
– বিমল সরকার : আকাশে আবারও দেখা যাচ্ছে সন্দেহের কালো মেঘ- যে “ঐকমতের তরী” একদিন দেশকে স্থিতির তীরে পৌঁছে দিতে পারত,সে তরী আজ ডুবছে অবিশ্বাস, প্রতারণা ও একপেশে সিদ্ধান্তের ঘূর্ণিপাকে।
অস্থায়ী সরকারের গঠন, সাংবিধানিক সংশোধন, কিংবা জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন-সবকিছুই মূলত এক স্বপ্নের নামে শুরু হয়েছিল যার নাম জাতীয় ঐক্য।কিন্তু আজ সেই শব্দটাই যেন পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বিতর্কিত ধারণায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন- কমিশনের প্রস্তাবগুলো “একপেশে” ও “জবরদস্তিমূলক”।জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন সব সিদ্ধান্ত, যা আলোচনার নয়, বরং নির্দেশের ভাষায় লেখা। এমনকি ‘ভিন্নমত’ বা note of dissent- যা গণতন্ত্রের প্রাণস্বরূপ- তা-ও উপেক্ষিত হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে- যে কমিশন ঐক্যমতের প্রতীক হওয়ার কথা ছিল,
সেই কমিশনই কি এখন অনৈক্যের স্থপতি হয়ে উঠছে?রাজনীতি যদি সংলাপের বদলে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে “কে বেশি দেশপ্রেমিক” প্রমাণের খেলায়,তবে রাষ্ট্র হারায় দিকনির্দেশ,আর জনগণ হারায় আস্থা।
ঐকমতের তরী আসলে শুধু কাগজে ভাসে না-এটি ভাসে মানুষের বিশ্বাসে, পারস্পরিক শ্রদ্ধায়,আর সবচেয়ে বেশি, সত্য বলার সাহসে।যখন সেই সাহস হারিয়ে যায়,তখন সভা হয়, সনদ লেখা হয়, প্রস্তাব গৃহীত হয় কিন্তু গণতন্ত্রের ভেতর থেকে ফাঁকা হয়ে যায় “মানবিক বিশ্বাসের আত্মা”।
অস্থায়ী সরকার এখন কঠিন এক সঙ্কটে।সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে হয়তো তারা হারাতে বসেছে সেই ন্যূনতম দৃঢ়তা,যা একটি জাতিকে সংকটের সময় টিকিয়ে রাখে। পরিশেষে আবার বলি- ঐক্য কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না; যা জন্মায় বিশ্বাসের ভিতর থেকে । আর বিশ্বাসের মৃত্যু হলে,গণতন্ত্র কেবল আনুষ্ঠানিকতার নাম হয়ে যায় ।ঐক্য মানে সবাই এক কথা বলবে – এমন নয়,বরং ঐক্য মানে সবাই কথা বলার অধিকার পাবে।সেই অধিকারই যদি আজ সন্দেহের তালায় বন্দি হয়,তবে প্রশ্ন উঠবেই-তীরে পৌঁছানোর আগেই কি ডুবে গেল ঐকমতের তরী ?
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















