ভরা মৌসুমে ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক ডাকে জমে উঠেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ির যমুনা নদী সংলগ্ন উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় মরিচের হাট। ভোর থেকে নৌকা, ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান অথবা মাথায় করে মরিচ নিয়ে হাটে আসছেন কৃষক ও ব্যাপারীরা।
সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে ফুলছড়ি হাট। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকেরা মরিচ বেচতে আসেন এই হাটে। এই অঞ্চলে ফুলছড়ি হাট মরিচের বাজার হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। প্রতি হাটে ৩ কোটি টাকার ওপর মরিচ কেনাবেচা হয়।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় দুই হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরাতন উপজেলা হেডকোয়াটার্স মাঠে ২০০২ সাল থেকে এই মরিচের হাট বসে। দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি যেমন প্রাণ, এসিআইসহ ঢাকা, বগুড়া, সান্তাহারম দিনাজপুর, জয়পুরহাট থেকে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে এ হাট থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান। প্রতিমণ শুকনা মরিচ সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার সকালে দেখা যায়, নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন। লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো বস্তায় কাণায় কাণায় ভরে উঠেছে হাট। ভোর থেকে হাট শুরু হওয়ার কারণে মরিচ বিক্রি করতে আসা মরিচ চাষিরা হাটবারের আগের রাতে চর থেকে নৌকায় করে মরিচ নিয়ে ফুলছড়ি হাটে অবস্থান করেন।
কৃষকরা জানান, সারা বছরই এই হাটে মরিচ বিক্রি হলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের গাবগাছি গ্রামের কৃষক নুরুজ্জামান এ বছর ছয় বিঘা জমিতে বগুড়ার দেশি জাতের লম্বা মরিচ লাগিয়েছেন। তার ওই জমিতে পরিমাণমতো গোবর ও সার ব্যবহার করার ফলে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান, মরিচ চাষ করতে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ছয় বিঘা জমি থেকে কাঁচামরিচ উৎপাদন হবে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মণ। বর্তমান বাজারে এক মণ কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে। আবার ওই মরিচই যদি শুকানো যায়, তাহলে ১৫ থেকে ১৮ মণ শুকনো মরিচ হবে ।
গজারিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি জিহাদুর রহমান মওলা বলেন, হাইব্রিড, বগুড়া ও স্থানীয় জাতের শুকনো মরিচ বেশি আসে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এ হাট থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন অনুকূল আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিন দিন মরিচের চাষ বাড়ছে। চরের লোকজন মরিচ চাষে ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: বিমল কুমার সরকার নির্বাহী সম্পাদক: তাসলিমুল হাসান সিয়াম বার্তা সম্পাদক: শামসুর রহমান হৃদয়। সম্পাদকীয় কার্যালয়: তুলশীঘাট (সাদুল্লাপুর রোড), গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা-৫৭০০
© All Rights Reserved © Kaler Chithi