো। তবে চিঠি না এলেও আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি থাকবে না।”
নির্বাচনের তফসিল প্রসঙ্গে সিইসি জানান, ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এই হিসেবে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের শেষার্ধে তফসিল প্রকাশের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে।
সিইসি নাসির উদ্দিন ভোটারদের আস্থা অর্জনকেই এই নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার ভাষায়, “মানুষ ভোটার হয়ে ভোট দিতে চায়, কিন্তু তারা আস্থা হারিয়েছে। আমরা সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। নির্বাচনকে আয়নার মতো স্বচ্ছ করতে চাই।”
সিইসি মনে করেন, গণমাধ্যমের ভূমিকাই হবে স্বচ্ছতার প্রথম শর্ত। তিনি বলেন, “একটা ভালো নির্বাচন আয়োজনের জন্য মিডিয়ার রুল নাম্বার ওয়ান। আমরা কোনো কিছু লুকিয়ে রাখতে চাই না। আমাদের চেষ্টা এবং আন্তরিকতা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকুক, সেটাই চাই।”
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। হালনাগাদ ভোটার তালিকা ৩১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে ভোটের তফসিল ঘোষণার মাসখানেক আগে পর্যন্ত সময় থাকবে।
সীমান্ত নির্ধারণ সংক্রান্ত খসড়াও ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে এবং শুনানি শেষে তা চূড়ান্ত হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের যাচাই-বাছাই চলছে। যেসব দল শর্ত পূরণ করবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিইসি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভোটের প্রস্তুতিমূলক বড় কাজগুলো শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লজিস্টিকস সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, এবং প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করা। প্রায় ১০ লাখ ভোটকর্মী ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।
নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করতেই নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি যেন প্রতিটি রাজনৈতিক দল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নেয়। খেলার মাঠ যেন সকলের জন্য সমান থাকে, সেই নিশ্চয়তা দিতে চাই।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জেতার জন্য যেন তেন নির্বাচনের চেষ্টা করবেন না। আমার একটাই অনুরোধ—আমাকে সাহায্য করুন যেন একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করতে পারি।”
সিইসি জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে ইসি প্রস্তুত। তবে তার আগে ‘ঐকমত্য কমিশন’-এর সঙ্গে দলগুলোর আলোচনা শেষ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমরা চাই সব পক্ষ একটু ‘ফ্রি’ হোক, তখন আমরা তাদের সঙ্গে বসবো। আলোচনার জন্য এক মাসের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে,” বলেন সিইসি।
৫ আগস্ট, মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে বলেন, “আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠানো হবে যেন নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে।”
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে এক বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছিল, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেছেন, “আমরা চাই এবারের নির্বাচন যেন উৎসবমুখর হয়। প্রধান উপদেষ্টা যেমন বলেছেন—ঈদের দিনের মতো একটি আনন্দঘন পরিবেশে ভোটগ্রহণ হোক—আমরাও সেটাই চাই।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপে জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ বাড়বে, এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 

















