গাইবান্ধার খ্যাতনামা তুলসীঘাট শামসুল হক ডিগ্রী কলেজে শিক্ষা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভুয়া সনদ, বিধি বহির্ভূত নিয়োগ, এমপিও ভুক্তির নামে অর্থ আত্মসাৎ এবং অনার্স কোর্সের টাকার অপব্যবহার সহ নানা কেলেঙ্কারি।

এই কলেজের নামে কোটি টাকার আর্থিক অসংগতি এবং কাম্য যোগ্যতাহীন চার জন ভুয়া শিক্ষক দ্বারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ঠ উচ্চ দপ্তরের বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা যায়, ইতিপুর্বে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ব্যাংক হিসাব নম্বর ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ লেনদেন করা হয়েছে।

ভুয়া লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ ও ইনডেক্স জালিয়াতি করে সাবেক অধ্যক্ষ একরামুল হক খান ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে (ইনডেক্স নং-৩০৭৫৮১১) এক ব্যক্তিকে এমপিওভুক্ত করেন।
২০০৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছর সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এই নিয়োগকে ভুয়া প্রমাণ করে অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা হয়নি।
একই ভুয়া ইনডেক্স ব্যবহার করে বর্তমানে ওই ব্যক্তিকে কম্পিউটার প্রদর্শক হিসেবে বেতন উত্তোলনের সুযোগ করে দেন অধ্যক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ মৃত্যু বরণ করলে নতুন অধ্যক্ষ গত মাসে যোগদান করলে হাফ ছেড়েছিলেন সকলেই।তবে মাস না পেরুতেই সেই হাফ যেন দীর্ঘ নিশ্বাসে পরিনত হতে বসেছে।

ভুয়া সার্টিফিকেটে প্রভাষক নিয়োগ দেয়ায় তদন্তে দেখা গেছে, কলেজে জনবল কাঠামো অনুযায়ী মাত্র একজন কম্পিউটার প্রভাষক অনুমোদিত হলেও অধ্যক্ষের কারসাজিতে দুইজন শিক্ষককে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করা হয়।
তারই একজন শহিদুল ইসলাম মন্ডল, ১৯৯৯ সালে নিয়োগ পান। কিন্তু নিয়োগকালে তার কম্পিউটার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ সনদ ছিল না। ব্যবসায় শিক্ষার সার্টিফিকেট কোর্স দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হন।তদন্ত কমিটি মন্তব্য করেছে, তার নিয়োগ সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত।

দ্বিতীয় জন নূর নেহার ইয়াসমিন সরকার ২০০২ সালে নিয়োগ পান, তবে গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই অধ্যক্ষ একক ক্ষমতাবলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ইতিহাসে, অথচ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কম্পিউটার প্রভাষকের জন্য গণিত/পদার্থবিজ্ঞান/অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়। অথচ অযোগ্য হয়েও তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তৃতীয়জন তৌফিকুল ইসলাম মন্ডল।

এ ছাড়াও আরেক জন রয়েছে কারিগড়ি শাখার সুমন যিনি কিনা ইতিপূর্বে পরিক্ষা কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে পরিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেযার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে, যে সংবাদ তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়।
এর বাহিরে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তার ও কাম্য যোগতা নেই মর্মে চিঠি কলেজে প্রেরন করলেও অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এখনো বিত্যমান রয়েছে।

এসব অনিয়ম শুধু অমানবিকই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।
তদন্ত কমিটির মন্তব্যে বলে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন: একই ইনডেক্স ব্যবহার করে দ্বৈত বেতন উত্তোলন করা হয়েছে, ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ প্রমাণিত।

তুলসীঘাট শামসুল হক ডিগ্রি কলেজের এই ভয়াবহ দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক মহল প্রশ্ন তুলেছেন—“রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারীরা কবে আইনের আওতায় আসবে?”
তাদের দাবি, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ সংশ্লিষ্ট ও ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং সরকারি অর্থ উদ্ধার করা হোক।

শিক্ষক যেখানে মানুষ গড়ার কারিগড় সেখানে এমন দুর্ণিতির মহোৎসবে মেতে উঠা এসব শিক্ষকদের মুখোশ উম্মোচন সহ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সকলে এগিয়ে আসবে এমনি প্রত্যাশা সুধি সমাজের।

হৃদয়/ কালের চিঠি