মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। নগদে নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সফলভাবে সেটা করা সম্ভব হবে। এভাবে এটিকে আরও সক্ষম ও স্থিতিশীল হিসেবে গড়ে তোলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। মাস্টারকার্ড ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএমএবি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানই বড় হয়েছে। এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হলে আরও সক্ষম প্রতিষ্ঠান দরকার। এ জন্য নতুন বিনিয়োগ আনতে হবে। যে কারণে নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেননা নগদ পরিচালনার মতো সক্ষমতা পোস্ট অফিসের নেই। এখানে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নগদে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে। আগের মালিকদের কারণে ই-কেওয়াইসি-সংক্রান্ত অনিয়মের যে সমস্যাগুলো ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ভুয়া কিংবা অকার্যকর হিসাব বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি স্থিতিশীল ও সংশোধনীর মাধ্যমে পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। এই স্থিতিশীলতার জন্য এখানে প্রযুক্তি খাতের কৌশলগত বিনিয়োগকারী দরকার। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দরকার, যেমন বিকাশের মতো ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এভাবে নগদকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এটা সম্ভব।

বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে কিউআর কোডে পরিশোধ ব্যবস্থা যেন বাধ্যতামূলক করা হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিনি একটি ডিও লেটার দিয়েছেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ লেনদেন কমানোর জন্য আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তবে আগের সরকার খুশি মতো তাদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে একটা পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছিল। সরকার পতনের পর সেই কোম্পানি নাই হয়ে গেছে। নতুন করে এখন আবার বিলগেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। মোজোলুপ বলে একটা সিস্টেম আছে। তাদের এখানে যুক্ত করে আন্তঃলেনদেন সেবা চালুর চেষ্টা চলছে। আগামী সেপ্টম্বর মাসে তারা আসবে। তিনি জানান, ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কাজ হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংও পরিচালিত হবে সম্পূর্ণ ডিজিটালি। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই, যেখানে প্রতিটি পরিবারের একটি ঋণের ইতিহাস থাকবে। এ জন্য বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বেসরকারি খাতের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ক্রেডিট ব্যুরোর অনুমোদন দেওয়া হবে। এই ক্রেডিট ব্যুরোতে ছোট ছোট ঋণের জন্য টেলকো, এমএফএস, ব্যাংক– সব জায়গার সমন্বিত ডেটাবেজ থাকবে।

সম্মেলনে দুটি সেশনে আলোচনা হয়। প্রথম সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বক্তব্য দেন আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালসহ বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজন।

দ্বিতীয় সেশনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ক্যাশলেস ইকোনমি যেন ইনকামলেস না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন দরকার আছে কিনা দেখতে হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি খাতে আলাদা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যেন ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি যুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, দ্য লিগ্যাল সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা আনীতা গাজী রহমান।

উদ্বোধনী সেশনে ‘ক্যাশলেস অর্থনীতি গঠনে ফিনটেকের ভূমিকা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শারাফাত উল্লাহ খান, বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহমেদ প্রমুখ।

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে

প্রকাশের সময়: ০৪:২৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। নগদে নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সফলভাবে সেটা করা সম্ভব হবে। এভাবে এটিকে আরও সক্ষম ও স্থিতিশীল হিসেবে গড়ে তোলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। মাস্টারকার্ড ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএমএবি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানই বড় হয়েছে। এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হলে আরও সক্ষম প্রতিষ্ঠান দরকার। এ জন্য নতুন বিনিয়োগ আনতে হবে। যে কারণে নগদকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেননা নগদ পরিচালনার মতো সক্ষমতা পোস্ট অফিসের নেই। এখানে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নগদে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে। আগের মালিকদের কারণে ই-কেওয়াইসি-সংক্রান্ত অনিয়মের যে সমস্যাগুলো ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ভুয়া কিংবা অকার্যকর হিসাব বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি স্থিতিশীল ও সংশোধনীর মাধ্যমে পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। এই স্থিতিশীলতার জন্য এখানে প্রযুক্তি খাতের কৌশলগত বিনিয়োগকারী দরকার। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দরকার, যেমন বিকাশের মতো ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এভাবে নগদকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এটা সম্ভব।

বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে কিউআর কোডে পরিশোধ ব্যবস্থা যেন বাধ্যতামূলক করা হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তিনি একটি ডিও লেটার দিয়েছেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ লেনদেন কমানোর জন্য আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তবে আগের সরকার খুশি মতো তাদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে একটা পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছিল। সরকার পতনের পর সেই কোম্পানি নাই হয়ে গেছে। নতুন করে এখন আবার বিলগেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। মোজোলুপ বলে একটা সিস্টেম আছে। তাদের এখানে যুক্ত করে আন্তঃলেনদেন সেবা চালুর চেষ্টা চলছে। আগামী সেপ্টম্বর মাসে তারা আসবে। তিনি জানান, ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কাজ হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংও পরিচালিত হবে সম্পূর্ণ ডিজিটালি। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই, যেখানে প্রতিটি পরিবারের একটি ঋণের ইতিহাস থাকবে। এ জন্য বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বেসরকারি খাতের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ক্রেডিট ব্যুরোর অনুমোদন দেওয়া হবে। এই ক্রেডিট ব্যুরোতে ছোট ছোট ঋণের জন্য টেলকো, এমএফএস, ব্যাংক– সব জায়গার সমন্বিত ডেটাবেজ থাকবে।

সম্মেলনে দুটি সেশনে আলোচনা হয়। প্রথম সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বক্তব্য দেন আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালসহ বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজন।

দ্বিতীয় সেশনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ক্যাশলেস ইকোনমি যেন ইনকামলেস না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন দরকার আছে কিনা দেখতে হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি খাতে আলাদা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যেন ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি যুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, দ্য লিগ্যাল সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা আনীতা গাজী রহমান।

উদ্বোধনী সেশনে ‘ক্যাশলেস অর্থনীতি গঠনে ফিনটেকের ভূমিকা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শারাফাত উল্লাহ খান, বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহমেদ প্রমুখ।