মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুট এবং দায়িত্বশীলদের মতামত (স্যাটায়ারিক)


বঙ্গদেশের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ দেশি—বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে কিছুদিন আগেও বেশ জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ স্থান ছিলো। ধলাই নদী এবং পিয়াইন নদীর মিলন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় ছোট অসংখ্য সাদা পাথর যেকারোও মন কেড়ে নিতো। বছরের পর বছর এই স্থান ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় ছিলো। ২০২৪ সালের জুলাই—আগস্টের আন্দোলনের পর সম্প্রতি ২০২৫ সালের জুলাই—আগস্ট মাসে কিছু ভ্রমণপিপাসু সেখানে ঘুরতে গিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় কিছু লুটেরা সেখানকার সাদা পাথর নৌকায় ভরে লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারটা জানাজানি হলে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা সত্যরা খুঁজে পান। জানা যায়, বিগত কয়েকমাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে। সাদা পাথরের জন্য বিখ্যাত এলাকায় এখন পাথর বিলুপ্তির পথে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া বিপ্লব অথবা দ্বিতীয় স্বাধীনতা আমাদের সকলের জন্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে গেছে। দেশের আইন ব্যবস্থা তলানিতে পৌঁছে গেলেও লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং খুন—ধর্ষণ এখন শীর্ষে পৌঁছে গেছে। তার মাঝে পাথর লুট হওয়ার ঘটনায় ভ্রমণ পিপাসুদের পাশাপাশি দেশের কিছু শ্রেণীর মানুষের কাছে পীড়াদায়ক। এহেন ঘটনায় সরকার এবং প্রশাসনসহ সকল দায়িত্বশীলরা উদাসীন। এই নিয়ে ‘চেতনা টিভি’র নিজস্ব প্রতিবেদক ‘খালেদ মিয়া’ প্রধান উপদেষ্টা, তিনজন উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান এবং ছাত্র প্রতিনিধির একান্ত মতামত গ্রহণ করেছেন।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : হায় আল্লাহ, হায় আল্লাহ খালেদ। আল্লাহ যদি আমায় একটু ক্ষমতা দিতো, আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তবে আমি সিলেটের সব সাদা পাথর ফিরিয়ে নিয়ে আসতাম। ২৬ লক্ষ ভারতীয়, যারা চলে যাবার সময় বিশ কেজি লাগেজ ভর্তি করে পাথর নিয়ে গেছে। আমি নিজে এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে সবার লাগেজ চেক করতাম। পেটের এক্স—রে করতাম। যারা পাথর গিলে খেয়েছিলো তাদের মলদ্বারে আগুল দিয়ে হাগু বের করে হলেও পাথর আলাদা করতাম। তুমি বিশ্বাস করো খালেদ, আমি করতাম। আমি নিজেই করতাম। কিন্তু আল্লাহ আমায় সেই ক্ষমতা দেননি। তোমরা বলতেই পারো খালেদ — এই অধিকার তোমাদের আছে। তোমরা বলতেই পারো, আপনি তো আইন উপদেষ্টা, এই ক্ষমতা তো আপনার আছেই। আপনি চাইলেই এই বিষয়ে আইন পাশ করতে পারেন। কিন্তু তোমরা যা জানো না, তা হলো খালেদ আমি একজন উপদেষ্টা। সামন্য একজন উপদেষ্টা। আমার কাজ উপদেশ দেয়া, প্রোটোকল নেয়া, মিন্টু রোডের বাড়িতে থাকা। এছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। আমি সপ্তাহে একদিন লোকাল এসি বাসে উঠি খালেদ। সেদিন কোন প্রটোকল থাকে না আমার। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আমার সেই বাস চলে। আমি লোকাল এসি বাসে উঠে, ঈদগাহ ময়দানে ঘুরে ঘুরে সবার কষ্ট বুঝি আর মনে মনে বলি, আল্লাহ আপনি যদি আমায় একটু, শুধু একটু ক্ষমতা দিতেন আমি সব পাথর উদ্ধার করতাম। নিরাপত্তার স্বার্থে আমি পাথরগুলো আমার বাড়িতে এনে রাখতাম। বিশ্বাস করো খালেদ আমি পারতাম। আমি অবশ্যই সকল পাথর ফিরিয়ে আনতে পারতাম।