
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি সহজ নয়—না শিক্ষার্থীদের জন্য, না অভিভাবকদের জন্য, না শিক্ষা প্রশাসনের জন্য। ফলাফল মানে শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি পরিবার, আশা, পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের গল্প।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা ভালো ফল করেছে, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তবে যাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি, তাদের প্রতিও আমার সহানুভূতি রইল। এই মুহূর্তও শেখার অংশ—হতাশ না হয়ে শেখার অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিতে হবে।’
ড. আবরার বলেন, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাশের হার ও জিপিএ–৫ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই। বছরের পর বছর শেখার ঘাটতি জমে গেছে, কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন বাস্তবতাকে স্বীকার করিনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে পাশের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ–৫–এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা প্রকৃত শেখার সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’
শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, এখন থেকে শিক্ষার মূল্যায়নে আসল শেখাকেই মানদণ্ড ধরা হবে। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের প্রতিফলিত করে, সেটিই হোক আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সকল শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায় সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা বেছে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়। আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় করব।’
ড. আবরার বলেন, ‘আমি এই ফলাফলকে ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। এখনই সময় নিজেদের এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে সৎভাবে মূল্যায়ন করার।”