বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচারকের ছেলে খুন: অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি চায় আটক লিমনের পরিবার

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমানকে (সুমন) হত্যার ঘটনায় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন অভিযুক্ত আটক রবিউল ইসলাম লিমনের (২৮) পরিবার। ছেলে হোক কিংবা বিচারকের স্ত্রী সেটি বড় বিষয় নয়। ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীর অপরাধযোগ্য শাস্তি হবে সেটাই দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর ডাবতলা এলাকায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। এসময় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকেই লিমন মিয়াকে (২৮) আটক করে তাসমিন নাহার ও অভিযুক্তকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।

আটক হওয়া লিমন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য এইচএম সোলায়মান শহিদের ছেলে। বাবা সোলায়মান শহিদ ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে যোগ দিয়ে ৭ বছর চাকরির করার পর ২০১৮ সালে ছেড়ে দেন। পরে এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন।

 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে মদনের পাড়ায় অভিযুক্ত লিমনের বাড়িতে গেলে কথা হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এসময় তার বাবা সোলায়মান শহীদ জানান, আপনারা ইতোমধ্যে অনেক ঘটনার কথা শুনেছেন। আমরাও মিডিয়াতে দেখেছি। কিন্তু ভিডিওতে ছেলেটার অনেক কথা শুনলাম। ওসবের কিছুই আমরা জানিনা। কোনো দিন কেউই জানায়নি। গতকাল প্রথমে আমরা পুলিশ মারফত লিমনের মৃত্যুর খবর পাই। তার কিছুক্ষণ পরই আটক হওয়ার ঘটনা জানতে পারি।

 

তিনি বলেন, আমি বলবো দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যা শাস্তি আছে সেই শাস্তি হোক অপরাধীর। তার কমও যেন না হয়, বেশিও যেন না হয়। সে অপরাধী যেই হোক। আমার ছেলে বা বিচারকের স্ত্রী বলে কথা নয়, ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।

এসময় তিনি ঘটনার তদন্ত বা বিচার কার্যক্রম যেন প্রভাবিত না হয় সেটিরও দাবি জানান।

 

এসময় লিমনের বড় ভাই খলিউর রহমান লিটন বলেন, গেল দেড় বছর থেকে লিমনের চলা ফেরায় আমরা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করতে পারি। তখন থেকে ওর সাথে পরিবারের লোকজন তেমন কথা বলতেন না। ও (লিমন) অসুস্থ্য ছিলো। গত ৮ অক্টোবর মাথা ও চোখের চিকিৎসার জন্য ওকে ঢাকা পাঠানো হয়। আমরা জানি ও ঢাকায় আছে।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা যাওয়ার আগে লিমন বাড়ির গাছ কেটে ঘরের ফার্নিচার করেন এবং পুরো বাড়ি রং করেন। এছাড়া ওর নিজের রুমটি বিভিন্ন ভাবে সাজান। এতে তারা এখন মনে করেন, বিচারকের স্ত্রীর সাথে যে লিমন সম্পর্কের কথা বলেছেন সেটি হয়তো সঠিক। হয়তো তাদের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্তও হয়েছিলো। সেটি না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

 

এদিকে, আহত হওয়ার পর হাসপাতালেই লিমনের দেওয়া কয়েকটি ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে দাম্ভিকতার সাথে ঘাতক নিজেকে বিএনপির ফুলছড়ি উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদকের ছেলে এবং তিনি নিজেই শহীদ জিয়া সাইবার ফোর্সের গাইবান্ধা জেলা কমিটির সদস্য বলে জানান। এছাড়া নিজেকে জুলাই যোদ্ধা বলেও দাবি করেন তিনি।

 

অপরদিকে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জজের স্ত্রী তাসমিন নাহারের সাথে তার ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। জজের পরিবার সিলেটে থাকাকালীন তাকে সিলেটে লোকজন দ্বারা মারধর করে পুলিশে দেওয়ার বিষয়টিও ভিডিওতে বলতে শোনা যায় লিমনকে।

 

অন্যদিকে, গত ৬ নভেম্বর সিলেটের থানায় নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বিচারকের স্ত্রী ও তাওসীফের মা তাসমিন নাহার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

 

সেই ডায়েরীতে তাসমিন নাহার উল্লেখ করেছিলেন, কোয়ান্টাম ফাইন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমন মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং সে মোবাইল নম্বর নেয়। পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায়ই লিমন তার (তাসমিন নাহারের) কাছে আর্থিক সহযোগিতা নিতেন। এক পর্যায়ে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা চাইতো। এতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি-ধামকি দিতেন।

 

সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে তাসমিন নাহার ও তার পরিবারের লোকজনদের হত্যা করার হুমকি দেয়। লিটন যে কোনো সময় তামমিন নাহারসহ তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এ কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি-জিডিতে এমনটিই উল্লেখ করেছিলেন তাসমিন নাহার। জিডি করার ৭ দিন পরই এই হত্যার ঘটনা ঘটে।

