বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ প্রিয়জনকে নিয়ে শর্মা খাওয়ার দিন!

শর্মার উদ্ভব হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। তুলনামূলকভাবে ইউরোপে এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।

সুস্বাদু মাংস ধীর আঁচে আগুনের পাশে রান্না হলে পাতলা করে কাটা হয়। শর্মায় গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস বা টার্কিসহ অনেক ধরণের মাংস থেকে তৈরি করা যেতে পারে।

শর্মা এমন একটি খাবার যা অন্তত কয়েক শতাব্দী আগে অটোমান সাম্রাজ্যে শুরু হয়েছিল, যা বর্তমানে আধুনিক তুরস্ক।

তুর্কিদের প্রস্তুত করা শর্মার প্রাথমিক নাম ছিল ‘সেভারেম’, যার অর্থ ‘আগুনের সামনে শিক ঘোরানো’। শব্দটি তুর্কি শব্দ সেভির্মে থেকে আসা। চতুর্দশ শতাব্দীর একটি লেখায় প্রথম এই মাংসের রেসিপির উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও এর উৎস নিশ্চিত নয়।

জানা যায়, একসময় মধ্য এশিয়ার যাযাবর লোকেরা ব্রোচ বা তরবারিতে গেঁথে মাংস রান্না করতেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ওই মিট রেসিপি ভারতীয় রাজদরবারের সুলতানদের কাছে বিলাসবহুল খাবারের মর্যাদা পেয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শর্মার যাত্রা শুরুর গল্পও।

অবশ্য, স্যান্ডউইচ হিসেবে এ খাবারের প্রসার ঘটার জন্য ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের শহুরে রাস্তায় যেসব শর্মা পাওয়া যেত, সেগুলোর মাংস স্কিওয়ার বা শিকে গেথে হরাইজন্টালি রেখে প্রস্তুত করা হতো। একই সময়ে ভার্টিক্যাল বা খাড়া করে রাখা তরবারিতে গেঁথে মাংস রান্নার ধারণা সমাদর পায়।

শর্মার ইউরোপযাত্রায় ফ্রান্স ও জার্মানির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই মহাদেশে জার্মানিতেই এটি প্রথম রপ্তানি করা হয়েছিল। ইউরোপের যেসব দেশে খাবারটির চল রয়েছে, দেশভেদে রয়েছে আলাদা নামও।

অবশ্য, ফ্রান্সের শর্মার ইতিহাস একটু বিভ্রান্তিকর! তুর্কি খাবার হলেও প্যারিসে এটি প্রথম পরিবেশন করা হয় এক গ্রিক রেস্তোরাঁয়। তাই স্থানীয় ভোক্তারা সহসাই এই নতুন খাবারের নাম রাখেন ‘গ্রিক স্যান্ডউইচ’। এই ত্রুটিপূর্ণ নাম দ্রুতই দেশটির বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রিকের অধিবাসীরা অবশ্য শর্মাকে ‘গ্রিক স্যান্ডউইচ’ বলে ডাকেন না। রাতের এই প্রিয় খাবারকে এথেন্সের রাস্তায় বলা হয় ‘সুভলাকি’। তা ছাড়া নানা জায়গায় শর্মার আরও কিছু নাম রয়েছে; যেমন বান মি, আরব টাকোস, কেবাবনরস্ক, শিশ তাওক বা ডানার। মজার ব্যাপার হলো, দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই এমন স্যান্ডউইচ খুঁজে পাবেন, যেটি সারা দিন কাজের পর আপনার বিরস বদনের সন্ধ্যাকে নিমেষেই ভালো করে দিতে সক্ষম!

অসমো শর্মার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২০ সালে ন্যাশনাল শর্মা দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এই রেস্তোরাঁর শাখাগুলোর বেশিরভাগ-ই কানাডার টরন্টোর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। তবে, এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রেস্তোরাঁর একটি শাখা রয়েছে।

প্রতি বছর এই ইভেন্টের সময়, জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই স্ট্রিট ফুডের মাধ্যমে ভিন্ন ধরনের লোকজনকে একত্রিত করা হয়!

আজ তো শর্মা দিবস! তাই, প্রিয়জন, বন্ধু, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন। আর আনন্দ করে স্বাদ নিন এই খাবারের।

 

কালের চিঠি /এএফ

জনপ্রিয়

ইউথ ক্লাইমেট স্মল গ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেল সৃজনশীল গাইবান্ধা  

আজ প্রিয়জনকে নিয়ে শর্মা খাওয়ার দিন!