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : আমি আসলে এই মূহুর্তে সেন্টমার্টিন নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। আমার স্বপনে—শয়নে, ধ্যানে—জ্ঞানে শুধুই সেন্টমার্টিন। এইবার সেন্টমার্টিন কবে থেকে খুলবে, কতজন যাবে, সেখানে কি কি করবে, কি কি নিয়ে যাওয়া যাবে, কি কি নিয়ে যাওয়া যাবে না, লাঞ্চ ভাড়া কত হবে, হোটেল ভাড়া কত হবে, কমিশন কত থাকবে — এই সব নিয়ে মিটিং পর মিটিং করছি। হ্যা, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে পাথর চুরির। আমি শুনেছি। কিন্তু দেখেন সেন্টমার্টিন রক্ষা করা আমাদের কাছে বেশি জরুরি। সেন্টমার্টিন আমাদের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সাগরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। এমন সুন্দর দ্বীপ বিশ্বে খুব কম আছে। আমাদের সেন্টমার্টিন বাঁচাতে হবে। সেন্টমার্টিন যদি রক্ষাই না করতে পারি তবে পরিবেশ রক্ষা করবো কিভাবে? আপনি হয়তো জানেন না বাংলাদেশের পরিবেশ মাত্রই সেন্টমার্টিন। এই যে দেখেন, বান্দরবান, সিলেট পাহাড় কেটে কেটে রিসোর্ট বানানো হচ্ছে। এতে কিন্তু পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ কি জানেন? কাঁটা পাহাড় চাইলেই মাটি দিয়ে ভরাট করা যাবে। এতে কোন সমস্যা নেই। সাদা পাথরের কথা বলছেন তো? লুট করা খারাপ। তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। আমি এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে কথা বলবো। কিন্তু পাথর লুট হচ্ছে জন্য বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করে সেখানে রাখা হবে। পাথর লুট হওয়া নিয়ে এত কেন আলোচনা হচ্ছে বুঝছি না। সবার সেন্টমার্টিন নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কারণ একবার সেন্টমার্টিন ডুবে গেলে আর কি সম্ভব সাগরের মাঝে অমন সুন্দর দ্বীপ তৈরি করা? আপনি বলুন। আমরা ভাবছি আর কাউকে সেন্টমার্টিন যেতে দিবো না। ওখানকার বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনবো। ওখানে একটা সেনা ক্যাম্প করবো, যাতে চুরি করেও কেউ যেতে না পারে। যেহেতু একসময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণশিল্পের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো এবং আয় হতো, তাই ভাবছি বিদেশি কোন দেশের কাছে সেন্টমার্টিন ভাড়া দিবো। মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে কথা হচ্ছে। বছরে তারা যদি ৫ বিলিয়ন ডলার ভাড়া বাবদ দেয় তবে আমাদের ভাড়া দিতে কোন অসুবিধা হবে না। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেন্টমার্টিন ভাড়া দিলে আমাদের দুইদিক থেকেই লাভ। সেন্টমার্টিন রক্ষা পেলো, পাশাপাশি দেশের আয় হলো। আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে। আজ আর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমার আরেকটা একটা মিটিং আছে। আপনি যাবার সময় কষ্ট করে আমার পিএসকে একটু পাঠিয়ে দিবেন ভিতরে। এসির রিমুটটা খুঁজে পাচ্ছি না। যে গরম পড়েছে। এসি ছাড়া থাকা যায়?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : খাইছো নি? কি খাইছো? পরিবারের সবাই ভালো? আরে তোমরা শুধু অন্যের সমস্যা দেখো, অন্যের সমস্যা নিয়েই কথা বলো। নিজেদের সমস্যাগুলো কি দেখার সময় পাও? কখনও কি বউয়ের সাথে আলোচনা করো তার কি লাগবে, কি না লাগবে? ঈদে বোনাস পাও ঠিকঠাক? সপ্তাহে কয়দি ছুটি? আমার চিন্তা হয় তোমাদের নিয়া। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করো আর নিজের বাড়ির সংবাদ কি তাই জানো না! এটা কি জীবন! আহা রে! আরে পাথর লুট হচ্ছে জানি তো। পাথর লুট হচ্ছে, সোনা তো লুট হচ্ছে না? এত চিন্তার কি আছে? তারপরেও কথা বলছি সেনাপ্রধান আর পুলিশ প্রধানের সাথে। ওই এলাকার ওসিকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন বসায় রাখছি। আর কি চাও? পাথরের খোঁজখবর লাগাইছি। দেখি কি জানা যায়? একবার লুট হলে তা তো আর উদ্ধার করা যায় না? বোঝ নাই? তবে কলকাতায় পলাতক আওয়ামীলীগের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এই নিয়া তোমরা চিন্তা করিও না। যাও যাও বাড়িত যাও। বৌয়ের হাতে রান্না খাও। আর শোনো, যাবার সময় মুরগি কিনে নিয়া যাইও। টাকা আছে? নিবা ৫০০ টাকা?

