রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন মণ আমে ১ মণ ফ্রি, ঠকেও নিশ্চুপ চাষি

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর গ্রামের আবদুর রশিদের পাঁচ বিঘা আমবাগান রয়েছে। প্রায় প্রতি মৌসুমেই তিনি দেশের অন্যতম বৃহত্তম আমের বাজার কানসাটে আম বিক্রি করেন। কিন্তু সেখানকার আড়তদার ও ব্যাপারীরা ৪৫ থেকে ৫০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে আবদুর রশিদের মতো চাষিদের ঠকিয়ে আম বেচাকেনা চললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে ব্যাপারীরা কেনা বন্ধ করে দেন। এতে বিপাকে পড়েন প্রান্তিক চাষিরা। তাই তারা বছরের পর বছর ধরে এভাবে ঠকলেও বিষয়টি নিয়ে টুঁ শব্দ করেন না।

পিঠালীতলা গ্রামের চাষি আবদুল লতিফ বলেন, যে এলাকায় ওজনে বেশি আম পাওয়া যায়, ব্যাপারীরা সেখানে চলে যান। অনেক সময় তিন মণের জায়গায় বাধ্য হয়ে ১ মণ আম ফ্রি দিতে হয়। তা না হলে ব্যাপারীরা আম কেনেন না। আম কাঁচামাল হওয়ায় বিক্রি করতে না পারার শঙ্কায় চাষিরা দিতে বাধ্য হন। আন্দোলন করেও এর সমাধান হয়নি।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ আমগাছে মুকুল আসেনি। এ কারণে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টন।

চাষিরা বলছেন, এবার আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ সময় শীত থাকায় অধিকাংশ গাছে মুকুল আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় আশা দেখা গেছে। আমের সঠিক ওজনে ন্যায্যমূল্য পেলে তারা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে চাষিরা চান, জেলা প্রশাসন যেন আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে না দেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য জায়গায় আম বাজারজাতের অন্তত ২০ দিন পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ওঠে। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া আম পাড়ার সময়সীমার সঙ্গে জেলার আমের পরিপক্বতা আসার সময় মিলবে না। এতে লোকসান গুনতে হবে।
কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমরাও চাই চাষিদের কাছ থেকে সঠিক ওজনে আম নেওয়া হোক। কিন্তু রাজশাহী ও নওগাঁয় এক মণে ৫০-৫৫ কেজি আম পাওয়া যায়। এ কারণে অন্য জেলার ব্যাপারীরা ওইসব জায়গা থেকে আম কেনেন। বছর তিনেক আগে এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ৪০ কেজিতে মণ চালু করায় ১৫ দিন ক্রেতাশূন্য ছিল কানসাট বাজার। আম নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষি ও আড়তদাররা। তাই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে সারাদেশেই নিতে হবে। তা না হলে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, গত রোববারের মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক কঠোরভাবে আমের মণ ৪০ কেজিতেই বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অন্যান্য জেলায় এ নিয়ম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

সব জেলায় সমন্বয় না হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাইরের ক্রেতা সংকটে থাকবেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি মনোয়ার হোসেন। তবে তিনি রাজশাহী জেলার দায়িত্ব থাকাকালে ওজন জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নিলেও, তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন বলে স্বীকার করেন।

Tag :

তিন মণ আমে ১ মণ ফ্রি, ঠকেও নিশ্চুপ চাষি

Update Time : ০৪:১৪:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর গ্রামের আবদুর রশিদের পাঁচ বিঘা আমবাগান রয়েছে। প্রায় প্রতি মৌসুমেই তিনি দেশের অন্যতম বৃহত্তম আমের বাজার কানসাটে আম বিক্রি করেন। কিন্তু সেখানকার আড়তদার ও ব্যাপারীরা ৪৫ থেকে ৫০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে আবদুর রশিদের মতো চাষিদের ঠকিয়ে আম বেচাকেনা চললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে ব্যাপারীরা কেনা বন্ধ করে দেন। এতে বিপাকে পড়েন প্রান্তিক চাষিরা। তাই তারা বছরের পর বছর ধরে এভাবে ঠকলেও বিষয়টি নিয়ে টুঁ শব্দ করেন না।

পিঠালীতলা গ্রামের চাষি আবদুল লতিফ বলেন, যে এলাকায় ওজনে বেশি আম পাওয়া যায়, ব্যাপারীরা সেখানে চলে যান। অনেক সময় তিন মণের জায়গায় বাধ্য হয়ে ১ মণ আম ফ্রি দিতে হয়। তা না হলে ব্যাপারীরা আম কেনেন না। আম কাঁচামাল হওয়ায় বিক্রি করতে না পারার শঙ্কায় চাষিরা দিতে বাধ্য হন। আন্দোলন করেও এর সমাধান হয়নি।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ আমগাছে মুকুল আসেনি। এ কারণে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টন।

চাষিরা বলছেন, এবার আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ সময় শীত থাকায় অধিকাংশ গাছে মুকুল আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় আশা দেখা গেছে। আমের সঠিক ওজনে ন্যায্যমূল্য পেলে তারা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে চাষিরা চান, জেলা প্রশাসন যেন আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে না দেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য জায়গায় আম বাজারজাতের অন্তত ২০ দিন পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ওঠে। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া আম পাড়ার সময়সীমার সঙ্গে জেলার আমের পরিপক্বতা আসার সময় মিলবে না। এতে লোকসান গুনতে হবে।
কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমরাও চাই চাষিদের কাছ থেকে সঠিক ওজনে আম নেওয়া হোক। কিন্তু রাজশাহী ও নওগাঁয় এক মণে ৫০-৫৫ কেজি আম পাওয়া যায়। এ কারণে অন্য জেলার ব্যাপারীরা ওইসব জায়গা থেকে আম কেনেন। বছর তিনেক আগে এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ৪০ কেজিতে মণ চালু করায় ১৫ দিন ক্রেতাশূন্য ছিল কানসাট বাজার। আম নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষি ও আড়তদাররা। তাই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে সারাদেশেই নিতে হবে। তা না হলে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, গত রোববারের মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক কঠোরভাবে আমের মণ ৪০ কেজিতেই বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অন্যান্য জেলায় এ নিয়ম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

সব জেলায় সমন্বয় না হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাইরের ক্রেতা সংকটে থাকবেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি মনোয়ার হোসেন। তবে তিনি রাজশাহী জেলার দায়িত্ব থাকাকালে ওজন জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নিলেও, তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন বলে স্বীকার করেন।