আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে বৈশাখ-জৈষ্ঠ এই দু‘মাসে হঠাৎ বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময় কই মাছ মাটিতে উঠে আসে লাফালাফি করে। এই ঘটনাকে সাধারণ মানুষ বলে থাকে ‘মাছ উজানো’। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কি কারণে মাছ তাদের ধর্মের বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে।
উজান হলো স্রোতের বিপরীত দিকে যাওয়া। আর উজান শব্দটি এসেছে ‘উজানো’র উৎপত্তি, যার মানে হলো স্রোতের বিপরীত দিকে যাওয়া। এই বিষয়টিকে বলে ‘ট্যাক্সিস’। যে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকলেই বুঝে যাবেন আসলে কেন কই মাছ পানির উপর ডাঙায় উঠে আসে।
ট্যাক্সিস একটা ধর্ম; যার অর্থ প্রাণীর দিকমুখিতা। সহজভাবে বললে, বিভিন্ন পরিবেশে (যেমন- তাপ, চাপ, আলো, শব্দ) প্রাণীর ছুটে চলা। যখন বিভিন্ন পরিবেশের দিকে প্রাণী ছুটে চলে, তখন তাকে পজেটিভ ট্যাক্সিস বলা হয়। কই মাছের ট্যাক্সিস হলো পজিটিভ ট্যাক্সিস। কোনো প্রাণী স্রোতের দিকে চললে তাকে রিওট্যাক্সিস বলে। যা এক প্রকার পজিটিভ ট্যাক্সিস। বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুকুর, খাল-বিল, নদীতে পানি বেড়ে যায়। সেই সময় স্রোতের দিকে কই মাছ চলতে শুরু করে। আকাশের দিক থেকে যেহেতু পানির স্রোত নামে তাই সেইদিকে লাফাতে থাকে। বিষয়টিকে অনেকেই নতুন পানির দিকে যাওয়া বলেন। তাছাড়া কই মাছের পাখনা বেশ শক্ত হয়ে থাকে তাই এরা মাটির উপরেও এসে লাফালাফি করতে পারে।
আরেকটি কারণও আছে অবশ্য। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে অক্সিজেন এবং খাবারের ঘাটতি তৈরি হয়। কই মাছ বৃষ্টির পানি পাওয়ায় সে অক্সিজেন ও খাবারের জন্য স্রোতের সঙ্গে রিওট্যাক্সিসে সাড়া দেয়। বৃষ্টির সময় স্রোতের দিকে এবং পুকুর পাড়ে উঠে আসে এই মাছ।
কালের চিঠি/ ফাহিম