বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাঁওতাল হত্যার বিচারকাজ ৯ বছরেও শুরু হয়নি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতাল বসতি উচ্ছেদ ও হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ওই ঘটনায় তিন সাঁওতাল নিহত হলেও আজ পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। মামলা হলেও আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এতে ক্ষুব্ধ হতাহতদের স্বজন ও ক্ষতিগস্ত সাঁওতালরা। প্রতি বছরের ৬ নভেম্বর সাঁওতাল হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন ভুক্তভোগী ও আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে রংপুর চিনিকলের ওই জমিতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের সিদ্ধান্তে নতুন করে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাঁওতালরা। তাদের দাবি, এই জমি তাদের বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে ইপিজেড করা হলে তারা জীবিকা হারাবেন ও পথে বসবেন।

৯ বছর পরও বিচার অনিশ্চিত : ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে বসতি থেকে শতাধিক সাঁওতালকে উচ্ছেদ করে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। একই বছরের নভেম্বরে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। স্বপন মুরমু ও থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে আদালতে মামলা দুটি করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি মামলা এক করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। ২০১৯ সালে পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়, কিন্তু তাতে গুরুত্বপূর্ণ ১১ আসামির নাম বাদ পড়ে। বাদী থোমাস হেমব্রম আদালতে নারাজি পিটিশন দেন। আদালত পরে সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডিও একই ধরনের অভিযোগপত্র জমা দিলে বাদী পক্ষ আবারও নারাজি দেন। গত বছর আদালত পুলিশ সুপারকে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বিচার কার্যত স্থবির হয়ে আছে। আদালতের নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সাঁওতালদের হতাশা বাড়ছে। এদিকে নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর-মাদারপুর সাঁওতাল পল্লীর শহিদবেদিতে ফুল ও মোমবাতি জ¦ালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, নীরবতা পালন এবং বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন সাঁওতালরা। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও সংহতি কমিটির উদ্যোগে শোক মিছিল ও সমাবেশ হবে বাগদাফার্ম এলাকায়। একই সঙ্গে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবাদ সমাবেশ।

এতে বিভিন্ন মানবাধিকার ও আদিবাসী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

নতুন করে উচ্ছেদের আশঙ্কা : কয়েক বছর আগে উচ্ছেদকৃত সাঁওতাল ও বাঙালিরা পুনরায় কাঁটাতার ভেঙে জমির দখল নেন। এখন তারা সেখানে ফসল চাষ করছেন। কিন্তু জমিতে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগে তারা উদ্বেগে রয়েছেন। সরকার ২০২২ সালে রংপুর চিনিকলের ওই জমিতে ইপিজেড নির্মাণের অনুমোদন দেয়। বেপজা জানিয়েছে, ইপিজেড হলে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। তবে এই আশ্বাসে আশ্বস্ত নন সাঁওতালরা।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ১৯৫৪ সালে সরকার এই জমি চিনিকলের জন্য ইজারা নিয়েছিল। ইজারায় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, আখ চাষ না হলে জমি ফেরত দিতে হবে। এখন আখ চাষ বন্ধ। তাই জমি আমাদের ফেরত দেওয়া উচিত। এই জমি সাঁওতালদের রক্তে রঞ্জিত। এখানে ইপিজেড হলে আমরা বাপ-দাদার জমি হারাব। সরকার পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

সাঁওতাল হত্যার বিচারকাজ ৯ বছরেও শুরু হয়নি

প্রকাশের সময়: ১২:৪২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতাল বসতি উচ্ছেদ ও হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ওই ঘটনায় তিন সাঁওতাল নিহত হলেও আজ পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। মামলা হলেও আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এতে ক্ষুব্ধ হতাহতদের স্বজন ও ক্ষতিগস্ত সাঁওতালরা। প্রতি বছরের ৬ নভেম্বর সাঁওতাল হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন ভুক্তভোগী ও আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে রংপুর চিনিকলের ওই জমিতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের সিদ্ধান্তে নতুন করে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাঁওতালরা। তাদের দাবি, এই জমি তাদের বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে ইপিজেড করা হলে তারা জীবিকা হারাবেন ও পথে বসবেন।

৯ বছর পরও বিচার অনিশ্চিত : ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে বসতি থেকে শতাধিক সাঁওতালকে উচ্ছেদ করে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। একই বছরের নভেম্বরে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। স্বপন মুরমু ও থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে আদালতে মামলা দুটি করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি মামলা এক করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। ২০১৯ সালে পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়, কিন্তু তাতে গুরুত্বপূর্ণ ১১ আসামির নাম বাদ পড়ে। বাদী থোমাস হেমব্রম আদালতে নারাজি পিটিশন দেন। আদালত পরে সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডিও একই ধরনের অভিযোগপত্র জমা দিলে বাদী পক্ষ আবারও নারাজি দেন। গত বছর আদালত পুলিশ সুপারকে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বিচার কার্যত স্থবির হয়ে আছে। আদালতের নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সাঁওতালদের হতাশা বাড়ছে। এদিকে নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর-মাদারপুর সাঁওতাল পল্লীর শহিদবেদিতে ফুল ও মোমবাতি জ¦ালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, নীরবতা পালন এবং বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন সাঁওতালরা। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও সংহতি কমিটির উদ্যোগে শোক মিছিল ও সমাবেশ হবে বাগদাফার্ম এলাকায়। একই সঙ্গে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবাদ সমাবেশ।

এতে বিভিন্ন মানবাধিকার ও আদিবাসী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

নতুন করে উচ্ছেদের আশঙ্কা : কয়েক বছর আগে উচ্ছেদকৃত সাঁওতাল ও বাঙালিরা পুনরায় কাঁটাতার ভেঙে জমির দখল নেন। এখন তারা সেখানে ফসল চাষ করছেন। কিন্তু জমিতে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগে তারা উদ্বেগে রয়েছেন। সরকার ২০২২ সালে রংপুর চিনিকলের ওই জমিতে ইপিজেড নির্মাণের অনুমোদন দেয়। বেপজা জানিয়েছে, ইপিজেড হলে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। তবে এই আশ্বাসে আশ্বস্ত নন সাঁওতালরা।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ১৯৫৪ সালে সরকার এই জমি চিনিকলের জন্য ইজারা নিয়েছিল। ইজারায় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, আখ চাষ না হলে জমি ফেরত দিতে হবে। এখন আখ চাষ বন্ধ। তাই জমি আমাদের ফেরত দেওয়া উচিত। এই জমি সাঁওতালদের রক্তে রঞ্জিত। এখানে ইপিজেড হলে আমরা বাপ-দাদার জমি হারাব। সরকার পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।