
বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আরও ১১টি জাহাজ গাজা উপত্যকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এসব জাহাজে প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন।
এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজ আরও ৮টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ যোগ দিয়েছ। এই বহরে রয়েছে দুটি নৌকা। একসঙ্গে এ দুটি দল ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে গাজা অভিমুখে ছুটে চলছে। খবর আনাদুলুর
এই বহরের খবর এমন সময় এলো- যখন গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ৪৪টি জাহাজ জব্দ করেছে ইসরায়েল। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
গাজা উপত্যকায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বাসস্থান। প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজার ওপর অবরোধ করছে ইসরায়েল। চলতি বছরের মার্চ মাসে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহও বন্ধ করে তারা। এর ফলে উপত্যকায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পরে।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে আছেন। এসব নৌযানের লাইভ ট্র্যাকিং এই লিংকে দেখা যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেছেন, তাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। তাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা আছে। আজ তারা ফিলিস্তিনি টাইম জোনে পৌঁছেছেন। তবে এখনো দূরত্ব আছে।
কোয়ালিশনের তথ্য অনুযায়ী, নৌযানগুলো বর্তমানে ক্রিট দ্বীপের (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) উপকূলে অবস্থান করছে এবং এতে প্রায় ১০০ যাত্রী আছেন।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও সেখানে চলমান অবরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার মিশন চালিয়েছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। এফএফসির সর্বশেষ এই মিশন গত বুধবার যাত্রা শুরু করে।
ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসকবাহী এই জাহাজ।
প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।
একই সঙ্গে ধারাবাহিক অবরোধ ও বোমাবর্ষণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দলগুলোকেও গাজায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। যারা অনুমতি পান, তাদেরও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বা সরঞ্জাম আনার অনুমতি দেওয়া হয় না।
জাহাজে থাকা এফএফসির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, ‘কনসায়েন্স’ শুধু ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক নয়; বরং বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার ডাক। ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই যাত্রা চালিয়ে যাব।’
ইতালির চিকিৎসক রিকার্ডো কোররাদিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য বলা ও জীবন রক্ষা করা। এই মিশন আমাদের সহকর্মীদের প্রতি এক আহ্বান—আর সেই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও, যাতে তারা নীরবতা ভাঙে, নীতিনৈতিকতা বজায় রাখে এবং ইতিহাসের পাশে দাঁড়ায়।’
এদিকে ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজ ম্যারিনেটও দখল নেয় ইসরায়েলি সৈন্যরা। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়।
এর আগেও ইসরায়েল গাজাগামী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, জাহাজের মালামাল বাজেয়াপ্ত করেছে এবং অধিকারকর্মীদের বহিষ্কার করেছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার সতর্ক করছে, এই অবরুদ্ধ অঞ্চলে অনাহার ও রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, আর গাজা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















