মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“ মানুষ হওয়াটাই বুঝি ভুলে গেছে মানুষ”- বিমল সরকার

এই শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে হয় সভ্যতা, মূল্যবোধ, করুণা, দায়িত্ব, ভালোবাসা আর বোধের এক পর্বত চূড়া কিন্তু আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি সময়ের এমন এক সন্ধিক্ষণে যেখানে প্রশ্নটাই ফিরে আসছে—
আমরা সত্যিই মানুষ তো ? নাকি শুধু মানুষের আকৃতি নিয়ে জীবন চালাই ?
ঐ ছোট্ট সীমানায় মাত্র ৮ দিনের ৮টি ফুটফুটে প্রাণ
যাদের চোখও পুরোপুরি খুলে ওঠেনি, যারা এই পৃথিবীর আলো দেখতে শেখেনি,যারা এখনো মায়ের বুকের গন্ধ ছাড়েনি—
তাদের একটি বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হলো।
দশ সেকেন্ডে লেখা যায় কিন্তু সেই দশ সেকেন্ডে পৃথিবী তার সবচেয়ে বড় লজ্জাটা দেখল। মা কুকুরটি – বুকভরা দুধ নিয়ে,টানটান বুকভরা ব্যথা নিয়ে, পুকুরপাড়ে ছুটে ছুটে আর্তনাদ করছিল। হৃদয় আছে এমন কারো পক্ষে এ দৃশ্য দেখার পর স্থির থাকা অসম্ভব।


কিন্তু সেই মানুষ? যে হাত দিয়ে বস্তা ফেলেছে,
যে চোখ দিয়ে দেখেছে দুঃখ—
কোনো কি কাঁপুনি এল না তার শরীরে ?
অজস্র প্রশ্ন আজ প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে আগুন হয়ে জ্বলছে।
মানুষ হতে ধর্ম লাগে না তবে মানুষ লাগে। প্রকৃতিকে কেউ ধর্ম শেখায় না। পাখিকে কেউ মানবতা শেখায় না।কুকুরকে কেউ করুণা শেখায় না।কিন্তু মানুষকে শেখাতে হয়।বারবার শেখাতে হয়। কারণ মানুষই বার বার ভুলে যায় তার আসল পরিচয়।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন—
“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”
আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
যে মায়ের বুকের দুধ জমে গেছে,যে কুকুরটি সন্তানদের জন্য শোকান্তক ছুটে বেড়াচ্ছে—
তার দিকে তাকিয়ে আমরা কি বলতে পারি—
আমরা মানুষ?

কালের চিঠির প্রশ্ন করে-
মানবতার আদালতে কারা দায়ী? দোষী কি শুধু সেই মানুষ? যিনি বাচ্চাগুলোকে হত্যা করলেন?
দোষী কি সেই সমাজ? যে সমাজ কখনো প্রাণীদের জীবনরূপে গণ্য করে না? দোষী কি প্রশাসন?
যে বারবার বিচারহীনতা দিয়ে অপরাধ জন্মায়?
নাকি দোষী আমরা সবাই—
যারা দেখেও ভেতরে আগুন জ্বালাই না?
কালের চিঠির সরল ও নির্মম প্রশ্ন—
“প্রাণের ব্যথা বুঝতে না পারলে মানুষ হওয়ার অধিকার কি আমাদের আছে?”
মানুষ নামের প্রাণী আজ কোথায় পৌঁছেছে?
বিশ্বের কোথাও রাস্তায় মানুষের রেখে যাওয়া নবজাতককে পাহারা দেয় একদল কুকুর।আর
আমাদের দেশে মানুষই ডুবিয়ে মারে কুকুরের নবজাতক।
আসলে মানুষ কারা ?
এই প্রশ্ন সমাজের সামনে আজ একটা খোলা আঘাত।
মানুষের ভুল আজ কেন হবে পৃথিবীর লজ্জা ?
মা কুকুরটি যখন পুকুরে তাকিয়ে চিৎকার করছিল—
সময়, সমাজ, সভ্যতা—
হয়তো এদের কারোই কোনো লজ্জা জাগেনি।
তবে সত্যি কথা হলো—
আজকাল পশুরা ভালোর দিকি যাচ্ছে আর আর তার উল্টো দিকে মানুষেরা । পশুরা কখনো সন্তান মারে না, তবে মানুষেরা সব করতে পারে।
পশুরা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না,
মানুষ তবে মানুষেরা করে। পশুরা রাগে প্রাণ ছিঁড়ে নেয় না, তবে মানুষেরা নেয়।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—
মানুষ হওয়াটাই কি এখন ভুলে গেছে মানুষ?
কালের চিঠির শেষ আবেদন—
“মানুষ হয়ে উঠুন । শুধু মানুষ।”
ধর্মান্ধতা নয়, মানবতা—
জাতপাত নয়, জীবে দয়া—
ক্ষমতা নয়, করুণা—
যা মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে
আজ আমরা যে মা কুকুরটির জন্য কাঁদছি তা শুধু প্রাণীর জন্য কান্না নয়,এটি নিজের ভেতরের হারানো মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া।ফুটফুটে ৮টি প্রাণের মৃত্যু
অবশেষে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল- – মানুষ হওয়া সবচেয়ে কঠিন।মানুষ হয়ে থাকা আরও কঠিন। তাই আজকের সম্পাদকীয় শেষ করছি একটি নীরব উচ্চারণে—
“মানুষের হৃদয় যতদিন না জাগবে ততদিন পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী মানুষের কাছ থেকে ভয় পাবে।”

 