প্রকাশের সময়: ০৩:১৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

শর্মার উদ্ভব হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। তুলনামূলকভাবে ইউরোপে এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।

সুস্বাদু মাংস ধীর আঁচে আগুনের পাশে রান্না হলে পাতলা করে কাটা হয়। শর্মায় গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস বা টার্কিসহ অনেক ধরণের মাংস থেকে তৈরি করা যেতে পারে।

শর্মা এমন একটি খাবার যা অন্তত কয়েক শতাব্দী আগে অটোমান সাম্রাজ্যে শুরু হয়েছিল, যা বর্তমানে আধুনিক তুরস্ক।

তুর্কিদের প্রস্তুত করা শর্মার প্রাথমিক নাম ছিল ‘সেভারেম’, যার অর্থ ‘আগুনের সামনে শিক ঘোরানো’। শব্দটি তুর্কি শব্দ সেভির্মে থেকে আসা। চতুর্দশ শতাব্দীর একটি লেখায় প্রথম এই মাংসের রেসিপির উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও এর উৎস নিশ্চিত নয়।

জানা যায়, একসময় মধ্য এশিয়ার যাযাবর লোকেরা ব্রোচ বা তরবারিতে গেঁথে মাংস রান্না করতেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ওই মিট রেসিপি ভারতীয় রাজদরবারের সুলতানদের কাছে বিলাসবহুল খাবারের মর্যাদা পেয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শর্মার যাত্রা শুরুর গল্পও।

অবশ্য, স্যান্ডউইচ হিসেবে এ খাবারের প্রসার ঘটার জন্য ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের শহুরে রাস্তায় যেসব শর্মা পাওয়া যেত, সেগুলোর মাংস স্কিওয়ার বা শিকে গেথে হরাইজন্টালি রেখে প্রস্তুত করা হতো। একই সময়ে ভার্টিক্যাল বা খাড়া করে রাখা তরবারিতে গেঁথে মাংস রান্নার ধারণা সমাদর পায়।

শর্মার ইউরোপযাত্রায় ফ্রান্স ও জার্মানির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই মহাদেশে জার্মানিতেই এটি প্রথম রপ্তানি করা হয়েছিল। ইউরোপের যেসব দেশে খাবারটির চল রয়েছে, দেশভেদে রয়েছে আলাদা নামও।

অবশ্য, ফ্রান্সের শর্মার ইতিহাস একটু বিভ্রান্তিকর! তুর্কি খাবার হলেও প্যারিসে এটি প্রথম পরিবেশন করা হয় এক গ্রিক রেস্তোরাঁয়। তাই স্থানীয় ভোক্তারা সহসাই এই নতুন খাবারের নাম রাখেন ‘গ্রিক স্যান্ডউইচ’। এই ত্রুটিপূর্ণ নাম দ্রুতই দেশটির বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রিকের অধিবাসীরা অবশ্য শর্মাকে ‘গ্রিক স্যান্ডউইচ’ বলে ডাকেন না। রাতের এই প্রিয় খাবারকে এথেন্সের রাস্তায় বলা হয় ‘সুভলাকি’। তা ছাড়া নানা জায়গায় শর্মার আরও কিছু নাম রয়েছে; যেমন বান মি, আরব টাকোস, কেবাবনরস্ক, শিশ তাওক বা ডানার। মজার ব্যাপার হলো, দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই এমন স্যান্ডউইচ খুঁজে পাবেন, যেটি সারা দিন কাজের পর আপনার বিরস বদনের সন্ধ্যাকে নিমেষেই ভালো করে দিতে সক্ষম!

অসমো শর্মার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২০ সালে ন্যাশনাল শর্মা দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এই রেস্তোরাঁর শাখাগুলোর বেশিরভাগ-ই কানাডার টরন্টোর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। তবে, এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রেস্তোরাঁর একটি শাখা রয়েছে।

প্রতি বছর এই ইভেন্টের সময়, জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই স্ট্রিট ফুডের মাধ্যমে ভিন্ন ধরনের লোকজনকে একত্রিত করা হয়!

আজ তো শর্মা দিবস! তাই, প্রিয়জন, বন্ধু, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন। আর আনন্দ করে স্বাদ নিন এই খাবারের।

 

কালের চিঠি /এএফ