শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজা বিরাটের গাইবান্ধা : গৌরব থেকে অবক্ষয়

 [বিমল সরকার ] বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা- একসময় নদী, চরাঞ্চল, কৃষি আর জীববৈচিত্র্যের আশীর্বাদপুষ্ট জনপদ। ইতিহাসে রাজা বিরাটের গাভী বান্ধার স্থান, বীরত্ব ও প্রাচুর্যের প্রতীক। অথচ আজ সেই গাইবান্ধা ক্রমে হারাচ্ছে তার প্রাণশক্তি। পানি, মাটি, বায়ু ও জীববৈচিত্র্য- সবই দূষণ ও অব্যবস্থাপনার করাল গ্রাসে। দূষণের মূল উৎস ইটভাটা, নদীভাঙন, বালু উত্তোলন, প্লাস্টিক বর্জ্য, কৃষিজ রাসায়নিক- সব মিলিয়ে এক বহুমাত্রিক পরিবেশ সংকট।

অনুমোদিত ও অননুমোদিত মিলিয়ে বর্তমানে গাইবান্ধায় ২৫০টিরও বেশি ইটভাটা চলছে, যাদের অধিকাংশই পরিবেশ আইন অমান্য করে বসতি, স্কুল ও কৃষিজমির কাছাকাছি স্থাপিত। আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পুরনো পদ্ধতিতে পরিচালিত এসব ভাটায় মৌসুমজুড়ে আকাশে ছড়ায় কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও মিহি ধুলিকণা। স্বাস্থ্য ও কৃষির ক্ষয় ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় জমি অনাবাদি হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। কাঠ ও কয়লার ব্যবহার বনজ সম্পদ নষ্ট করছে, পাখি ও বন্যপ্রাণীর আবাস ধ্বংস করছে। নদী ও শহরের সংকট নদীর ধারে ভাটা বসিয়ে বালু ও মাটি সংগ্রহে নদীভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। শহরের ভেতরে নর্দমা ও বর্জ্যের দুর্গন্ধে চলাচল কষ্টকর। খালের প্রবাহ বন্ধ, নদীর পানি দূষিত—যেখানে প্রবীণরা কেবলই হারানো স্বপ্নের স্মৃতিচারণ করেন। গাইবান্ধাকে বাঁচাতে প্রয়োজন— আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ আধুনিক প্রযুক্তির বাধ্যতামূলক ব্যবহার বন ও নদী রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ জনসচেতনতা ও স্থানীয় নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা গাইবান্ধা শুধু একটি জেলা নয়- এটি একটি ঐতিহ্য, একটি পরিচয়। রাজা বিরাটের গৌরবময় জনপদকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

জনপ্রিয়

দ্যা ডিসেন্টের অনুসন্ধান : হাদিকে গুলি করার আগে অপরাধীরা তার সাথে জনসংযোগেও ছিলো !

রাজা বিরাটের গাইবান্ধা : গৌরব থেকে অবক্ষয়

প্রকাশের সময়: ০৩:১৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

 [বিমল সরকার ] বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা- একসময় নদী, চরাঞ্চল, কৃষি আর জীববৈচিত্র্যের আশীর্বাদপুষ্ট জনপদ। ইতিহাসে রাজা বিরাটের গাভী বান্ধার স্থান, বীরত্ব ও প্রাচুর্যের প্রতীক। অথচ আজ সেই গাইবান্ধা ক্রমে হারাচ্ছে তার প্রাণশক্তি। পানি, মাটি, বায়ু ও জীববৈচিত্র্য- সবই দূষণ ও অব্যবস্থাপনার করাল গ্রাসে। দূষণের মূল উৎস ইটভাটা, নদীভাঙন, বালু উত্তোলন, প্লাস্টিক বর্জ্য, কৃষিজ রাসায়নিক- সব মিলিয়ে এক বহুমাত্রিক পরিবেশ সংকট।

অনুমোদিত ও অননুমোদিত মিলিয়ে বর্তমানে গাইবান্ধায় ২৫০টিরও বেশি ইটভাটা চলছে, যাদের অধিকাংশই পরিবেশ আইন অমান্য করে বসতি, স্কুল ও কৃষিজমির কাছাকাছি স্থাপিত। আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পুরনো পদ্ধতিতে পরিচালিত এসব ভাটায় মৌসুমজুড়ে আকাশে ছড়ায় কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও মিহি ধুলিকণা। স্বাস্থ্য ও কৃষির ক্ষয় ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় জমি অনাবাদি হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। কাঠ ও কয়লার ব্যবহার বনজ সম্পদ নষ্ট করছে, পাখি ও বন্যপ্রাণীর আবাস ধ্বংস করছে। নদী ও শহরের সংকট নদীর ধারে ভাটা বসিয়ে বালু ও মাটি সংগ্রহে নদীভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। শহরের ভেতরে নর্দমা ও বর্জ্যের দুর্গন্ধে চলাচল কষ্টকর। খালের প্রবাহ বন্ধ, নদীর পানি দূষিত—যেখানে প্রবীণরা কেবলই হারানো স্বপ্নের স্মৃতিচারণ করেন। গাইবান্ধাকে বাঁচাতে প্রয়োজন— আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ আধুনিক প্রযুক্তির বাধ্যতামূলক ব্যবহার বন ও নদী রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ জনসচেতনতা ও স্থানীয় নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা গাইবান্ধা শুধু একটি জেলা নয়- এটি একটি ঐতিহ্য, একটি পরিচয়। রাজা বিরাটের গৌরবময় জনপদকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।