প্রধান উপদেষ্টা : আমি

পদত্যাগ করবো। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বদলের প্রধানদের আজকে রাতে প্রীতিভোজের দাওয়াত দিয়েছি। কয়েকজন সাংবাদিকও থাকবে। আপনিও আসবেন। আজকে আপনাদের ‘থ্রি বিফ’ খাওয়াবো। বিফ কারি, বিফ রোস্ট, বিফ বার্গার।

সেনাবাহিনী প্রধান : এটি একটি রাজনৈতিক মুভমেন্ট। আমাদের এইসময় নিরব থাকতে হবে। আমরা কাউকে প্রমোট করার জন্য কিছু করবো না। দেশের জন্য আমরা প্রাণ দিবো। দেশের এক মুঠো মাটি কাউকে দিবো না।

ছাত্র প্রতিনিধি ও নতুন দলের একজন সমন্বয়ক :এসব নিয়ে যারা বেশি বেশি কথা বলছে তারা স্বৈরাচারের দোসর। তারা চায় স্বৈরাচার ফিরে আসুক। দেশের খারাপ দিকেগুলো নিয়েই তারা শুধু কথা বলতে পারে। কত ভালো কিছু হচ্ছে। কত মানুষ কোটিপতি হচ্ছে। এসব নিয়ে তারা চুপ। কিন্তু পাথরের বেলায় তারা চিৎকার করে কথা বলছে। আরে ভাই পাথর দিয়া কি হবে? স্বৈরাচার ফেরত আসলে ওই পাথর আপনার—আমার মাথায় মারবে। তার চেয়ে লুট হয়ে গেলে ভালো না? আরে সিরিয়াসলি নিয়েন না, মজা করলাম। যারা এসব করছে আমি তাদের বলতে চাই, সবার বাড়িতে ‘মার্চ’ করা হবে। ‘মার্চ ফর রিকোভার সাদা পাথর’। পাশাপশি আমি হুশিয়ারি দিতে চাই — ‘আর কোন স্বৈরাচারের ঠাঁই এই বাংলায় হবে না।’ পাথর লুট করে যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, যারা দিল্লিতে পাথর পাঠায় — তাদের ছাত্রসমাজ প্রতিহত করবেই। শাহবাগ, রাজুর তলা আমরা আচল করে দিবো। আমার বন্ধু শপাঁচেক গাড়ি নিয়ে যাবে পাথর লুট দেখতে। আরেক বন্ধু সমুদ্র বন্দরের দায়িত্বে আছে। তাকে টপকায় পাথর নিয়া যাবে, এমন সাহস কার আছে? পাথর নিয়ে আর কোন মব সহ্য করা হবে না। এক, দুই, তিন, চার — পাথরগুলোকে কে লাগায়?

