
কালের চিঠি প্রতিবেদক, নিউইয়র্ক | প্রবাসে বসে বাংলা সংস্কৃতির দীপ্ত আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন যাঁরা, তাঁদের পথচলায় যুক্ত হলো এক অনন্য সংযোজন। ব্রঙ্কসে বসবাসরত নৃত্যশিল্পী মিটন দেব গত রবিবার নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী ফ্লাশিং টাউন হল-এর মঞ্চে তাঁর বহু প্রতীক্ষিত কথক রঙ্গমঞ্চ প্রবেশ সম্পন্ন করলেন। প্রায় ছয় থেকে আট বছরের কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও শাস্ত্রীয় প্রশিক্ষণের পর এই গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তি, শুধু একক শিল্পীর গৌরব নয়, বরং প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে এটি এক সাংস্কৃতিক মাইলফলক। উল্লেখযোগ্য যে, মিটন দেবের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে, সিলেটের মৌলভীবাজারে। এরপর ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)-তে যোগ দেন এবং গুরু অনুপ দাসের তত্ত্বাবধানে শাস্ত্রীয় নৃত্যে দীক্ষা নেন। পরবর্তীতে তিনি গুরু জানকী প্যাট্রিক এবং বর্তমানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথক নৃত্যগুরু শ্রীমতি আভা ভাটনগর রয়-এর নিকট থেকে নিবিড় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই দিনটি ছিল তাঁর শিল্পজীবনের এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। পূজা, গুরুবন্দনা, শিবস্তুতি, তিনতাল, ঝাপতাল, ঠুমরি, ধামার তাল ও তারানা পরিবেশনার পর গুরু আভা ভাটনগর রয় তাঁকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। সেই স্মারকে লেখা ছিল: “মিটন দেব কথক রঙ্গমঞ্চ প্রবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করায় গুরু শ্রীমতি আভা ভাটনগর রয় তাঁকে এই অভিজ্ঞান স্মারক প্রদান করলেন।” এই পবিত্র মুহূর্তে আবেগাপ্লুত মিটন দেবের চোখে আনন্দাশ্রু ঝরেছে। বিনয়ের সঙ্গে তিনি স্মারকটি গ্রহণ করেন, আর চারদিক জুড়ে বেজে উঠে করতালির অনুরণন। অনুষ্ঠানে তাঁকে ভোকালে সংগত করেন গুরু আভা ভাটনগর রয়, তবলায় ড. নরেন বুধাকর, সারেঙ্গীতে রোহান মিশ্র, হারমোনিয়ামে শ্রীকর আয়াল আসমআয়াজুলা এবং ভোকালে আরও ছিলেন সঞ্চারি ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন কিশোর সিউনারায়ণ, যাঁর সাবলীল ও মার্জিত উপস্থাপনায় সন্ধ্যার আবহ পেয়েছিল এক অভিজাত সৌন্দর্য। অনুষ্ঠানের বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে মিটন দেব পরিবেশন করেন দুটি রাগভিত্তিক কথক নৃত্য — একটি নজরুলসংগীত: “পরদেশী মেঘ যাওরে ফিরে, বলিও আমার পরদেশী মেঘ” ও অপরটি ঠুমরি দাদরা তালে: “নির ভরন ক্যায়সে যাউন।” পুরো পরিবেশনা ছিল নান্দনিক পরিকল্পনায় নির্মিত। আলোক প্রক্ষেপণ ও শব্দ ব্যবস্থাপনা ছিল যথাযথ ও ধ্রুপদ নৃত্যের উপযোগী। বর্তমানে মিটন দেব ড্যান্স একাডেমি-র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবে তিনি ৩০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাঁর এই যাত্রা নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির মূল স্রোতে যুক্ত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রইলো। নৃত্যকলার গভীরতা, গুরু-শিষ্যের বন্ধন, এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রতীক হয়ে রইলো মিটন দেবের এই “রঙ্গমঞ্চ প্রবেশ”। এ যেন প্রবাসের বুকে রঙিন বাঙালিয়ানা ছড়িয়ে দেওয়ার এক অন্তরঙ্গ প্রয়াস।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