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

বিচারকের ছেলে খুন: অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি চায় আটক লিমনের পরিবার

প্রকাশের সময়: ০২:২৮:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমানকে (সুমন) হত্যার ঘটনায় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন অভিযুক্ত আটক রবিউল ইসলাম লিমনের (২৮) পরিবার। ছেলে হোক কিংবা বিচারকের স্ত্রী সেটি বড় বিষয় নয়। ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীর অপরাধযোগ্য শাস্তি হবে সেটাই দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর ডাবতলা এলাকায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। এসময় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকেই লিমন মিয়াকে (২৮) আটক করে তাসমিন নাহার ও অভিযুক্তকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।

আটক হওয়া লিমন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য এইচএম সোলায়মান শহিদের ছেলে। বাবা সোলায়মান শহিদ ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে যোগ দিয়ে ৭ বছর চাকরির করার পর ২০১৮ সালে ছেড়ে দেন। পরে এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন।

 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে মদনের পাড়ায় অভিযুক্ত লিমনের বাড়িতে গেলে কথা হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এসময় তার বাবা সোলায়মান শহীদ জানান, আপনারা ইতোমধ্যে অনেক ঘটনার কথা শুনেছেন। আমরাও মিডিয়াতে দেখেছি। কিন্তু ভিডিওতে ছেলেটার অনেক কথা শুনলাম। ওসবের কিছুই আমরা জানিনা। কোনো দিন কেউই জানায়নি। গতকাল প্রথমে আমরা পুলিশ মারফত লিমনের মৃত্যুর খবর পাই। তার কিছুক্ষণ পরই আটক হওয়ার ঘটনা জানতে পারি।

 

তিনি বলেন, আমি বলবো দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যা শাস্তি আছে সেই শাস্তি হোক অপরাধীর। তার কমও যেন না হয়, বেশিও যেন না হয়। সে অপরাধী যেই হোক। আমার ছেলে বা বিচারকের স্ত্রী বলে কথা নয়, ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।

এসময় তিনি ঘটনার তদন্ত বা বিচার কার্যক্রম যেন প্রভাবিত না হয় সেটিরও দাবি জানান।

 

এসময় লিমনের বড় ভাই খলিউর রহমান লিটন বলেন, গেল দেড় বছর থেকে লিমনের চলা ফেরায় আমরা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করতে পারি। তখন থেকে ওর সাথে পরিবারের লোকজন তেমন কথা বলতেন না। ও (লিমন) অসুস্থ্য ছিলো। গত ৮ অক্টোবর মাথা ও চোখের চিকিৎসার জন্য ওকে ঢাকা পাঠানো হয়। আমরা জানি ও ঢাকায় আছে।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা যাওয়ার আগে লিমন বাড়ির গাছ কেটে ঘরের ফার্নিচার করেন এবং পুরো বাড়ি রং করেন। এছাড়া ওর নিজের রুমটি বিভিন্ন ভাবে সাজান। এতে তারা এখন মনে করেন, বিচারকের স্ত্রীর সাথে যে লিমন সম্পর্কের কথা বলেছেন সেটি হয়তো সঠিক। হয়তো তাদের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্তও হয়েছিলো। সেটি না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

 

এদিকে, আহত হওয়ার পর হাসপাতালেই লিমনের দেওয়া কয়েকটি ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে দাম্ভিকতার সাথে ঘাতক নিজেকে বিএনপির ফুলছড়ি উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদকের ছেলে এবং তিনি নিজেই শহীদ জিয়া সাইবার ফোর্সের গাইবান্ধা জেলা কমিটির সদস্য বলে জানান। এছাড়া নিজেকে জুলাই যোদ্ধা বলেও দাবি করেন তিনি।

 

অপরদিকে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জজের স্ত্রী তাসমিন নাহারের সাথে তার ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। জজের পরিবার সিলেটে থাকাকালীন তাকে সিলেটে লোকজন দ্বারা মারধর করে পুলিশে দেওয়ার বিষয়টিও ভিডিওতে বলতে শোনা যায় লিমনকে।

 

অন্যদিকে, গত ৬ নভেম্বর সিলেটের থানায় নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বিচারকের স্ত্রী ও তাওসীফের মা তাসমিন নাহার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

 

সেই ডায়েরীতে তাসমিন নাহার উল্লেখ করেছিলেন, কোয়ান্টাম ফাইন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমন মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং সে মোবাইল নম্বর নেয়। পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায়ই লিমন তার (তাসমিন নাহারের) কাছে আর্থিক সহযোগিতা নিতেন। এক পর্যায়ে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা চাইতো। এতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি-ধামকি দিতেন।

 

সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে তাসমিন নাহার ও তার পরিবারের লোকজনদের হত্যা করার হুমকি দেয়। লিটন যে কোনো সময় তামমিন নাহারসহ তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এ কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি-জিডিতে এমনটিই উল্লেখ করেছিলেন তাসমিন নাহার। জিডি করার ৭ দিন পরই এই হত্যার ঘটনা ঘটে।