রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘ দেখলেই কৃষকের দুশ্চিন্তা 

 

গাইবান্ধায় দিগন্তজুড়ে নজর কাড়ছে বোরো ধান। ইতোমধ্যে খেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটা-মাড়াইও করছেন। এরমধ্যে দেখা দিয়েছে আকাশের বিরূপ আচরণ। কখনও কালো মেঘে ঢাকছে আবার কখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে। মেঘ দেখলেই দুশ্চিন্তার চাপ ফুটে উঠে চোখ-মুখে। এই বুঝি শেষ সময়ে কষ্টের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

সম্প্রতি গাইবান্ধার নিভৃত অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর। এ থেকে প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় গাইবান্ধা অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। সেই সময়ে শ্রমিকের কোনো সঙ্কট ছিল না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরে ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সঙ্কট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধতি ধানের আবাদ ও  কাটা-মাড়াইয়ের জন্য  কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে একযোগে ধান কাটার উপযোগী হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খরা আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।

 

সম্প্রীতি জেলার আশপাশ এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে গাইবান্ধা অঞ্চলেও। কখনও কখনও মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা।

 

এক সময়ে শ্রমিকের অভাব ছিল না। গ্রামের অর্ধেক বাসিন্দা ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেইসব শ্রমিকরা অন্য পেশায় জড়িত হওয়ার কারণে তারা আর ধান কাটার কাজ করেন না। বর্তমানে এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন সবুজ মিয়ার নামের এক শ্রমিক।

আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেপে ওঠে। এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংস্কটের কারণে ধান কাটতে পারছি না। সরকারের সেই হারভেস্টর মেশিন খুঁজেও পাওয়া যায় না।

 

ফনি চন্দ্র সরকার নামের এক কৃষক বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ১৫ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে। অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে।

 

কালের চিঠি /

 

Tag :

মেঘ দেখলেই কৃষকের দুশ্চিন্তা 

Update Time : ০৪:৫৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

 

গাইবান্ধায় দিগন্তজুড়ে নজর কাড়ছে বোরো ধান। ইতোমধ্যে খেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটা-মাড়াইও করছেন। এরমধ্যে দেখা দিয়েছে আকাশের বিরূপ আচরণ। কখনও কালো মেঘে ঢাকছে আবার কখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে। মেঘ দেখলেই দুশ্চিন্তার চাপ ফুটে উঠে চোখ-মুখে। এই বুঝি শেষ সময়ে কষ্টের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

সম্প্রতি গাইবান্ধার নিভৃত অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর। এ থেকে প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় গাইবান্ধা অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। সেই সময়ে শ্রমিকের কোনো সঙ্কট ছিল না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরে ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সঙ্কট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধতি ধানের আবাদ ও  কাটা-মাড়াইয়ের জন্য  কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে একযোগে ধান কাটার উপযোগী হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খরা আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।

 

সম্প্রীতি জেলার আশপাশ এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে গাইবান্ধা অঞ্চলেও। কখনও কখনও মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা।

 

এক সময়ে শ্রমিকের অভাব ছিল না। গ্রামের অর্ধেক বাসিন্দা ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেইসব শ্রমিকরা অন্য পেশায় জড়িত হওয়ার কারণে তারা আর ধান কাটার কাজ করেন না। বর্তমানে এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন সবুজ মিয়ার নামের এক শ্রমিক।

আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেপে ওঠে। এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংস্কটের কারণে ধান কাটতে পারছি না। সরকারের সেই হারভেস্টর মেশিন খুঁজেও পাওয়া যায় না।

 

ফনি চন্দ্র সরকার নামের এক কৃষক বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ১৫ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে। অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে।

 

কালের চিঠি /