সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রহ্মপুত্র নদের খনিজ সম্পদ আহরণের দায়িত্ব পেল অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

উত্তরের নদী বেষ্টিত জনপদ গাইবান্ধার পূর্ব অংশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা ।বর্ষার মৌসুমে এই নদ- নদীতে পানির প্রবাহ ব্যাপক থাকে। তবে বর্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে পানির প্রবাহও কমতে থাকে। একসময় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। শুষ্ক মৌসুমে বিস্তৃর্ণ চর জাগে এই নদের বুকে। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি নামক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে।

 

 

 

 

 

এরপর সংস্থাটির গবেষণার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী চরাঞ্চলে প্রাপ্ত পাঁচ ধরনের খনিজ আহরণে ৭৯৯ হেক্টর জমির ইজারা দেয় অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডকে ।

 

 

 

গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ুম সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে মোট ২৮ কি শর্তে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ইজারা মঞ্জুর করেন।

 

ইজারার চুক্তি অনুযায়ী, গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী ৭৯৯ হেক্টর চরাঞ্চল থেকে মূল্যবান ভারি খনিজ জিরকন, রুটাইল, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট ও ইলমেনাইট আহরণ করা হবে।

 

এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে ইজারা চুক্তির ২৮টি শর্ত মেনে প্রতি তিন মাস পর পর আহরিত খনিজের রয়্যালিটি সরকারকে দেবে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড।তারা আগামী ১০ বছর এই এলাকা থেকে পাঁচ ধরনের খনিজ আহরণ করতে পারবে বলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

এর আগে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানায় চরের প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের টেকনো ইকোনমিক ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই দাম অন্তত তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।

 

 

 

এসব খনিজ সম্পদ থেকে রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ।

 

 

 

 

 

হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত ও ভারতের আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় এসে নাম ধারণ করেছে যমুনা।

 

 

 

বর্ষার মৌসুমে এই নদে পানির প্রবাহ ব্যাপক থাকে। তবে বর্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে পানির প্রবাহও কমতে থাকে। একসময় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। শুষ্ক মৌসুমে বিস্তৃর্ণ চর জাগে এই নদের বুকে। এই চরের বালুতেই হাজার হাজার কো

 

 

 

খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ‘কুড়িগ্রামে প্রবেশ থেকে ডাউনস্ট্রিমে গাইবান্ধা পর্যন্ত এবং তিস্তা নদীর অববাহিকায় যেসব চর, সেগুলো নিয়ে আমরা জিওফিজিক্যাল সার্ভে করি। কোন জায়গায় কোন ধরনের মিনারেলস আছে, এটার প্রাথমিক স্টাডি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়। এটি কার্যকরী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় পাইলটিং করার নির্দেশনা দেন। এর পর ২০১৭ সালে একটি এটিপি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্প অনুযায়ী জয়পুরহাটে একটি খনিজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদে মূল্যবান খনিজগুলোর সন্ধান মেলে।’

 

 

 

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে আড়াই হাজার টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায় ।

 

 

 

 

 

 

Tag :

ব্রহ্মপুত্র নদের খনিজ সম্পদ আহরণের দায়িত্ব পেল অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

Update Time : ০২:১২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

উত্তরের নদী বেষ্টিত জনপদ গাইবান্ধার পূর্ব অংশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা ।বর্ষার মৌসুমে এই নদ- নদীতে পানির প্রবাহ ব্যাপক থাকে। তবে বর্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে পানির প্রবাহও কমতে থাকে। একসময় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। শুষ্ক মৌসুমে বিস্তৃর্ণ চর জাগে এই নদের বুকে। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি নামক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে।

 

 

 

 

 

এরপর সংস্থাটির গবেষণার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী চরাঞ্চলে প্রাপ্ত পাঁচ ধরনের খনিজ আহরণে ৭৯৯ হেক্টর জমির ইজারা দেয় অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডকে ।

 

 

 

গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ুম সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে মোট ২৮ কি শর্তে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ইজারা মঞ্জুর করেন।

 

ইজারার চুক্তি অনুযায়ী, গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী ৭৯৯ হেক্টর চরাঞ্চল থেকে মূল্যবান ভারি খনিজ জিরকন, রুটাইল, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট ও ইলমেনাইট আহরণ করা হবে।

 

এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে ইজারা চুক্তির ২৮টি শর্ত মেনে প্রতি তিন মাস পর পর আহরিত খনিজের রয়্যালিটি সরকারকে দেবে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড।তারা আগামী ১০ বছর এই এলাকা থেকে পাঁচ ধরনের খনিজ আহরণ করতে পারবে বলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

এর আগে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানায় চরের প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের টেকনো ইকোনমিক ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই দাম অন্তত তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।

 

 

 

এসব খনিজ সম্পদ থেকে রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ।

 

 

 

 

 

হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত ও ভারতের আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় এসে নাম ধারণ করেছে যমুনা।

 

 

 

বর্ষার মৌসুমে এই নদে পানির প্রবাহ ব্যাপক থাকে। তবে বর্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে পানির প্রবাহও কমতে থাকে। একসময় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। শুষ্ক মৌসুমে বিস্তৃর্ণ চর জাগে এই নদের বুকে। এই চরের বালুতেই হাজার হাজার কো

 

 

 

খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ‘কুড়িগ্রামে প্রবেশ থেকে ডাউনস্ট্রিমে গাইবান্ধা পর্যন্ত এবং তিস্তা নদীর অববাহিকায় যেসব চর, সেগুলো নিয়ে আমরা জিওফিজিক্যাল সার্ভে করি। কোন জায়গায় কোন ধরনের মিনারেলস আছে, এটার প্রাথমিক স্টাডি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়। এটি কার্যকরী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় পাইলটিং করার নির্দেশনা দেন। এর পর ২০১৭ সালে একটি এটিপি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্প অনুযায়ী জয়পুরহাটে একটি খনিজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদে মূল্যবান খনিজগুলোর সন্ধান মেলে।’

 

 

 

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে আড়াই হাজার টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায় ।