
কামারদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন মোবারক হোসেন। হাতে প্রয়োজনীয় কাগজ। জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে এসেছিলেন সকাল ১০টায়। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পর জানলেন চেয়ারম্যান আসছেন না। পরিষদের সব ধরনের প্রায় সেবা বন্ধ রয়েছে।
মোবারক হোসেন কামারদহ ইউনিয়নের চামড়গাছা গ্রামের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে চেয়ারম্যানের সই লাগবে। তিন দিন এসে ঘুরে গেলাম। তাঁকে পেলাম না। সচিবের হাতে কাগজপত্র জমে আছে। তিনি বলেছেন পড়ে আসতে। এ অবস্থা কতদিন চলবে জানি না।
অবশ্য শুধু কামারদহ ইউনিয়ন নয়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১২টির চিত্রই এমন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে নাগরিক সনদ, জন্মসনদ, বিধবা-বয়স্ক ভাতা, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সেবা নিতে আসা নাগরিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ ছাড়া সেবাপ্রত্যাশীদের সময়মতো কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে না পারায় নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিষদের দায়িত্ব পালনকারী সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গত বৃহস্পতিবার কামারদহ ও দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের সামনে মোটরসাইকেল ও রিকশার ভিড়। সেবাপ্রত্যাশীরা কেউ আসছেন, আবার কেউ যাচ্ছে। সচিবরা অভিযোগ শুনছেন। অন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা কম্পিউটার অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করাচ্ছেন।
দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোজদার রহমান বলেন, চেয়ারম্যান আসেন না। ফাইলপত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আনতে হয়। পরিষদে আরও কাজ থাকে। প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব হয় না। সেবাপ্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় কাগজ জমা হলে একবারে নিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আনতে হয়। এতে ফাইল জমে যায়। সেবাপ্রত্যাশীদের অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেন না।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামারদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌকির হাসান রচি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি সামাজিক মাধ্যমে সরব থাকলেও জনরোষের ভয়ে পরিষদে আসেন না। পরিষদের যাবতীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তাঁর স্ত্রী কণা বেগম। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. র. ম শরিফুল ইসলাম জর্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি বগুড়ায় থাকছেন। সচিব তাঁর কাছে কাগজপত্র নিয়ে গেলে স্বাক্ষর করেন। একই অবস্থা আরও ১০ ইউনিয়ন পরিষদে। এ বিষয়ে কথা বলতে আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, আপনাদের কাজ সংবাদ প্রকাশ করা। তথ্য সংগ্রহ করে সেই কাজটি করেন। আমরা সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
নিজস্ব প্রতিবেদক 















