মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ : আওয়ামী লীগের জীবনীশক্তি এবং ক্ষমতাসীনদের ভয়

আজ ১৫ আগস্টকে ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ এ যে বাড়তি নিরাপত্তা, এই নিরাপত্তাই প্রতিবছর একটু একটু করে গ্রহণযোগ্য আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনবে। আগস্ট মাস জুড়ে ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে কারো কারো যে ভয় সেই ভয়ই আওয়ামী লীগের জীবনীশক্তি।

ধানমন্ডি ৩২ – শুধুই একটা বাড়ি। তবে সেই বাড়িতেই আজকের দিনে সপরিবারে হত্যা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতি বছর এই দিনে তার দলীয় লোকজন অথবা স্বাধীনচেতা যেকেউ তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই পারে। পারে সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বাড়িটা দেখতে। কল্পনা করতে পারে ১৯৭৫ সালের সেই নির্মম ভোরের কথা। কিন্তু আজকে বাড়তি নিরাপত্তার যে প্রসঙ্গ এসেছে তাতে দলীয় লোকজনের থেকে উৎসুক জনতার সংখ্যা বেশি হবে এই বাড়ির সামনে। শুধু আজকে না, সবসময়। যারা আজকে যাবে না, তারা কাল যাবে, কাল না গেলে পরশু। না হয় তারপর। কিন্তু তারা যাবেই। এমনকি যদি বাড়িটি একবারে ভেঙে ফেলে নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয় তবুও প্রতিবছর আজকের এই অথবা এই মাসে কেউ না কেউ যাবেই এবং সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাববেন, একসময় এখানেই ছিলো ধানমন্ডি ৩২ বাড়ি, যা জীবিত।

জনগণ সবসময় উৎসুক হয়। তাঁরা অতি উৎসাহে জীবনকে বাজি রাখে, কিছু না বুঝে কাউকে না দেখেও শুধুমাত্র তার কথাতেই জীবন দেয়। তাঁরা যে কাউকে তাড়িয়ে দিতে পারে, আবার তাঁরাই তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে ফেরত আনতে পারে। জনগণ অনেক কিছুই পারে। তবে যা পারে, তাতে অন্যদের লাভ হয় বেশি। জনগণ নিজেদের জন্য কিছু করতে পারে না। যেমন জনগণ পারে না, হাঁসের মাংস খেতে ভোররাতে কোন পাঁচ তারকা হোটেলে যেতে অথবা চার-পাঁচশ গাড়ি নিয়া এলাকায় শোডাউন করতে অথবা কারো কাছে থেকে ডোনেশনবাবদ গাড়ি কিংবা আইফোন নিতে, পাথর মেরে কাউকে হত্যা করতে। এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দলীয় কাজ। জনগণ শুধুমাত্র উৎসুক হয়। তারা জমি-জমা নিয়া ভাই-বোনদের মাঝে ক্যাচাল করে। ইউনিয়ন পরিষদে‌ যায়। কোর্ট কাছারিতে ঘোরে। কোর্টে কোথায় ভীড় দেখলেই নিজের কেস বাদ দিয়া দৌড়ে যায়। এরওর কাছে জানতে চায় ঘটনা কি? দেখা যায় উপস্থিত শতকরা নব্বইজন জানে না ঘটনা কি। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে একটা বিড়াল বিদ্যুতের খুঁটির ওপর কাক ধরে বসে আছে। এই দেশের জনগণের উৎসাহ দমানোর নয়। তারা সমুদ্রে ১০ নাম্বার বিপদ সংকেত শুনেও সমুদ্র পাড়ে ঝড় দেখতে চলে যায়।

প্রতিবছর ১৫ আগস্ট আসবে। ক্ষমতাসীনরা ধানমন্ডি ৩২ এ নিরাপত্তা বাড়াবে। দেখা যাবে দলীয় কেউ না গেলেও উৎসুক জনতা অন্ততঃ যাবে ধানমন্ডি ৩২ দেখতে। ভাঙ্গা বাড়ি দেখবে। ৫ আগস্ট ২০২৪ এ বাড়িটা ভাঙ্গার সময় যে জনতা ছিলো সেও হয়তো মনে মনে বলবে কাজটা ঠিক হয় নাই। আওয়ামী লীগের এই এক বিশাল সফলতা। এই যে সময়ে সময়ে জনতার মনে একটা অনুশোচনার সৃষ্টি হবে এটাই আওয়ামী লীগের জীবনে শক্তি। সেদিক বিবেচনায় আজকে ধানমন্ডি ৩২ এ নিরাপত্তা বাড়ানোয় পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সহযোগিতাই করছে ক্ষমতাসীনরা।

লেখা : ওয়াজেদ জীম

১৫ আগস্ট ২০২৫

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ : আওয়ামী লীগের জীবনীশক্তি এবং ক্ষমতাসীনদের ভয়

