মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইংলিশ বয়ের বাঙ্গালীয়ানা মানসিকতা এবং অতি উৎসাহে কামরস ক্ষরণ – ওয়াজেদ জীম

গাইবান্ধার এক উপজেলায় একজন ছেলে আছে, ‘ইংলিশ বয়’ খ্যাত সেই ছেলে ইংরেজিতে কথা বলে ভিডিও বানায়, বেশ চমৎকার লাগে। সত্য বলতে ওর মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে আমি এখনও পারি না। মাঝে মধ্যে ওর ভিডিও দেখি।

কঠোর পরিশ্রম করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সত্যমিথ্যা মিশিয়ে নিজ ক্যাম্পাসে একটা ভিডিও বানালো। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া মাত্রই ব্যাপক সমালোচিত হলো। নানাজনের নানা মন্তব্য। তারপরেও ছেলেটাকে ভালো লাগতো। এদেশে কেউ ইংরেজি বললে তাকে আমরা সাধারণত এলিট ক্লাস বলে মনে করি কি না!

আজকে দেখি অনেক পেজে তাকে নিয়ে অনেক কথা লিখছে। কয়েকটা লেখা এড়িয়ে গেলেও কৌতুহলবশত একটা লেখা পড়ে জানতে পারলাম, সে নাকি ইংরেজিতে আযান দেয়ায় এলাকাবাসীর পিটনি খেয়েছে। ঘটনাটা কতটা সত্যি জানি না। তবে গত কয়েকমাসে বিশেষ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাবার পর সে যেসকল ভিডিও দিয়েছে সবগুলোতেই ওর আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। মুই কি হনুরে একটা ভাব দেখা যায়। ছেলেটা যে আচরণগত পরিবর্তন – এই পরিবর্তন ওর ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। একবার হাসির পাত্রে পরিণত হলে সেখানে থেকে উঠে আসা মুশকিল। বিশেষ করে নিজ বন্ধুবান্ধবদের কাছে। প্রথম বর্ষে সে যদি বন্ধু সংখ্যা বাড়াতে না পারে তবে আর কখনও বাড়ানো সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে যেকোন সরকারী বা গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাই-বাছাই করা হবে। দেখা যাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত সমালোচিত কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না। এমনটা হতেই হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকেই ছেলেটা আলোচিত হবার জন্য যা করছে তা প্রথম থেকেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । এখন সে আবারও সমালোচিত তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। ইংরেজিতে আযান দেবার ঘটনা সত্য হলে তার নিজের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যরাও বিপদের সম্মুখীন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সে বাড়াবাড়ি ধরণের কাজ করেছে। যা কখন কোথাও হয় না তা সে করার চেষ্টা করছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে, বাহ বাহ পাবার জন্য অথবা এলাকায় আলাদা কদর পাবার জন্য। কিন্তু হয়েছে হিতে বিপরীত। তাকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হচ্ছে তাতে কেউ ভুল ব্যাখা দিলে তার ভবিষ্যৎ পুরোপুরি হুমকির মুখে।

‘ইংলিশ বয়’ নিজেকে পরিবর্তন না করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহত্তর বিদ্যাপীঠে তার পড়াশোনা মুশকিল হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় টিকে থাকা হয়ে যাবে এক রকমের মানসিক যন্ত্রণাময়। এলাকার সিনিয়রদের যখন তার বন্ধু বান্ধবরা ওই ছেলেকে নিয়ে মশকরা করবে, এলাকার নামে দুই চারটা বাজে কথা বলবে তখন দেখা যাবে কেউ না কেউ একদিন রাগ করে তাকে ডেকে শাসন করতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরোও খারাপ হবে।

ইংলিশ বয়ের উচিত নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। প্রথম বছরটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু সময় দিয়ে বন্ধুবান্ধব তৈরি করে তারপর পরিস্থিতি বুঝে আলোচিত হবার পথ খোঁজা। সে টাকার মোহে, জনপ্রিয়তার ফাঁদে পড়ে নিজ ভবিষ্যত নষ্ট করছে।

