
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জুলাই যোদ্ধারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং তিন দফা আদায়ে রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রতিটি জেলায় মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন জুলাই যোদ্ধারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবন এলাকায় সাংবাদিকদের এ ঘোষণা দেন জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু হামলার শিকার হয়েছি, আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং আমাদের তিন দফা দাবি এ সরকারের আমলেই বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রত্যেক জেলা শহরের মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। আমরা অবরোধ কর্মসূচিতে জুলাই আহতদের পাশাপাশি, দেশের সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ কামনা করছি। যদি আমরা আমাদের জীবন ও রক্তের স্বীকৃতি আদায় করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে আর বিপ্লবী এ রাষ্ট্রে জন্ম নেবে না।
তিন দফা দাবির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ এবং আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের ‘বীর’ স্বীকৃতি দিয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে এবং আমাদের জন্য দায়মুক্তি দিয়ে সুরক্ষা আইন করতে হবে। যাতে আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত হয়রানি করা না হয়। আমাদের সারাদেশে ষড়যন্ত্র করে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের এই নেতা বলেন, আমাদের আলী রীয়াজ স্যার যে কথা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরিত সনদের সঙ্গে তার বিরোধ আছে। আলী রীয়াজ স্যার জুলাই আহত এবং শহীদ পরিবারকে আইনি নিরাপত্তার কথা বলেছেন, সেটি পাঁচ নম্বর ধারায় উল্লেখ নেই। তাহলে কি এখানে আরেকটি প্রতারণা করা হলো?
তিনি বলেন, আমরা বিগত এক মাসে সরকারের নানা পর্যায়ে দাবিগুলো নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, কিন্তু যখন জুলাইয়ের চূড়ান্ত খসড়ায় আমাদের ন্যায্য দাবি সনদে সংযোজিত হয়নি তাই আমরা সংসদ ভবনের গেটে অবস্থান নিই। আমরা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময় দিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেছি, কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় আসেনি।
মাসুদ রানা সৌরভ আরো বলেন, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চ দখল করে নিই। আমরা তিন মিনিটের মধ্যে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে বসিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। কারো কোনো ব্যাঘাত হয়নি। সাড়ে ১২টার দিকে ঐকমত্য কমিশনের প্রতিনিধি দল আসে, আলী রীয়াজ স্যার সেখানে ছিলেন। আমরা স্যারের সঙ্গে আলোচনা করি, তিনি পাঁচ নম্বর ধারা ঘোষণা করে চলে যান। কিন্তু তিনি বাস্তবায়নের ব্যাপারে কিছু বলেননি।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলেছি- আমাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য তিন মিনিট সময় দেন। ওনারা সময় দেননি। তারা পশ্চিম পাশ থেকে আক্রমণ শুরু করেন। আমি তখন পশ্চিম পাশে দাঁড়ানো। ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও অনুরোধ করেন, তাদের সময় দিন। কিন্তু তারা সময় না দিয়ে এলোপাথাড়ি লাঠিপেটা, বুট দিয়ে পাড়ানো শুরু করে। তারা আমাদের এমনভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, যেন এ রাষ্ট্রের জন্য আমরা বিশেষ যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছি। আমাদেরকে দমন করাই যেন তাদের কাজ। আমরা এমন হামলার নিন্দা জানাই।
নিজস্ব প্রতিবেদক 

















