
আসামের আকাশ গতকাল ছিল অশ্রুসিক্ত, রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল। সবাই একসুরে বিদায় জানালেন প্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গকে। গত শনিবার রাত থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন আসামবাসী। শেষবারের মতো ফিরবেন তাদের গর্ব জুবিন গার্গ। ভোর থেকেই বিমানবন্দরে ভিড় বাড়তে থাকে।
আজ রোববার সকালে গুয়াহাটি লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় তাঁর মরদেহ। স্ত্রী গরিমা গার্গ এবং আসাম সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর ফুলে সাজানো অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ভিআইপি গেট দিয়ে। বিমান থেকে নামানো মাত্রই হাজারো মানুষ কান্নাভেজা কণ্ঠে স্লোগান তুলতে থাকে– “জুবিন দা, তুমি অমর।” এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, যেখানে সাধারণ মানুষ ফুল আর গানে ভরিয়ে দেন তাঁর শেষ যাত্রাপথ।
গুয়াহাটির প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি মোড় মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভবনের ছাদে, রাস্তার পাশে, গাছে চড়া কিশোর থেকে শুরু করে মাটিতে বসে থাকা প্রবীণ সবাই যেন শোকের স্রোতে ভেসে যান। অনেক তরুণ-তরুণী জুবিনের জনপ্রিয় গান গেয়ে তাঁকে বিদায় জানান। শিশুরা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে, আর প্রবীণরা স্মৃতিচারণ করতে করতে চোখ মুছতে থাকেন।
জুবিন গার্গ শুধু আসামের নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের আইকনিক গায়ক ছিলেন। গায়ক, সুরকার, অভিনেতা বহুমাত্রিক এই শিল্পী তাঁর চার দশকের ক্যারিয়ারে অসমিয়া সংগীতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। ‘ইয়া আলি’ গানটির মাধ্যমে বলিউডেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তাঁর মৃত্যুতে শুধু শিল্প অঙ্গন নয়, রাজনৈতিক মহলেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা এক বিবৃতিতে বলেন, “জুবিনদার প্রয়াণ আসামের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন আমাদের গর্ব।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আজ রোববার [এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত] সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে (সরুসাজাই স্টেডিয়াম) শায়িত ছিল জুবিনের নিথর দেহ। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্য সরকার, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও লাখো সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মানুষের অশ্রু আর ফুলে ভরে উঠল তাঁর শেষ যাত্রাপথ। শেষকৃত্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার, জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সিঙ্গাপুরে এক স্কুবা ড্রাইভিং দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫২ বছর বয়সী জুবিনের। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর পুলিশ তাঁকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখলেও চিকিৎসকরা তাঁকে আর বাঁচাতে পারেননি।
নিজস্ব প্রতিবেদক 
















