কথায় আছে গল্পের গরু আকাশে উড়ে। কেউ কেউ মজার ছলে বলছেন প্রবাদটা এবার পরিবর্তনের সময় হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার গল্প এখন আকাশে চড়ছে। সোমবার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে একটি যুদ্ধ বিমান ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) সঠিক ছবি, তথ্য ও ভিডিওর পাশাপাশি নানারকম বানোয়াট ছবি, ভিডিও কনটেন্ট ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সালমান মাহবুব নামের একজন দুইটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের মাঠে একটি ট্রেনিং বিমান ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত রাখুক (আমিন)।’মন্তব্যের ঘরে একজনজানতে চান, ছবিগুলো ঘটনাস্থলের কি না। উত্তরে মাহবুব লেখেন, এসব ছবি মাইলস্টোন কলেজের। কিন্তু যাচাই করে দেখা যায়, ছবিগুলো নকল। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব নিশ্চিত করেছে, এ ছবি দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো হয়েছে।‘দূরবীন নিউজ’ নামের ফেসবুক পেজ ঘটনাটি নিয়ে একটি পোস্ট দেয়। আগুনে জ্বলতে থাকা একটি সাদা বিমানের ছবি জুড়ে দেওয়া হয় পোস্টে। পরে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার যাচাই করে দেখে, এই ছবিও ভুয়া।

ডিসমিসল্যাব ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এআই নির্মিত মোট ছয়টি ছবি শনাক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ছবিগুলোয় দৃশ্যমান অসংগতি ছিল, যা সন্দেহ তৈরি করতে সক্ষম। কোনো ছবিতে বিধ্বস্ত বিমানটিকে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুইটি বিমান বিধ্বস্ত। এর কোনোটিই সঠিক নয়।ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, একটি ছবিতে স্কুল ও কলেজ শব্দের বানানও ভুল। এমন ভুল এআই ব্যবহার করে বানানো ছবিতে দেখা যায়। এ ছাড়া অধিকাংশ ছবিতে আগুনের অবস্থান ও বিমানের গঠনকাঠামোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সঙ্গে মিল নেই। যাচাইকৃত এসব ছবি এআই দিয়ে বানানোর বিষয়টি ইঙ্গিত দেয়। এতে বোঝা যায়, এআই দিয়ে বানানো ছবিগুলোর উদ্দেশ্য বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া।বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এআই নির্মিত ৫টি ছবি শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। প্রতিষ্ঠানটির অনুসন্ধান বলছে, ছবিগুলো উত্তরায় বিধ্বস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানের নয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ছবিতে থাকা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের ফেসবুক পেজ থেকেও এআই নির্মিত একটি ছবি ছড়ানো হয়েছে। যদিও পরে ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়।ডিসমিসল্যাব ও রিউমার স্ক্যানারের শনাক্ত করা মোট ১১টি ছবির মধ্যে ৩টি অভিন্ন। বাকি ৮টি ছবি ভিন্ন। এসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যাচাই না করেই ছবিগুলো বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল থেকে শেয়ার করা হয়। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারী বিভ্রান্ত হয়ে ছবিগুলো ছড়ানো শুরু করেন।সমিসল্যাব ও রিউমার স্ক্যানারের বিশ্লেষণ করা পেজগুলোয় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই এআই দিয়ে বানানো ছবি সরিয়ে নিয়েছেন। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা এসব ছবি এখনো রয়ে গেছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ভুয়া ছবি ছড়ানোর পেছনে ক্লিকবেইট, ফলোয়ার বাড়ানোসহ নানা উদ্দেশ্য থাকে।দুর্ঘটনার সময় ছড়ানো এ ধরনের ভুয়া ছবি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পরিস্থিতিতে ভুয়া ছবি থেকে গুজব ও আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কাও তৈরি হয়।ভুয়া ছবি-ভিডিও মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের (তথ্য যাচাই) ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন বি এম মইনুল হোসেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক: বিমল কুমার সরকার নির্বাহী সম্পাদক: তাসলিমুল হাসান সিয়াম বার্তা সম্পাদক: শামসুর রহমান হৃদয়। সম্পাদকীয় কার্যালয়: তুলশীঘাট (সাদুল্লাপুর রোড), গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা-৫৭০০
© All Rights Reserved © Kaler Chithi