
রংপুরের পীরগাছায় চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস খেয়ে একটি গ্রামের আট থেকে ১০ জন অসুস্থ হন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি হয়ে ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর কমলা বেগম (৬০) নামে একজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এর আগে গত আগস্ট মাসে পীরগাছা সদরের মাইটাল এলাকায় রোগাক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে রোগে আক্রান্ত হন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক (৪৫)। আক্রান্তের ছয় থেকে সাত দিনের মাথায় রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এমন রোগে পীরগাছার চারটি ইউনিয়নে আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু অ্যানথ্রাক্সের কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এতে গবাদি পশু থেকে এমন রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে গোটা উপজেলাজুড়ে।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ফেন্সি বেগম বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি সময় পাশের বাড়িতে একটি গরু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে জবাই করা হয়। পরে তাঁর স্বামী মাংস কাটাকাটি করেন। এ সময় তাঁর একটি আঙুল কেটে যায়। সকালে মাংস কাটাকাটির পর বিকেলে তাঁর স্বামীর প্রচণ্ড জ্বর আসে। পরদিন তাঁর হাতে ফুসকুড়ি ওঠে। আস্তে আস্তে সেগুলো ঘায়ের মতো ক্ষত হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি নিয়ে পীরগাছায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। মাসখানেক আগে কিছু গবাদি পশুর শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয় ও মারা যায়। ওই গবাদি পশুর মাংস কাটাকাটি ও রান্না করা থেকে অ্যানথ্রাক্সে রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনাগুলো পরীক্ষা করে গত সপ্তাহে জানিয়েছে, মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা রোববার বিকেলে সমকালকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানানো হয়েছিল। সেখানকার বিশেষজ্ঞ একটি দল শনিবার রংপুরে আসেন। রোববার তারা পীরগাছায় গেছেন। আক্রান্তদের সঙ্গে বলে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















