মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে: ইতিহাসের নীরব গর্জন

 বিমল সরকার:  “তুলনার খোলা মঞ্চে ইতিহাস কখনো দাঁড়ায় না। সে দাঁড়ায় বিবেকের দরবারে।” সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে যখন কেউ বলেন-“২০২৪-এর গণআন্দোলনের ভয়াবহতা ১৯৭১-এর চেয়েও গভীর”, তখন প্রশ্ন ওঠে-এই তুলনা কি ইতিহাস সচেতনতা না কি দায়িত্বহীন আত্মম্ভরিতা? “দুই ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে”—বিমল সরকারের লেখা এই কবিতাটি ঠিক এই মুহূর্তেই প্রয়োজন ছিল। কবি এখানে কোনো পক্ষ নেননি, বরং ইতিহাসের পাশে দাঁড়িয়ে সময়ের গা ঘেঁষে হাঁটার চেষ্টা করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন-একটি জাতির ইতিহাস কেবল ক্যালেন্ডারে বাঁধা নয়, তা মানুষের রক্তে, মাটির ঘ্রাণে, এক শিশুর নিঃশব্দ চিৎকারে লেখা থাকে। ১৯৭১ এবং ২০২৪-এই দুই সময়ের ঘটনা ভিন্ন, শত্রুপক্ষ ভিন্ন, প্রেক্ষাপটও ভিন্ন, কিন্তু রক্তের রঙ এক। একটিতে বাঙালি জাতি জেগেছিল পাকিস্তানি নিপীড়নের বিরুদ্ধে, অন্যটিতে তারা দাঁড়িয়েছিল অদৃশ্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই দুই সময়ে সাধারণ মানুষই ছিল ত্যাগের প্রতীক-যারা সব হারিয়ে লিখেছিল নতুন ভোরের আহ্বান। কিন্তু আজকের প্রশ্ন হলো-আমরা কি সেই ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করি? নাকি নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য সেই ইতিহাসকে অপব্যবহার করি? আমরা কি ৭১-এর শহীদদের রক্তের কাছে দায়বদ্ধ? নাকি আমরা কেবলমাত্র সুবিধাবাদী রাজনৈতিক স্মার্টনেসের মোড়কে ইতিহাসকে অপমান করি? বিমল সরকারের কবিতার শেষ চরণে- “শুধু গন্ধময় ফুল নয়, স্বাধীনতার বাগানেও ফোটে রক্তকরবী।” – আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে স্বাধীনতা শুধু প্রাপ্তির গল্প নয়; তা ত্যাগ, সংবেদনশীলতা, এবং দায়িত্বের ধারক। কালের চিঠি সবসময়ই এমন সাহিত্যকে জায়গা দেয়, যা সময়ের বিবেককে নাড়া দেয়। এই কবিতাটির মূল শক্তি তার নৈতিক নিরপেক্ষতা ও আবেগের সংহত ব্যঞ্জনা। এখানে কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নেই, আছে চেতনাপুষ্ট আত্মবিশ্লেষণ। আজ যখন ইতিহাসের একদিকে অনুপযুক্ত তুলনার কুয়াশা, আরেকদিকে নীরব বিকৃতির গন্ধ—তখন এই কবিতা একটি মশালের মতো পাঠকের হৃদয়ে আলো জ্বালায়। আমরা কবির এই সাহসিকতা ও নৈতিক স্পষ্টতাকে কুর্নিশ জানাই।

জনপ্রিয়

গাইবান্ধায় সাপের কামড়ে মৃত্যুহার কমাতে জেলা প্রশাসকের নিকট TEER-এর স্মারকলিপি প্রদান

দুই ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে: ইতিহাসের নীরব গর্জন

প্রকাশের সময়: ০৪:১১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

 বিমল সরকার:  “তুলনার খোলা মঞ্চে ইতিহাস কখনো দাঁড়ায় না। সে দাঁড়ায় বিবেকের দরবারে।” সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে যখন কেউ বলেন-“২০২৪-এর গণআন্দোলনের ভয়াবহতা ১৯৭১-এর চেয়েও গভীর”, তখন প্রশ্ন ওঠে-এই তুলনা কি ইতিহাস সচেতনতা না কি দায়িত্বহীন আত্মম্ভরিতা? “দুই ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে”—বিমল সরকারের লেখা এই কবিতাটি ঠিক এই মুহূর্তেই প্রয়োজন ছিল। কবি এখানে কোনো পক্ষ নেননি, বরং ইতিহাসের পাশে দাঁড়িয়ে সময়ের গা ঘেঁষে হাঁটার চেষ্টা করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন-একটি জাতির ইতিহাস কেবল ক্যালেন্ডারে বাঁধা নয়, তা মানুষের রক্তে, মাটির ঘ্রাণে, এক শিশুর নিঃশব্দ চিৎকারে লেখা থাকে। ১৯৭১ এবং ২০২৪-এই দুই সময়ের ঘটনা ভিন্ন, শত্রুপক্ষ ভিন্ন, প্রেক্ষাপটও ভিন্ন, কিন্তু রক্তের রঙ এক। একটিতে বাঙালি জাতি জেগেছিল পাকিস্তানি নিপীড়নের বিরুদ্ধে, অন্যটিতে তারা দাঁড়িয়েছিল অদৃশ্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই দুই সময়ে সাধারণ মানুষই ছিল ত্যাগের প্রতীক-যারা সব হারিয়ে লিখেছিল নতুন ভোরের আহ্বান। কিন্তু আজকের প্রশ্ন হলো-আমরা কি সেই ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করি? নাকি নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য সেই ইতিহাসকে অপব্যবহার করি? আমরা কি ৭১-এর শহীদদের রক্তের কাছে দায়বদ্ধ? নাকি আমরা কেবলমাত্র সুবিধাবাদী রাজনৈতিক স্মার্টনেসের মোড়কে ইতিহাসকে অপমান করি? বিমল সরকারের কবিতার শেষ চরণে- “শুধু গন্ধময় ফুল নয়, স্বাধীনতার বাগানেও ফোটে রক্তকরবী।” – আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে স্বাধীনতা শুধু প্রাপ্তির গল্প নয়; তা ত্যাগ, সংবেদনশীলতা, এবং দায়িত্বের ধারক। কালের চিঠি সবসময়ই এমন সাহিত্যকে জায়গা দেয়, যা সময়ের বিবেককে নাড়া দেয়। এই কবিতাটির মূল শক্তি তার নৈতিক নিরপেক্ষতা ও আবেগের সংহত ব্যঞ্জনা। এখানে কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নেই, আছে চেতনাপুষ্ট আত্মবিশ্লেষণ। আজ যখন ইতিহাসের একদিকে অনুপযুক্ত তুলনার কুয়াশা, আরেকদিকে নীরব বিকৃতির গন্ধ—তখন এই কবিতা একটি মশালের মতো পাঠকের হৃদয়ে আলো জ্বালায়। আমরা কবির এই সাহসিকতা ও নৈতিক স্পষ্টতাকে কুর্নিশ জানাই।