মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমলনামা’ চলচ্চিত্রের পর্যালোচনা এবং পরিচালকের ব্যর্থতা

রায়হান রাফি পরিচালিত ওয়েব চলচ্চিত্র ‘আমলনামা’। বাঙলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার দাপট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুনীর্তি, আর্থিক লোভ, ক্ষমতাসীনদের সমীহ করা, বিচারবহিভূর্ত হত্যাকান্ডসহ বাস্তবেই ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে একটু একটু রসদ নিয়ে তার সাথে কল্পনা মি

শিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। সাধারণ গল্প। পরিচিত গল্প। খবরের কাগজে এমন গল্প আমরা নিয়মিত পাই কিন্তু গল্পগুলো এতটাই নিয়মিত হয়ে গেছে যে, আমরা এসব খবর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, মেনে নিতে শুরু করেছি। কখনও কখনও কিছু কিছু ঘটনা অবশ্য আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, আবেগকে উত্তাল করে তখন তা আলোচনায় আসে। কখনও থাকে সপ্তাহখানেক, আবার কখনওবা মাসখানেক। তারপর আবার ভুলে যাই। এমনি একটি বহুল আলোচিত

গল্পের কিছুটা অংশ রায়হান রাফি তাঁর চলচ্চিত্রে তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছেন। গল্পটা শুরু হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে। দেশে তখন মাদক নিমূর্ল অভিযান চলমান। মাদক চোরাচালানের জন্য এক মাদক স¤্রাট যান হাসানের কাছে তার সহযোগিতা নিতে। কিন্তু হাসান দুইবছর আগে এসব কাজ বাদ দিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে। সে খুবই ভদ্রতার সাথে সেই মাদক স¤্রাটের অনুরোধ ফিরিয়ে দেন। সেইদিন রাতেই কতিপয় আইনশৃঙ্খলার লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। হাসানের স্ত্রী তার খোজে থানায় গেলে তারা জানায় তার স্বামীকে ধরে আনেনি। দৃশ্যপট পরিবর্তন হলে দেখা যায়, স্পেশাল ডিপার্টমেন্টের অফিসার ইমরান তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীর যত্ন ও তাকে নিয়ে তাদের অনাগত সন্তানের নাম খুজতে ব্যস্ত। হাসানকে গ্রেফতারের দিন মধ্যরাতেই তাকে উর্ধতন এক অফিসার মাঝ রাতে ডেকে নিয়ে একটি অপারেশনের তথ্য দেয় এবং তাকে তা সম্পূর্ণ করতে বলা হয়। প্রথমদিকে ইমরান কাজটা নিতে অস্বীকার করলেও একসময় বাধ্য হয়ে তাকে নিতেই হয়। দেখা যায় হাসানকে যারা গ্রেফতার করেছে ইমরান সেই টিমের প্রধান। হাসান তার পূর্বপরিচিত। হাসানকে হঠাৎ তার টিমের সদস্যরা জোর করে এনেছে জন্য সে তাদের বকাবকি করে এবং হাসানের কাছে ক্ষমা চায়। তারপর হাসানকে বলে মাদক ব্যবসায়ী মঞ্জুরকে খুঁজে দিতে। হাসান তাকে খুজে দিতে রাজি হয়। হাসানসহ ইমরানের টিম বের হয় মঞ্জুরের খোজে। আবার হাসানের স্ত্রী হাসানের খোজে। চলচ্চিত্রটি চলতে থাকে। মঞ্জুরের খোজ করতে করতে হাসান ইমরানের মেয়ের নাম ঠিক করে। সেই নাম ইমরানের স্ত্রীর ভীষণ পছন্দ হয়। চলচ্চিত্রের শেষ অনুমেয় নয়। কিন্তু শেষটুকু চলচ্চিত্রটির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। শেষটুকু দেখে আসলে বোঝা যায় না, আমলনামা নাম কার সাথে সার্থকতা পায় — হাসান নাকি ইমরান? শেষ ঘটনায় হাসানের শুরু করার কোন পথ খোলা থাকে না, অন্যদিকে ইমরান চাইলেই সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবে। কিন্তু পুরো চলচ্চিত্র দেখে বোঝা যায় হাসানের থেকে ইমরানের আমলনামা বেশি ভারী। তাই ইমরানকে দিয়ে চলচ্চিত্রটির নাম তা অনুমেয়। কিন্তু ইমরানের আমলনামা তখন পূর্ণতা পেতো যদি ইমরান হাসানের দেয়া নামটি তার মেয়ের নাম রাখতো। কারণ ইমরানের মেয়ের নাম হাসানের দেয়া নামটি রেখে যদি তার মেয়ের পরিণতি স্ত্রীর পরণতি হতো তবে ইমরানের সামনে পড়ে থাকতো বিশাল একটি জীবন কিন্তু শুরু করার কোন পথ থাকতো না। তবেই নামটি সার্থকতা পেতো। এছাড়াও আবহ সঙ্গীতে গভীরতা কম ছিলো।২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়া ১ ঘন্টা ৪২ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটিতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন — জাহিদ হাসান, তমা মির্জা, সাকিরা, কামরুজ্জামান কামু, গাজী রাকায়েত। চলচ্চিত্রটির শেষটুকু দর্শক বাস্তব একটি ঘটনার সাথে মেলাতে পারবেন এবং পুরোপুরি উপলদ্ধি করতে পারলে আবেগ সংযত করা অসম্ভব।

