বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রমত্তা তিস্তার বুকে চালু হলো মাওলানা ভাসানী সেতু

উত্তরবঙ্গের সর্ববৃৎ সেতু হিসেবে সর্বসাধারণের জন্য চালু করা হলো প্রমত্তা তিস্তার বুকে নির্মিত মাওলানা ভাসানী সেতু দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাই খুলেছে উত্তর- দক্ষিণের দুই জনপদের স্বপ্নের দুয়ার।

আজ ২০ আগষ্ট বুধবার দুপুর ১ টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই সেতুর দুই প্রান্তে ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বোধনের সময় দুপুর ১২ টায় দেওয়া থাকলেও ভিড়ের চাপে সাড়ে এগারোটায় মূল সেতুতে উঠে পড়ে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ।

বহুল প্রত্যাশীত এই সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জী উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে । ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। যা এলজিইডির ইতিহাসে দীর্ঘতম সেতুর মাইলফলক।

এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নামে সেতুটির নাম করণ করা হয়েছে। এই সেতুর কারণে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার লাখো মানুষের ভাগ্যে বদলে যাবে।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘতম সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সাজসাজ রবে মেতে উঠেছে দুই জেলার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, মাওলানা ভাসানী সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটলে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ চরাঞ্চলবাসীর কষ্ট লাঘব হবে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ ঘুচিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দুরত্ব কমে আসবে।


‎স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১২ সালে তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় সেতু হিসেবে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় করে সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাজ আরম্ভ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তবে নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে পুরোদমে নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুটির ১৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও ৮২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৭৫ কোটি টাকা। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেন চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেতুটি নির্মাণে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার বসানো হয়েছে। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতুর উভয় পাশে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে এলজিইডি। সেতুর এই সড়ক সংযোগের মাধ্যমে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার যুক্ত হচ্ছে মহাসড়কের সঙ্গে। এতে সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী অঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জনপ্রিয়

‘অপমানবোধ’ করছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, ভোটের পরে সরে যেতে চান : রয়টার্সের খবর

প্রমত্তা তিস্তার বুকে চালু হলো মাওলানা ভাসানী সেতু

প্রকাশের সময়: ০৯:১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

উত্তরবঙ্গের সর্ববৃৎ সেতু হিসেবে সর্বসাধারণের জন্য চালু করা হলো প্রমত্তা তিস্তার বুকে নির্মিত মাওলানা ভাসানী সেতু দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাই খুলেছে উত্তর- দক্ষিণের দুই জনপদের স্বপ্নের দুয়ার।

আজ ২০ আগষ্ট বুধবার দুপুর ১ টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই সেতুর দুই প্রান্তে ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বোধনের সময় দুপুর ১২ টায় দেওয়া থাকলেও ভিড়ের চাপে সাড়ে এগারোটায় মূল সেতুতে উঠে পড়ে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ।

বহুল প্রত্যাশীত এই সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জী উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে । ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। যা এলজিইডির ইতিহাসে দীর্ঘতম সেতুর মাইলফলক।

এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নামে সেতুটির নাম করণ করা হয়েছে। এই সেতুর কারণে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার লাখো মানুষের ভাগ্যে বদলে যাবে।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘতম সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সাজসাজ রবে মেতে উঠেছে দুই জেলার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, মাওলানা ভাসানী সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটলে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ চরাঞ্চলবাসীর কষ্ট লাঘব হবে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ ঘুচিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দুরত্ব কমে আসবে।


‎স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১২ সালে তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় সেতু হিসেবে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় করে সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাজ আরম্ভ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তবে নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে পুরোদমে নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুটির ১৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও ৮২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৭৫ কোটি টাকা। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেন চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেতুটি নির্মাণে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার বসানো হয়েছে। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতুর উভয় পাশে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে এলজিইডি। সেতুর এই সড়ক সংযোগের মাধ্যমে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার যুক্ত হচ্ছে মহাসড়কের সঙ্গে। এতে সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী অঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।