বিশেষ দ্রষ্টব্য : পুরো ঘটনাটি কাল্পনিক। গল্পে বা ঘটনার বিবরণটি বাস্তব নয়, লেখকের কল্পনাপ্রসূত। গল্পে বর্ণিত চরিত্র বা ঘটনার সাথে বাস্তব জীবনের কোন ঘটনার আংশিক অথবা পুরোপুরি মিল পাওয়া গেলেও, তা কাকতালীয় ঘটনা। যার জন্য লেখক দায়ী নয়।

লেখা : ওয়াজেদ জীম
১১ আগস্ট ২০২৫

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুট এবং দায়িত্বশীলদের মতামত (স্যাটায়ারিক)

প্রকাশের সময়: ০৬:১১:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫


বঙ্গদেশের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ দেশি—বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে কিছুদিন আগেও বেশ জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ স্থান ছিলো। ধলাই নদী এবং পিয়াইন নদীর মিলন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় ছোট অসংখ্য সাদা পাথর যেকারোও মন কেড়ে নিতো। বছরের পর বছর এই স্থান ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় ছিলো। ২০২৪ সালের জুলাই—আগস্টের আন্দোলনের পর সম্প্রতি ২০২৫ সালের জুলাই—আগস্ট মাসে কিছু ভ্রমণপিপাসু সেখানে ঘুরতে গিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় কিছু লুটেরা সেখানকার সাদা পাথর নৌকায় ভরে লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারটা জানাজানি হলে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা সত্যরা খুঁজে পান। জানা যায়, বিগত কয়েকমাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে। সাদা পাথরের জন্য বিখ্যাত এলাকায় এখন পাথর বিলুপ্তির পথে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া বিপ্লব অথবা দ্বিতীয় স্বাধীনতা আমাদের সকলের জন্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে গেছে। দেশের আইন ব্যবস্থা তলানিতে পৌঁছে গেলেও লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং খুন—ধর্ষণ এখন শীর্ষে পৌঁছে গেছে। তার মাঝে পাথর লুট হওয়ার ঘটনায় ভ্রমণ পিপাসুদের পাশাপাশি দেশের কিছু শ্রেণীর মানুষের কাছে পীড়াদায়ক। এহেন ঘটনায় সরকার এবং প্রশাসনসহ সকল দায়িত্বশীলরা উদাসীন। এই নিয়ে ‘চেতনা টিভি’র নিজস্ব প্রতিবেদক ‘খালেদ মিয়া’ প্রধান উপদেষ্টা, তিনজন উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান এবং ছাত্র প্রতিনিধির একান্ত মতামত গ্রহণ করেছেন।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : হায় আল্লাহ, হায় আল্লাহ খালেদ। আল্লাহ যদি আমায় একটু ক্ষমতা দিতো, আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তবে আমি সিলেটের সব সাদা পাথর ফিরিয়ে নিয়ে আসতাম। ২৬ লক্ষ ভারতীয়, যারা চলে যাবার সময় বিশ কেজি লাগেজ ভর্তি করে পাথর নিয়ে গেছে। আমি নিজে এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে সবার লাগেজ চেক করতাম। পেটের এক্স—রে করতাম। যারা পাথর গিলে খেয়েছিলো তাদের মলদ্বারে আগুল দিয়ে হাগু বের করে হলেও পাথর আলাদা করতাম। তুমি বিশ্বাস করো খালেদ, আমি করতাম। আমি নিজেই করতাম। কিন্তু আল্লাহ আমায় সেই ক্ষমতা দেননি। তোমরা বলতেই পারো খালেদ — এই অধিকার তোমাদের আছে। তোমরা বলতেই পারো, আপনি তো আইন উপদেষ্টা, এই ক্ষমতা তো আপনার আছেই। আপনি চাইলেই এই বিষয়ে আইন পাশ করতে পারেন। কিন্তু তোমরা যা জানো না, তা হলো খালেদ আমি একজন উপদেষ্টা। সামন্য একজন উপদেষ্টা। আমার কাজ উপদেশ দেয়া, প্রোটোকল নেয়া, মিন্টু রোডের বাড়িতে থাকা। এছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। আমি সপ্তাহে একদিন লোকাল এসি বাসে উঠি খালেদ। সেদিন কোন প্রটোকল থাকে না আমার। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আমার সেই বাস চলে। আমি লোকাল এসি বাসে উঠে, ঈদগাহ ময়দানে ঘুরে ঘুরে সবার কষ্ট বুঝি আর মনে মনে বলি, আল্লাহ আপনি যদি আমায় একটু, শুধু একটু ক্ষমতা দিতেন আমি সব পাথর উদ্ধার করতাম। নিরাপত্তার স্বার্থে আমি পাথরগুলো আমার বাড়িতে এনে রাখতাম। বিশ্বাস করো খালেদ আমি পারতাম। আমি অবশ্যই সকল পাথর ফিরিয়ে আনতে পারতাম।