
মোটরসাইকেল উৎপাদনকারীদের আশা ছিল, এ বাজার আরও বড় হবে। ২০২৭ সাল নাগাদ বছরে ১০ লাখ ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি হবে দেশের বাজারে। কিন্তু তাদের সেই আশা মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক গতিমন্থরতা এবং ব্যয় ও বিক্রয়মূল্য অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় উল্টো সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে মোটরসাইকেলের বিক্রি।
শিল্পসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়তে শুরু করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৪০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। মূল্যহ্রাস ও যাতায়াতকারীদের প্রয়োজনের কারণে এভাবে বিক্রি বেড়েছিল।
তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয়ভাবে বিক্রি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ইউনিটে নেমে এসেছে।
উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে এ শিল্পে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু আর্থিকভাবে স্থিতিশীল থাকার জন্য যতটা প্রয়োজন, এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না।
মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ-এর সভাপতি ও রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা ২০-২৫ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বেড়েছে।
অ্যাসেম্বলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং যিনি টিভিএস অটো বাংলাদেশের সিইও বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘এ শিল্প কঠিন সময় পার করছে। এমন মন্দা আমরা আশা করিনি।’
একসঙ্গে সবকিছু ওলটপালট
ব্যবসায় এই মন্দার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান খরচ, ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া এবং সময়ে সময়ে বৈরী সরকারি পদক্ষেপ। বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘সবকিছুই এই খাতের জন্য সঙ্গে বৈরী হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ২০২২ সালের শুরুর দিকে ডলারের দাম ছিল ৮৫-৮৬ টাকা, এখন তা প্রায় ১২০ টাকা। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপাদানের আমদানি ব্যয়ও সরাসরি বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মুহম্মদ আশেকুর রহমান বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় স্থানীয় মুদ্রায় শুল্কের পরিমাণও বেড়ে গেছে। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে কোম্পানিগুলো মোটরসাইকেলের দাম বাড়িয়ে পুরো খরচ ক্রেতাদের কাঁধে চাপাতে পারেনি।
স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করলে শুল্ক কম দিতে হয়। এর সুবাদে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালে মোটরসাইকেলের দাম অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। কিন্তু টাকার মান পড়ে যাওয়ায় দাম আবার ২০১৬-১৭ সালের পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষ যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সে সময় এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে কোম্পানিগুলোর আয় ব্যাপক কমেছে।
বিপ্লব বলেন, ‘একসময় আমাদের অর্থনীতিতে তিন শ্রেণির ভোক্তা ছিলেন—নিম্ন-আয়ের, মধ্যম-আয়ের এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের। তবে আমাদের মনে হচ্ছে, টু-হুইলার শিল্প থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাকি দুই শ্রেণির সঙ্গে মিশে গেছে, বিশেষ করে গত অর্থবছরে।’
কালের চিঠি ডেস্ক 























