
বিশ্বে ক্ষুধা দূরীকরণের জন্য বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারে ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রাজধানী রোমে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ইউনূস বলেন, “ক্ষুধা অভাবের কারণে হয় না, এটি আমাদের তৈরি অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতার কারণে হয়। আমাদের অবশ্যই এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে।”
বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের ছয় দফা প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমেই বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন’-এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ুুসংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।
পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।
ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।
বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “আমরা একটি ছোট ভূমির দেশ- আয়তনে ইতালির অর্ধেক। তবুও ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে খাওয়াই এবং আশ্রয় দিচ্ছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে।” তিনি জানান, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশ। কৃষকেরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন, আর উদ্ভাবন করেছেন ১৩৩টি জলবায়ু সহনশীল ধানের জাত।
ইউনূস বলেন, “বর্তমান মুনাফাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আমাদের এমন এক ব্যবসা মডেল দরকার যা মুনাফাহীন হলেও সমস্যার সমাধান করে- সামাজিক ব্যবসা।”
তিনি তার প্রস্তাবিত ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’ ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন- জিরো ওয়েলথ কনসেনট্রেশন (সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ), জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট (সবার জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ) এবং জিরো নেট কার্বন ইমিশনস (জলবায়ু রক্ষা)। ইউনূস বলেন, “এটি কোনো স্বপ্ন নয়, পৃথিবীকে বাঁচাতে এটি একমাত্র বাস্তব প্রয়োজন।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। গ্রামীণ ডানোন শিশুদের পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে, আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিক ব্যবসা মানুষের ক্ষমতায়নের বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছে।
তরুণদের ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আজকের তরুণরা সৃজনশীল এবং তাদের হাতে এমন প্রযুক্তি আছে যা ২০ বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। তাদের নেতৃত্বেই এই পরিবর্তন সম্ভব।”
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