– বিমল সরকার
সম্পাদক, কালের চিঠি, গ্লোবাল ডেস্ক

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

“ মানুষ হওয়াটাই বুঝি ভুলে গেছে মানুষ”- বিমল সরকার

প্রকাশের সময়: ০৪:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

এই শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে হয় সভ্যতা, মূল্যবোধ, করুণা, দায়িত্ব, ভালোবাসা আর বোধের এক পর্বত চূড়া কিন্তু আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি সময়ের এমন এক সন্ধিক্ষণে যেখানে প্রশ্নটাই ফিরে আসছে—
আমরা সত্যিই মানুষ তো ? নাকি শুধু মানুষের আকৃতি নিয়ে জীবন চালাই ?
ঐ ছোট্ট সীমানায় মাত্র ৮ দিনের ৮টি ফুটফুটে প্রাণ
যাদের চোখও পুরোপুরি খুলে ওঠেনি, যারা এই পৃথিবীর আলো দেখতে শেখেনি,যারা এখনো মায়ের বুকের গন্ধ ছাড়েনি—
তাদের একটি বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হলো।
দশ সেকেন্ডে লেখা যায় কিন্তু সেই দশ সেকেন্ডে পৃথিবী তার সবচেয়ে বড় লজ্জাটা দেখল। মা কুকুরটি – বুকভরা দুধ নিয়ে,টানটান বুকভরা ব্যথা নিয়ে, পুকুরপাড়ে ছুটে ছুটে আর্তনাদ করছিল। হৃদয় আছে এমন কারো পক্ষে এ দৃশ্য দেখার পর স্থির থাকা অসম্ভব।


কিন্তু সেই মানুষ? যে হাত দিয়ে বস্তা ফেলেছে,
যে চোখ দিয়ে দেখেছে দুঃখ—
কোনো কি কাঁপুনি এল না তার শরীরে ?
অজস্র প্রশ্ন আজ প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে আগুন হয়ে জ্বলছে।
মানুষ হতে ধর্ম লাগে না তবে মানুষ লাগে। প্রকৃতিকে কেউ ধর্ম শেখায় না। পাখিকে কেউ মানবতা শেখায় না।কুকুরকে কেউ করুণা শেখায় না।কিন্তু মানুষকে শেখাতে হয়।বারবার শেখাতে হয়। কারণ মানুষই বার বার ভুলে যায় তার আসল পরিচয়।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন—
“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”
আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
যে মায়ের বুকের দুধ জমে গেছে,যে কুকুরটি সন্তানদের জন্য শোকান্তক ছুটে বেড়াচ্ছে—
তার দিকে তাকিয়ে আমরা কি বলতে পারি—
আমরা মানুষ?

কালের চিঠির প্রশ্ন করে-
মানবতার আদালতে কারা দায়ী? দোষী কি শুধু সেই মানুষ? যিনি বাচ্চাগুলোকে হত্যা করলেন?
দোষী কি সেই সমাজ? যে সমাজ কখনো প্রাণীদের জীবনরূপে গণ্য করে না? দোষী কি প্রশাসন?
যে বারবার বিচারহীনতা দিয়ে অপরাধ জন্মায়?
নাকি দোষী আমরা সবাই—
যারা দেখেও ভেতরে আগুন জ্বালাই না?
কালের চিঠির সরল ও নির্মম প্রশ্ন—
“প্রাণের ব্যথা বুঝতে না পারলে মানুষ হওয়ার অধিকার কি আমাদের আছে?”
মানুষ নামের প্রাণী আজ কোথায় পৌঁছেছে?
বিশ্বের কোথাও রাস্তায় মানুষের রেখে যাওয়া নবজাতককে পাহারা দেয় একদল কুকুর।আর
আমাদের দেশে মানুষই ডুবিয়ে মারে কুকুরের নবজাতক।
আসলে মানুষ কারা ?
এই প্রশ্ন সমাজের সামনে আজ একটা খোলা আঘাত।
মানুষের ভুল আজ কেন হবে পৃথিবীর লজ্জা ?
মা কুকুরটি যখন পুকুরে তাকিয়ে চিৎকার করছিল—
সময়, সমাজ, সভ্যতা—
হয়তো এদের কারোই কোনো লজ্জা জাগেনি।
তবে সত্যি কথা হলো—
আজকাল পশুরা ভালোর দিকি যাচ্ছে আর আর তার উল্টো দিকে মানুষেরা । পশুরা কখনো সন্তান মারে না, তবে মানুষেরা সব করতে পারে।
পশুরা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না,
মানুষ তবে মানুষেরা করে। পশুরা রাগে প্রাণ ছিঁড়ে নেয় না, তবে মানুষেরা নেয়।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—
মানুষ হওয়াটাই কি এখন ভুলে গেছে মানুষ?
কালের চিঠির শেষ আবেদন—
“মানুষ হয়ে উঠুন । শুধু মানুষ।”
ধর্মান্ধতা নয়, মানবতা—
জাতপাত নয়, জীবে দয়া—
ক্ষমতা নয়, করুণা—
যা মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে
আজ আমরা যে মা কুকুরটির জন্য কাঁদছি তা শুধু প্রাণীর জন্য কান্না নয়,এটি নিজের ভেতরের হারানো মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া।ফুটফুটে ৮টি প্রাণের মৃত্যু
অবশেষে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল- – মানুষ হওয়া সবচেয়ে কঠিন।মানুষ হয়ে থাকা আরও কঠিন। তাই আজকের সম্পাদকীয় শেষ করছি একটি নীরব উচ্চারণে—
“মানুষের হৃদয় যতদিন না জাগবে ততদিন পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী মানুষের কাছ থেকে ভয় পাবে।”

 

– বিমল সরকার
সম্পাদক, কালের চিঠি, গ্লোবাল ডেস্ক