পর্যালোচনা : জীম ওয়াজেদ

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

‘আমলনামা’ চলচ্চিত্রের পর্যালোচনা এবং পরিচালকের ব্যর্থতা

প্রকাশের সময়: ০৪:০১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

রায়হান রাফি পরিচালিত ওয়েব চলচ্চিত্র ‘আমলনামা’। বাঙলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার দাপট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুনীর্তি, আর্থিক লোভ, ক্ষমতাসীনদের সমীহ করা, বিচারবহিভূর্ত হত্যাকান্ডসহ বাস্তবেই ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে একটু একটু রসদ নিয়ে তার সাথে কল্পনা মি

শিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। সাধারণ গল্প। পরিচিত গল্প। খবরের কাগজে এমন গল্প আমরা নিয়মিত পাই কিন্তু গল্পগুলো এতটাই নিয়মিত হয়ে গেছে যে, আমরা এসব খবর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, মেনে নিতে শুরু করেছি। কখনও কখনও কিছু কিছু ঘটনা অবশ্য আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, আবেগকে উত্তাল করে তখন তা আলোচনায় আসে। কখনও থাকে সপ্তাহখানেক, আবার কখনওবা মাসখানেক। তারপর আবার ভুলে যাই। এমনি একটি বহুল আলোচিত

গল্পের কিছুটা অংশ রায়হান রাফি তাঁর চলচ্চিত্রে তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছেন। গল্পটা শুরু হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে। দেশে তখন মাদক নিমূর্ল অভিযান চলমান। মাদক চোরাচালানের জন্য এক মাদক স¤্রাট যান হাসানের কাছে তার সহযোগিতা নিতে। কিন্তু হাসান দুইবছর আগে এসব কাজ বাদ দিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে। সে খুবই ভদ্রতার সাথে সেই মাদক স¤্রাটের অনুরোধ ফিরিয়ে দেন। সেইদিন রাতেই কতিপয় আইনশৃঙ্খলার লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। হাসানের স্ত্রী তার খোজে থানায় গেলে তারা জানায় তার স্বামীকে ধরে আনেনি। দৃশ্যপট পরিবর্তন হলে দেখা যায়, স্পেশাল ডিপার্টমেন্টের অফিসার ইমরান তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীর যত্ন ও তাকে নিয়ে তাদের অনাগত সন্তানের নাম খুজতে ব্যস্ত। হাসানকে গ্রেফতারের দিন মধ্যরাতেই তাকে উর্ধতন এক অফিসার মাঝ রাতে ডেকে নিয়ে একটি অপারেশনের তথ্য দেয় এবং তাকে তা সম্পূর্ণ করতে বলা হয়। প্রথমদিকে ইমরান কাজটা নিতে অস্বীকার করলেও একসময় বাধ্য হয়ে তাকে নিতেই হয়। দেখা যায় হাসানকে যারা গ্রেফতার করেছে ইমরান সেই টিমের প্রধান। হাসান তার পূর্বপরিচিত। হাসানকে হঠাৎ তার টিমের সদস্যরা জোর করে এনেছে জন্য সে তাদের বকাবকি করে এবং হাসানের কাছে ক্ষমা চায়। তারপর হাসানকে বলে মাদক ব্যবসায়ী মঞ্জুরকে খুঁজে দিতে। হাসান তাকে খুজে দিতে রাজি হয়। হাসানসহ ইমরানের টিম বের হয় মঞ্জুরের খোজে। আবার হাসানের স্ত্রী হাসানের খোজে। চলচ্চিত্রটি চলতে থাকে। মঞ্জুরের খোজ করতে করতে হাসান ইমরানের মেয়ের নাম ঠিক করে। সেই নাম ইমরানের স্ত্রীর ভীষণ পছন্দ হয়। চলচ্চিত্রের শেষ অনুমেয় নয়। কিন্তু শেষটুকু চলচ্চিত্রটির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। শেষটুকু দেখে আসলে বোঝা যায় না, আমলনামা নাম কার সাথে সার্থকতা পায় — হাসান নাকি ইমরান? শেষ ঘটনায় হাসানের শুরু করার কোন পথ খোলা থাকে না, অন্যদিকে ইমরান চাইলেই সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবে। কিন্তু পুরো চলচ্চিত্র দেখে বোঝা যায় হাসানের থেকে ইমরানের আমলনামা বেশি ভারী। তাই ইমরানকে দিয়ে চলচ্চিত্রটির নাম তা অনুমেয়। কিন্তু ইমরানের আমলনামা তখন পূর্ণতা পেতো যদি ইমরান হাসানের দেয়া নামটি তার মেয়ের নাম রাখতো। কারণ ইমরানের মেয়ের নাম হাসানের দেয়া নামটি রেখে যদি তার মেয়ের পরিণতি স্ত্রীর পরণতি হতো তবে ইমরানের সামনে পড়ে থাকতো বিশাল একটি জীবন কিন্তু শুরু করার কোন পথ থাকতো না। তবেই নামটি সার্থকতা পেতো। এছাড়াও আবহ সঙ্গীতে গভীরতা কম ছিলো।২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়া ১ ঘন্টা ৪২ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটিতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন — জাহিদ হাসান, তমা মির্জা, সাকিরা, কামরুজ্জামান কামু, গাজী রাকায়েত। চলচ্চিত্রটির শেষটুকু দর্শক বাস্তব একটি ঘটনার সাথে মেলাতে পারবেন এবং পুরোপুরি উপলদ্ধি করতে পারলে আবেগ সংযত করা অসম্ভব।

পর্যালোচনা : জীম ওয়াজেদ