সব দিক থেকে ছুটে আসা মানুষ এক হয় এই শহরে। এখানে কেউ হুট করে, কেউ লুট করে নেয় সব প্রাপ্তি। কারও লড়াই চিরকালের। এই ঢাকা তার আদিবাসী থেকে অধিবাসী, সবাইকে কতো কি দিলো! অথচ এখন নিজেই খাঁ খাঁ করছে। ভীষণ উত্তাপে পুড়ছে ঢাকা।
এই তাপপ্রবাহে গোটা নগর যেনো জ্বলছে উনুনের আগুনে। সারি সারি দালানের বাড়িতে আর রাজপথ কাঁপানো গাড়িতে মুখ বুঁজে থাকা মানুষ যতো। রাজ্যের ভাবনা নিয়ে ভিড়ের স্রোতে একা হেঁটে চলা মানুষটিও ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত।
শ্রমজীবীরা নাকাল এই দহনদিনে। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? আমি? আপনি? আমাদের লোভ? অপরিসীম চাওয়া?
এ শহরে গাছের চেয়ে দালান বেশি, জলকণার চেয়ে মানুষ বেশি, ফুলের চেয়ে পঙ্কিলতা বেশি।
এ শহর শিশুর, কবির, ধনীর, ভেসে আসা মানুষের, স্বপ্নের, লুটেরার।
এ শহর তৃষ্ণার, সব নদী-খাল শুষে খেয়েও মেটেনি আমার তেষ্টা।
এ শহরে সবুজ বা নহরের চেয়ে কংক্রিটের কদর বেশি।
এখানে ফুলের সুবাস দূষণের দাপটে উড়ে যায় কর্পূর হয়ে।
হ্যালো ঢাকা,
নাহ্, তুমি তো আমার প্রিয় ঢাকা!
নাকি ‘জাদুর শহর’?
নাকি পোড়া শহর!
তোমার অভিমানের আগুনে পুড়ছি আমি।
পেলব ছায়ার তৃষ্ণায় পোড়ে তোমার পথ।
আমি গাছগুলোকে সব নিলামে দিয়েছি যে,
আর জলাধার ভরেছি কংক্রিটে,
কাচের বড় বড় দালানে আমি যখন শীতাতপে, তোমার শরীরে লাগে গরম হাওয়ার হলকা।
আমার স্বপ্ন পূরণের ভারে তোমাকে করেছি ক্লান্ত।
এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে এক ইঞ্চি জায়গাও আমি ছাড়ব না, তোমাকে শ্বাস নিতে দেবো না আমি।
আমার আরও চাই, আরও। দালান চাই, গাড়ি চাই, টাকা চাই.. আমার কেবল চাই আর চাই।
কেমন করে বোঝাই তোমায়– আমি কেবল নিতে শিখেছি, দিতে নয়।
(নগরায়নের নামে বিষাক্ত ছোবল আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা ঢাকার আত্মকথা।)
কালের চিঠি / আলিফ