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

ইংলিশ বয়ের বাঙ্গালীয়ানা মানসিকতা এবং অতি উৎসাহে কামরস ক্ষরণ – ওয়াজেদ জীম

প্রকাশের সময়: ০৪:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাইবান্ধার এক উপজেলায় একজন ছেলে আছে, ‘ইংলিশ বয়’ খ্যাত সেই ছেলে ইংরেজিতে কথা বলে ভিডিও বানায়, বেশ চমৎকার লাগে। সত্য বলতে ওর মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে আমি এখনও পারি না। মাঝে মধ্যে ওর ভিডিও দেখি।

কঠোর পরিশ্রম করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সত্যমিথ্যা মিশিয়ে নিজ ক্যাম্পাসে একটা ভিডিও বানালো। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া মাত্রই ব্যাপক সমালোচিত হলো। নানাজনের নানা মন্তব্য। তারপরেও ছেলেটাকে ভালো লাগতো। এদেশে কেউ ইংরেজি বললে তাকে আমরা সাধারণত এলিট ক্লাস বলে মনে করি কি না!

আজকে দেখি অনেক পেজে তাকে নিয়ে অনেক কথা লিখছে। কয়েকটা লেখা এড়িয়ে গেলেও কৌতুহলবশত একটা লেখা পড়ে জানতে পারলাম, সে নাকি ইংরেজিতে আযান দেয়ায় এলাকাবাসীর পিটনি খেয়েছে। ঘটনাটা কতটা সত্যি জানি না। তবে গত কয়েকমাসে বিশেষ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাবার পর সে যেসকল ভিডিও দিয়েছে সবগুলোতেই ওর আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। মুই কি হনুরে একটা ভাব দেখা যায়। ছেলেটা যে আচরণগত পরিবর্তন – এই পরিবর্তন ওর ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। একবার হাসির পাত্রে পরিণত হলে সেখানে থেকে উঠে আসা মুশকিল। বিশেষ করে নিজ বন্ধুবান্ধবদের কাছে। প্রথম বর্ষে সে যদি বন্ধু সংখ্যা বাড়াতে না পারে তবে আর কখনও বাড়ানো সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে যেকোন সরকারী বা গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাই-বাছাই করা হবে। দেখা যাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত সমালোচিত কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না। এমনটা হতেই হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকেই ছেলেটা আলোচিত হবার জন্য যা করছে তা প্রথম থেকেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । এখন সে আবারও সমালোচিত তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। ইংরেজিতে আযান দেবার ঘটনা সত্য হলে তার নিজের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যরাও বিপদের সম্মুখীন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সে বাড়াবাড়ি ধরণের কাজ করেছে। যা কখন কোথাও হয় না তা সে করার চেষ্টা করছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে, বাহ বাহ পাবার জন্য অথবা এলাকায় আলাদা কদর পাবার জন্য। কিন্তু হয়েছে হিতে বিপরীত। তাকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হচ্ছে তাতে কেউ ভুল ব্যাখা দিলে তার ভবিষ্যৎ পুরোপুরি হুমকির মুখে।

‘ইংলিশ বয়’ নিজেকে পরিবর্তন না করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহত্তর বিদ্যাপীঠে তার পড়াশোনা মুশকিল হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় টিকে থাকা হয়ে যাবে এক রকমের মানসিক যন্ত্রণাময়। এলাকার সিনিয়রদের যখন তার বন্ধু বান্ধবরা ওই ছেলেকে নিয়ে মশকরা করবে, এলাকার নামে দুই চারটা বাজে কথা বলবে তখন দেখা যাবে কেউ না কেউ একদিন রাগ করে তাকে ডেকে শাসন করতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরোও খারাপ হবে।

ইংলিশ বয়ের উচিত নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। প্রথম বছরটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু সময় দিয়ে বন্ধুবান্ধব তৈরি করে তারপর পরিস্থিতি বুঝে আলোচিত হবার পথ খোঁজা। সে টাকার মোহে, জনপ্রিয়তার ফাঁদে পড়ে নিজ ভবিষ্যত নষ্ট করছে।