ওয়াজেদ হোসেন জীম  : অনলাইনে লাইভ ক্লাস চলাকালীন অসামাজিক কার্যকলাপ - (চু মু ও জড়িয়ে ধরা) নিয়ে আলোচনা - সমালোচনায় দুলছে পুরো বাংলাদেশ। যদিও এটি বর্তমানে নিতান্তই তুচ্ছ একটি ঘটনা। কারণ এইসব ঘটানোর সাহস এবং উৎসাহ তারা সমাজ থেকেই পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল অথবা আলোচনায় আসতে এবং দুইহাতে টাকা ইনকাম করে নিজস্ব পরিচয় লাভ, বিলাসী জীবন যাপন, বিদেশ ভ্রমণ ও নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এর থেকে সহজ কোন মাধ্যম বর্তমানে আর নেই। যৌন সুরসুরিতে কাতর বাঙালিদের শরীর দেখিয়ে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে এটাই এক অব্যর্থ নিশানা।

যৌনতা সমাজে সেই ফল যা সবাই খায় কিন্তু স্বীকার করে না। যৌনতা ততক্ষন সামাজিক যতক্ষণ তা গোপনে হয়। কিন্তু একবার প্রকাশ পেলে তা হয়ে যায় অসামাজিক, সমাজ ধ্বংসের পথ। কিন্তু সমাজ যেসকল কর্মকাণ্ডকে অসামাজিক বলছে, তা কি আসলেই সামাজিক? সমাজ কি এসকল কর্মকাণ্ড আসলেই এড়িয়ে চলতে চায়? সমাজ কি বাস্তবিকভাবেই এসকল কর্মকাণ্ডকে অনুৎসাহিত করে?

একটু অতীত পর্যালোচনা করা যাক, বছর সাতেক আগে সুবা নামের একজন মেয়ের সাথে ক্রিকেটার নাসিরের গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়। সেই ফোনালাপে যৌন সুরসুরি মূলক আলোচনা থাকে। কয়েকদিনের মাঝেই সেই মেয়ের কিছু স্পর্শকাতর ছবি এবং ভিডিও (ন গ্ন) সীমিত আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে । তুলকালাম কান্ড বেঁধে যায়। অবশ্য সাইবার অভিজ্ঞদের সহযোগিতায় সেই সকল ভিডিও দ্রুতই সরিয়ে ফেলা হয় ইন্টারনেট থেকে। কিন্তু এসবের মাস খানেক পর সেই মেয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে নাম লেখান এবং চলচ্চিত্র নায়িকা হিসেবে অভিনয়ও করেন।

বছর দুয়েক আগে, মাইলস্টোন কলেজে এক ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের গোপন ভিডিও (ন গ্ন) ও ম্যাসেঞ্জারের ভিডিও কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। বাঙ্গালী উৎসাহ দেখায়। কিছুদিন পর সেই ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মডেল হিসেবে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রমোশন করে। দুই হাতে টাকা ইনকাম করছে এখন।

সম্প্রতি সাভারে রিদি নামে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ের গোপন ভিডিও (ন গ্ন) ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের একাংশের উত্তেজনায় আলোচনার শীর্ষে পৌঁছে যায় সেই মেয়ে। মিডিয়া জগতের শিক্ষিত কিছু ব্যক্তিত্ব সেই মেয়েকে নাটক করার প্রস্তাব দেয় এবং গত কুরবানী ঈদে সে নাটকে অভিনয়ও করেন।

বাঙ্গালীর একাংশ যৌন প্রিয়। এই দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বৃহৎতম অংশ জুড়ে শুধু লি ঙ্গ বড় করা এবং স ঙ্গ মের সময় বাড়ানোর চিকিৎসার বিজ্ঞাপন। অবশ্য জীবনের বৃহৎ একটা সময় যেহেতু এই যৌনতা, তাই যৌন প্রিয় হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যৌনতার মাধ্যমে আলোচনায় এসে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়াটা অস্বাভাবিক। তবে দুঃখ কিংবা আশার খবর এই যে, বিগত কয়েক বছর হলো এইসকল কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে ঝড়ের মতো সমালোচনা হলেও একপর্যায়ে গিয়ে নমনীয় এবং পরবর্তীতে সমাজ তাদের মেনে নেয়। যাকে কোনদিন কেউ চিনতো না, হুট করে নিজের শরীর প্রদর্শন করে যিনি আলোচনায় আসলেন সমাজ একসময় তাকে সমীহ করা শুরু করে। চলচ্চিত্র যা সমাজে সরাসরি প্রভাব ফেলে সেখানে এই সকল বিতর্কিত ব্যক্তিত্বহীনদের প্রমোট করা হয়। প্রমোট তারা করে, যারা সমাজ নিয়ে টকশো করে, যা সমাজকে ভালো রাখার বুলি আওড়ায়।

সমাজের কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই এইসবের বিরুদ্ধে, নেই নির্দিষ্ট কোন আইন অথবা শাস্তির ব্যবস্থা। নারী অধিকার, সম অধিকার বলে যারা সমাজকে আলোড়িত করে তারা নিজেরাও জানে নারীদের দাবিয়ে রাখতে অথবা নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি নারী নিজেরাই দেয়। কিছু কিছু নারীরাই নিজেদের শরীর প্রদর্শন করে আনন্দ পায়। এজন্যই বিশ্বের সব থেকে‌ বড় ইন্ডাস্ট্রি হলো প র্ণ ইন্ডাস্ট্রি। এভাবে চলছে থাকলে অদূর বাংলাদেশে প র্ণ ইন্ডাস্ট্রি চালু হবে। অঢেল টাকা এবং জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের লোভে পড়ে এই সকল ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখবে আমাদের পরিচিত কেউ কেউ। হয়তো এই ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সদস্য হবেন নিজ পরিবারের সেই ছোট আদরের মেয়েটি, যাকে কন্যা বলে সম্বোধন করা হয়।

পরিশেষে, অনলাইন ক্লাসে তরুণ-তরুণী যা করেছে তা তাদের ব্যক্তি অধিকার। এই অধিকারের বুলি দিয়ে তারা যা তা করতেই পারেন। কিন্তু শত শত স্কুল পড়ুয়া,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সামনে করার কারণে এটি একটি অপরাধ। জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধে তাদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত। সমাজ যদি এড়িয়ে যায় তবে আরেকজনকে উৎসাহ দেয়া হবে। ভবিষ্যতে আরোও এমন ঘটনা ঘটবেই।

কেউ কেউ বলতে পারে, চুমু তেমন আর কি! এটি ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যম মাত্র। এটি নিয়ে যারা কথা বলছে তারা পড়ে আছেন আদিমকালে। তারা সভ্য হতে পারেননি। কিন্তু স্থান কাল পাত্র ভেদে যে চুমুর প্রকাশ ভিন্ন‌ ভিন্ন হয় এটাও যেমন মানতে হবে তেমনি মানতে হবে - সভ্য হতে হতে ভুলে গেলে চলবে না 'মানুষ এবং কুকুরের মাঝে পার্থক্য আছে'।