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : আমি আসলে এই মূহুর্তে সেন্টমার্টিন নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। আমার স্বপনে—শয়নে, ধ্যানে—জ্ঞানে শুধুই সেন্টমার্টিন। এইবার সেন্টমার্টিন কবে থেকে খুলবে, কতজন যাবে, সেখানে কি কি করবে, কি কি নিয়ে যাওয়া যাবে, কি কি নিয়ে যাওয়া যাবে না, লাঞ্চ ভাড়া কত হবে, হোটেল ভাড়া কত হবে, কমিশন কত থাকবে — এই সব নিয়ে মিটিং পর মিটিং করছি। হ্যা, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে পাথর চুরির। আমি শুনেছি। কিন্তু দেখেন সেন্টমার্টিন রক্ষা করা আমাদের কাছে বেশি জরুরি। সেন্টমার্টিন আমাদের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সাগরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। এমন সুন্দর দ্বীপ বিশ্বে খুব কম আছে। আমাদের সেন্টমার্টিন বাঁচাতে হবে। সেন্টমার্টিন যদি রক্ষাই না করতে পারি তবে পরিবেশ রক্ষা করবো কিভাবে? আপনি হয়তো জানেন না বাংলাদেশের পরিবেশ মাত্রই সেন্টমার্টিন। এই যে দেখেন, বান্দরবান, সিলেট পাহাড় কেটে কেটে রিসোর্ট বানানো হচ্ছে। এতে কিন্তু পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ কি জানেন? কাঁটা পাহাড় চাইলেই মাটি দিয়ে ভরাট করা যাবে। এতে কোন সমস্যা নেই। সাদা পাথরের কথা বলছেন তো? লুট করা খারাপ। তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। আমি এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে কথা বলবো। কিন্তু পাথর লুট হচ্ছে জন্য বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করে সেখানে রাখা হবে। পাথর লুট হওয়া নিয়ে এত কেন আলোচনা হচ্ছে বুঝছি না। সবার সেন্টমার্টিন নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কারণ একবার সেন্টমার্টিন ডুবে গেলে আর কি সম্ভব সাগরের মাঝে অমন সুন্দর দ্বীপ তৈরি করা? আপনি বলুন। আমরা ভাবছি আর কাউকে সেন্টমার্টিন যেতে দিবো না। ওখানকার বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনবো। ওখানে একটা সেনা ক্যাম্প করবো, যাতে চুরি করেও কেউ যেতে না পারে। যেহেতু একসময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণশিল্পের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো এবং আয় হতো, তাই ভাবছি বিদেশি কোন দেশের কাছে সেন্টমার্টিন ভাড়া দিবো। মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে কথা হচ্ছে। বছরে তারা যদি ৫ বিলিয়ন ডলার ভাড়া বাবদ দেয় তবে আমাদের ভাড়া দিতে কোন অসুবিধা হবে না। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেন্টমার্টিন ভাড়া দিলে আমাদের দুইদিক থেকেই লাভ। সেন্টমার্টিন রক্ষা পেলো, পাশাপাশি দেশের আয় হলো। আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে। আজ আর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমার আরেকটা একটা মিটিং আছে। আপনি যাবার সময় কষ্ট করে আমার পিএসকে একটু পাঠিয়ে দিবেন ভিতরে। এসির রিমুটটা খুঁজে পাচ্ছি না। যে গরম পড়েছে। এসি ছাড়া থাকা যায়?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা : খাইছো নি? কি খাইছো? পরিবারের সবাই ভালো? আরে তোমরা শুধু অন্যের সমস্যা দেখো, অন্যের সমস্যা নিয়েই কথা বলো। নিজেদের সমস্যাগুলো কি দেখার সময় পাও? কখনও কি বউয়ের সাথে আলোচনা করো তার কি লাগবে, কি না লাগবে? ঈদে বোনাস পাও ঠিকঠাক? সপ্তাহে কয়দি ছুটি? আমার চিন্তা হয় তোমাদের নিয়া। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করো আর নিজের বাড়ির সংবাদ কি তাই জানো না! এটা কি জীবন! আহা রে! আরে পাথর লুট হচ্ছে জানি তো। পাথর লুট হচ্ছে, সোনা তো লুট হচ্ছে না? এত চিন্তার কি আছে? তারপরেও কথা বলছি সেনাপ্রধান আর পুলিশ প্রধানের সাথে। ওই এলাকার ওসিকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন বসায় রাখছি। আর কি চাও? পাথরের খোঁজখবর লাগাইছি। দেখি কি জানা যায়? একবার লুট হলে তা তো আর উদ্ধার করা যায় না? বোঝ নাই? তবে কলকাতায় পলাতক আওয়ামীলীগের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এই নিয়া তোমরা চিন্তা করিও না। যাও যাও বাড়িত যাও। বৌয়ের হাতে রান্না খাও। আর শোনো, যাবার সময় মুরগি কিনে নিয়া যাইও। টাকা আছে? নিবা ৫০০ টাকা?