প্রকাশের সময়: ০৮:৫৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

আজ ১৫ আগস্টকে ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ এ যে বাড়তি নিরাপত্তা, এই নিরাপত্তাই প্রতিবছর একটু একটু করে গ্রহণযোগ্য আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনবে। আগস্ট মাস জুড়ে ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে কারো কারো যে ভয় সেই ভয়ই আওয়ামী লীগের জীবনীশক্তি।

ধানমন্ডি ৩২ – শুধুই একটা বাড়ি। তবে সেই বাড়িতেই আজকের দিনে সপরিবারে হত্যা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতি বছর এই দিনে তার দলীয় লোকজন অথবা স্বাধীনচেতা যেকেউ তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই পারে। পারে সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বাড়িটা দেখতে। কল্পনা করতে পারে ১৯৭৫ সালের সেই নির্মম ভোরের কথা। কিন্তু আজকে বাড়তি নিরাপত্তার যে প্রসঙ্গ এসেছে তাতে দলীয় লোকজনের থেকে উৎসুক জনতার সংখ্যা বেশি হবে এই বাড়ির সামনে। শুধু আজকে না, সবসময়। যারা আজকে যাবে না, তারা কাল যাবে, কাল না গেলে পরশু। না হয় তারপর। কিন্তু তারা যাবেই। এমনকি যদি বাড়িটি একবারে ভেঙে ফেলে নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয় তবুও প্রতিবছর আজকের এই অথবা এই মাসে কেউ না কেউ যাবেই এবং সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাববেন, একসময় এখানেই ছিলো ধানমন্ডি ৩২ বাড়ি, যা জীবিত।

জনগণ সবসময় উৎসুক হয়। তাঁরা অতি উৎসাহে জীবনকে বাজি রাখে, কিছু না বুঝে কাউকে না দেখেও শুধুমাত্র তার কথাতেই জীবন দেয়। তাঁরা যে কাউকে তাড়িয়ে দিতে পারে, আবার তাঁরাই তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে ফেরত আনতে পারে। জনগণ অনেক কিছুই পারে। তবে যা পারে, তাতে অন্যদের লাভ হয় বেশি। জনগণ নিজেদের জন্য কিছু করতে পারে না। যেমন জনগণ পারে না, হাঁসের মাংস খেতে ভোররাতে কোন পাঁচ তারকা হোটেলে যেতে অথবা চার-পাঁচশ গাড়ি নিয়া এলাকায় শোডাউন করতে অথবা কারো কাছে থেকে ডোনেশনবাবদ গাড়ি কিংবা আইফোন নিতে, পাথর মেরে কাউকে হত্যা করতে। এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দলীয় কাজ। জনগণ শুধুমাত্র উৎসুক হয়। তারা জমি-জমা নিয়া ভাই-বোনদের মাঝে ক্যাচাল করে। ইউনিয়ন পরিষদে‌ যায়। কোর্ট কাছারিতে ঘোরে। কোর্টে কোথায় ভীড় দেখলেই নিজের কেস বাদ দিয়া দৌড়ে যায়। এরওর কাছে জানতে চায় ঘটনা কি? দেখা যায় উপস্থিত শতকরা নব্বইজন জানে না ঘটনা কি। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে একটা বিড়াল বিদ্যুতের খুঁটির ওপর কাক ধরে বসে আছে। এই দেশের জনগণের উৎসাহ দমানোর নয়। তারা সমুদ্রে ১০ নাম্বার বিপদ সংকেত শুনেও সমুদ্র পাড়ে ঝড় দেখতে চলে যায়।

প্রতিবছর ১৫ আগস্ট আসবে। ক্ষমতাসীনরা ধানমন্ডি ৩২ এ নিরাপত্তা বাড়াবে। দেখা যাবে দলীয় কেউ না গেলেও উৎসুক জনতা অন্ততঃ যাবে ধানমন্ডি ৩২ দেখতে। ভাঙ্গা বাড়ি দেখবে। ৫ আগস্ট ২০২৪ এ বাড়িটা ভাঙ্গার সময় যে জনতা ছিলো সেও হয়তো মনে মনে বলবে কাজটা ঠিক হয় নাই। আওয়ামী লীগের এই এক বিশাল সফলতা। এই যে সময়ে সময়ে জনতার মনে একটা অনুশোচনার সৃষ্টি হবে এটাই আওয়ামী লীগের জীবনে শক্তি। সেদিক বিবেচনায় আজকে ধানমন্ডি ৩২ এ নিরাপত্তা বাড়ানোয় পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সহযোগিতাই করছে ক্ষমতাসীনরা।

লেখা : ওয়াজেদ জীম

১৫ আগস্ট ২০২৫