বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা ভোট: নেতাকর্মীদের বহিষ্কারে বিএনপি কি আরও দুর্বল হবে?

তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাই বিএনপির প্রাণশক্তি। বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে তার প্রমাণও রেখেছেন তারা। যদিও টানা ১৭ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতায় দিন দিন সেই অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এমন বাস্তবতায় বিএনপি মাঠ পর্যায়ে আরও দুর্বল হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপির দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত বাড়ছে। বহিষ্কৃতদের বাদ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে দল পরিচালনা করা যাবে না।

এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, বহিষ্কারের ফলে দল আরও শক্তিশালী হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা দলের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করে না। দলে তাদের আর প্রয়োজন নেই। এখানে দলীয় কোন্দলের কোনো প্রশ্নই আসে না।

এদিকে, তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার নিয়ে বিএনপিতে নানা মত রয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কঠিন পদক্ষেপ দরকার ছিল না বরং সহায়তা করা যেত। আবার অন্যপক্ষ বলছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের মধ্যপন্থী একটি অংশের মত, এই ইস্যুতে বিএনপি আরও কৌশলী হতে পারতো।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলের কোটি কোটি নেতাকর্মী রয়েছে। সেখান থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করার কারণে দলের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

বিএনপির সহ-অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, দলের সবাইকে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। বহিষ্কারে ফলে দল আরও ঐক্যবদ্ধ হবে। অতীতে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে কাজ করেছে, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি।

দলটির দায়িত্বশীল অনেক নেতা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলের শক্ত অবস্থান না থাকলে পরবর্তীতে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হবেন। এটি হলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। তাছাড়া পরবর্তী যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়বে। এমন বাস্তবতায় দলীয় শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখতে বিএনপির কাছে বহিস্কারের বিকল্প ছিল না।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করেছে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। গত ২৬ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৭৩ জন নেতাকর্মীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে দলটি। পরে আরও একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

উল্লেখ্য, এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ৮ মে প্রথম ধাপে ১৪৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন।

কালের চিঠি /

Tag :
Popular Post

উপজেলা ভোট: নেতাকর্মীদের বহিষ্কারে বিএনপি কি আরও দুর্বল হবে?

Update Time : ০৩:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাই বিএনপির প্রাণশক্তি। বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে তার প্রমাণও রেখেছেন তারা। যদিও টানা ১৭ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতায় দিন দিন সেই অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এমন বাস্তবতায় বিএনপি মাঠ পর্যায়ে আরও দুর্বল হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপির দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত বাড়ছে। বহিষ্কৃতদের বাদ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে দল পরিচালনা করা যাবে না।

এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, বহিষ্কারের ফলে দল আরও শক্তিশালী হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা দলের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করে না। দলে তাদের আর প্রয়োজন নেই। এখানে দলীয় কোন্দলের কোনো প্রশ্নই আসে না।

এদিকে, তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার নিয়ে বিএনপিতে নানা মত রয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কঠিন পদক্ষেপ দরকার ছিল না বরং সহায়তা করা যেত। আবার অন্যপক্ষ বলছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের মধ্যপন্থী একটি অংশের মত, এই ইস্যুতে বিএনপি আরও কৌশলী হতে পারতো।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলের কোটি কোটি নেতাকর্মী রয়েছে। সেখান থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করার কারণে দলের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

বিএনপির সহ-অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, দলের সবাইকে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। বহিষ্কারে ফলে দল আরও ঐক্যবদ্ধ হবে। অতীতে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে কাজ করেছে, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি।

দলটির দায়িত্বশীল অনেক নেতা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলের শক্ত অবস্থান না থাকলে পরবর্তীতে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হবেন। এটি হলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। তাছাড়া পরবর্তী যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়বে। এমন বাস্তবতায় দলীয় শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখতে বিএনপির কাছে বহিস্কারের বিকল্প ছিল না।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করেছে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। গত ২৬ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৭৩ জন নেতাকর্মীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে দলটি। পরে আরও একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

উল্লেখ্য, এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ৮ মে প্রথম ধাপে ১৪৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন।

কালের চিঠি /