প্রধান উপদেষ্টা : আমি

পদত্যাগ করবো। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বদলের প্রধানদের আজকে রাতে প্রীতিভোজের দাওয়াত দিয়েছি। কয়েকজন সাংবাদিকও থাকবে। আপনিও আসবেন। আজকে আপনাদের ‘থ্রি বিফ’ খাওয়াবো। বিফ কারি, বিফ রোস্ট, বিফ বার্গার।

সেনাবাহিনী প্রধান : এটি একটি রাজনৈতিক মুভমেন্ট। আমাদের এইসময় নিরব থাকতে হবে। আমরা কাউকে প্রমোট করার জন্য কিছু করবো না। দেশের জন্য আমরা প্রাণ দিবো। দেশের এক মুঠো মাটি কাউকে দিবো না।

ছাত্র প্রতিনিধি ও নতুন দলের একজন সমন্বয়ক :এসব নিয়ে যারা বেশি বেশি কথা বলছে তারা স্বৈরাচারের দোসর। তারা চায় স্বৈরাচার ফিরে আসুক। দেশের খারাপ দিকেগুলো নিয়েই তারা শুধু কথা বলতে পারে। কত ভালো কিছু হচ্ছে। কত মানুষ কোটিপতি হচ্ছে। এসব নিয়ে তারা চুপ। কিন্তু পাথরের বেলায় তারা চিৎকার করে কথা বলছে। আরে ভাই পাথর দিয়া কি হবে? স্বৈরাচার ফেরত আসলে ওই পাথর আপনার—আমার মাথায় মারবে। তার চেয়ে লুট হয়ে গেলে ভালো না? আরে সিরিয়াসলি নিয়েন না, মজা করলাম। যারা এসব করছে আমি তাদের বলতে চাই, সবার বাড়িতে ‘মার্চ’ করা হবে। ‘মার্চ ফর রিকোভার সাদা পাথর’। পাশাপশি আমি হুশিয়ারি দিতে চাই — ‘আর কোন স্বৈরাচারের ঠাঁই এই বাংলায় হবে না।’ পাথর লুট করে যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, যারা দিল্লিতে পাথর পাঠায় — তাদের ছাত্রসমাজ প্রতিহত করবেই। শাহবাগ, রাজুর তলা আমরা আচল করে দিবো। আমার বন্ধু শপাঁচেক গাড়ি নিয়ে যাবে পাথর লুট দেখতে। আরেক বন্ধু সমুদ্র বন্দরের দায়িত্বে আছে। তাকে টপকায় পাথর নিয়া যাবে, এমন সাহস কার আছে? পাথর নিয়ে আর কোন মব সহ্য করা হবে না। এক, দুই, তিন, চার — পাথরগুলোকে কে লাগায়?

বিশেষ দ্রষ্টব্য : পুরো ঘটনাটি কাল্পনিক। গল্পে বা ঘটনার বিবরণটি বাস্তব নয়, লেখকের কল্পনাপ্রসূত। গল্পে বর্ণিত চরিত্র বা ঘটনার সাথে বাস্তব জীবনের কোন ঘটনার আংশিক অথবা পুরোপুরি মিল পাওয়া গেলেও, তা কাকতালীয় ঘটনা। যার জন্য লেখক দায়ী নয়।

লেখা : ওয়াজেদ জীম
১১ আগস্ট ২০২৫