সেফটি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ একটি সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির যাত্রা শুরু করেছে, যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরকালে গুরুত্বসহকারে অংশগ্রহণ করেন নেপাল ও জাপানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এই সময়ে আয়োজিত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। যার শুরু হয়, ১০ মে, ২০২৫ তারিখে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যেখানে প্রধান অতিথি মাননীয় ইন্দিরা রানা মাগার, নেপালের ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি পরিষদের ডেপুটি স্পিকার, তাঁর মানবিক নেতৃত্বের গল্প দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। ২০১৭ সালে বিবিসি’র ১০০ জন নারী তালিকায় স্থান পাওয়া এবং ২০১৪ সালে সুইডেনের রানী সিলভিয়ার কাছ থেকে ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেনস প্রাইজ সম্মাননা লাভকারী তিনি প্রিজনার্স অ্যাসিস্ট্যান্স নেপাল (পিএ নেপাল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থা ১,০০০-এর বেশি শিশুকে কারাগার থেকে উদ্ধার করে শিক্ষা ও নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। তাঁর মূল বক্তৃতায় তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। নেপালের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মিস লক্ষ্মী ভান্ডারী, ইনিশিয়েটিভস অফ মিডিয়া উইমেন (আইএমডব্লিউ)-এর প্রেসিডেন্ট এবং নেপালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক সমন্বয়কারী। তিনি নেপাল দূতাবাস এবং জাপানের জয়েন্ট কাউন্সিল সিসি ২৩-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সেফটি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের বোর্ড সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগের উপর জোর দেয়। প্রতিনিধিরা পরিবেশ সুরক্ষা, মানবিক নেতৃত্ব এবং যুব ক্ষমতায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের একটি বড় ঘোষণা ছিল সেফটি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগে শুরু হতে চলছে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৫,০০০-এর বেশি ঔষধি ও পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো। উত্তর বঙ্গের দুর্ভিক্ষপ্রবণ জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং দক্ষিণ বঙ্গের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশালে প্রাথমিকভাবে এই গাছ লাগানো হবে। পর্যায়ক্রমে এটি দেশের অন্যান্য অংশেও বিস্তৃত হবে। সেফটি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রতীকী “সেফটি ট্রি” নামক একটি বিশেষ স্মারক উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। নেপালের ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি পরিষদের ডেপুটি স্পিকার এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মানবিক নেতা মাননীয় ইন্দিরা রানা মাগার “শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ” সম্পর্কিত “সেফটি ট্রি” ধারণাটির উচ্চ প্রশংসা করেন। তিনি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাঁর প্রত্যাশা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে তুলে ধরেন।কর্নেল ময়নুল হক (অব.), বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সেফটি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্মানের প্রতীক হিসেবে নেপালের সম্মানিত অতিথিদের শাড়ি উপহার দেওয়া হয়। নেপালের প্রতিনিধিরা আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং অন্তরভুকিতুমুলক বৈষম্যবিহীন সমাজ বিনির্মাণে বিশেষভাবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়া, সেফটি নেটওয়ার্ক বিডির ব্যানারে ঢাকার উত্তরায় এক অনন্য গবেষণাজ্ঞার পরিদর্শনের আয়োজন করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রসার এবং গবেষণার এক অপার সুযোগ করে দেবে। উত্তরায় অবস্থিত মি. এনায়েত কবিরের ৬,০০০ বর্গফুটের বিশেষ সংগ্রহশালা, যার ৭৫ শতাংশেরও বেশি অংশজুড়ে রয়েছে তাকভর্তি বই, পুরোনো পত্রিকা, প্রতিবেদন, ম্যাগাজিন, ট্যাবলয়েড, এমনকি ১৯৬৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রকাশনা। মি. এনায়েত কবিরের এই সংগ্রহশালাকে অনেকেই বলেন জীবন্ত ইতিহাস- এই সংগ্রহশালার ওজন প্রায় ৪০ টনেরও বেশি, যা বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের এক নিরব সাক্ষী। এখানে আছে বহু দুর্লভ হেরিটেজ নিদর্শন ও প্রাচীন শিল্পকর্ম, যা শুধু ইতিহাস নয়, সংস্কৃতি ও সামষ্টিক চিন্তারও প্রতিফলন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীরা গবেষণা, তথ্য অনুসন্ধান ও সাংস্কৃতিকর এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করতে পারবে যা দুই দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: বিমল কুমার সরকার নির্বাহী সম্পাদক: তাসলিমুল হাসান সিয়াম বার্তা সম্পাদক: শামসুর রহমান হৃদয়। সম্পাদকীয় কার্যালয়: তুলশীঘাট (সাদুল্লাপুর রোড), গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা-৫৭০০
© All Rights Reserved © Kaler Chithi