বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাগামহীন বাজার, শুল্ক ছাড়ের সুফল পাচ্ছে না মানুষ

রোজার বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। মুসলমানদের এই ধর্মীয় উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে চায় সরকার। শুল্কছাড় ছাড়াও বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকি। সিন্ডিকেট এবং মজুদদারদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে হুঙ্কার। তারপরও নেই দাম কমার লক্ষণ। উল্টো রমজান যতই এগিয়ে আসছে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। টিসিবি’র হিসাব বলছে, গেল বছরের তুলনায় এই রোজার আগে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই উর্ধ্বমুখী।

তবে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে কয়েকটি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। এরপরও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। শুধুমাত্র শুল্ক ছাড়ের প্রভাব পড়বে সয়াবিন তেলে। আগামী ১ মার্চ থেকে কমছে সয়াবিনের দাম। অন্যান্য শুল্ক ছাড় করা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। বরং দাম বাড়তির দিকে। নতুনভাবে বাজারে বেড়েছে চিনির দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বেশি থাকায় পণ্য কেনা কমিয়েছেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সবার জন্য বাজারের জিনিসপত্র কেনা কঠিন। কিছু মানুষ আছে যারা কিনতে পারে, তবে বেশির ভাগ মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর।

খেজুরে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। তবে এখনও বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে রোজায় প্রয়োজনীয় এই পণ্য। উল্টো কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর এক খেজুর বিক্রেতা বলেন, জাম্বুরা নামে এক জাতের খেজুর আছে, এটির এখন দাম এক হাজার ৮০০ টাকা। কয়দিন আগেও ছিল এক হাজার একশ থেকে দুইশ টাকা। মারিয়াম ছিল ছয়শ থেকে সাতশ টাকা কেজি, এখন এক হাজার। সব খেজুরের দাম বেড়েছে। মাশরুক এতদিন ছিল এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশ টাকা কেজি, এখন দেড় হাজার বিক্রি হচ্ছে।

চিনির দামেও স্বস্তি নেই। খুচরা পর্যায়ে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি। প্যাকেট চিনির দাম আরও বেশি। ছোলার দামও কমেনি। বরং গেল বছরের চেয়ে দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা ক্রেতা নেই বললেই চলে। বিক্রি কমেছে। আমাদের দোকানে যে খরচ হয়, সেটি তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়তি। এখানে তো আমাদের কোনো হাত নেই। বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আরেক দোকানি বলেন, কাবলি ও ছোলা আনতে গিয়েছিলাম। পাইকাররা দেয়নি। বলেছে, কয়দিন পরে নিতে। তখন নাকি দাম কমবে।

খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে এখন ১৩০ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শবেবরাত এবং রোজাই মূল্যবৃদ্ধির কারণ। গরুর মাংসের দামও এখন বাড়তির দিকে। কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মাংস। গুটিকয়েক মাংস ব্যবসায়ী ক্রেতাদের জিম্মি করে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম।

রাজধানীর এক বয়লার মুরগি ব্যবসায়ী বলেন, গত ১০ থেকে ১৫দিন আগেও ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করেছি। আজকে (শবে বরাতের দিন) বাজার দর ২৩০ টাকা। আমাদেরকে দুইশর বেশি দিয়ে কিনতেই হয়েছে।

তবে মনিটরিংয়ের নামে মাঝে মাঝে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের ‘দৌড়াদৌড়িতে’ বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না জানিয়েছেন কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক।

তিনি বলেন, বাজারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে গুটি কয়েক লোক আমদানিকারক। আরও আমদানিকারক বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ব্যতীত, বাজারে একে অপরকে দোষারোপ করে এবং আহ্বান জানিয়ে কিংবা কারো ওপর চাপ তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমদানিকারক বাড়াতে হবে। অন্যথায় ভোক্তার কর্মকর্তাদের দৌড়াদৌড়িতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

কালের চিঠি / আলিফ

Tag :
Popular Post

লাগামহীন বাজার, শুল্ক ছাড়ের সুফল পাচ্ছে না মানুষ

Update Time : ০৫:৫৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রোজার বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। মুসলমানদের এই ধর্মীয় উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে চায় সরকার। শুল্কছাড় ছাড়াও বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকি। সিন্ডিকেট এবং মজুদদারদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে হুঙ্কার। তারপরও নেই দাম কমার লক্ষণ। উল্টো রমজান যতই এগিয়ে আসছে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। টিসিবি’র হিসাব বলছে, গেল বছরের তুলনায় এই রোজার আগে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই উর্ধ্বমুখী।

তবে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে কয়েকটি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। এরপরও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। শুধুমাত্র শুল্ক ছাড়ের প্রভাব পড়বে সয়াবিন তেলে। আগামী ১ মার্চ থেকে কমছে সয়াবিনের দাম। অন্যান্য শুল্ক ছাড় করা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। বরং দাম বাড়তির দিকে। নতুনভাবে বাজারে বেড়েছে চিনির দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বেশি থাকায় পণ্য কেনা কমিয়েছেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সবার জন্য বাজারের জিনিসপত্র কেনা কঠিন। কিছু মানুষ আছে যারা কিনতে পারে, তবে বেশির ভাগ মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর।

খেজুরে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। তবে এখনও বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে রোজায় প্রয়োজনীয় এই পণ্য। উল্টো কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর এক খেজুর বিক্রেতা বলেন, জাম্বুরা নামে এক জাতের খেজুর আছে, এটির এখন দাম এক হাজার ৮০০ টাকা। কয়দিন আগেও ছিল এক হাজার একশ থেকে দুইশ টাকা। মারিয়াম ছিল ছয়শ থেকে সাতশ টাকা কেজি, এখন এক হাজার। সব খেজুরের দাম বেড়েছে। মাশরুক এতদিন ছিল এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশ টাকা কেজি, এখন দেড় হাজার বিক্রি হচ্ছে।

চিনির দামেও স্বস্তি নেই। খুচরা পর্যায়ে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি। প্যাকেট চিনির দাম আরও বেশি। ছোলার দামও কমেনি। বরং গেল বছরের চেয়ে দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা ক্রেতা নেই বললেই চলে। বিক্রি কমেছে। আমাদের দোকানে যে খরচ হয়, সেটি তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়তি। এখানে তো আমাদের কোনো হাত নেই। বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আরেক দোকানি বলেন, কাবলি ও ছোলা আনতে গিয়েছিলাম। পাইকাররা দেয়নি। বলেছে, কয়দিন পরে নিতে। তখন নাকি দাম কমবে।

খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে এখন ১৩০ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শবেবরাত এবং রোজাই মূল্যবৃদ্ধির কারণ। গরুর মাংসের দামও এখন বাড়তির দিকে। কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মাংস। গুটিকয়েক মাংস ব্যবসায়ী ক্রেতাদের জিম্মি করে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম।

রাজধানীর এক বয়লার মুরগি ব্যবসায়ী বলেন, গত ১০ থেকে ১৫দিন আগেও ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করেছি। আজকে (শবে বরাতের দিন) বাজার দর ২৩০ টাকা। আমাদেরকে দুইশর বেশি দিয়ে কিনতেই হয়েছে।

তবে মনিটরিংয়ের নামে মাঝে মাঝে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের ‘দৌড়াদৌড়িতে’ বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না জানিয়েছেন কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক।

তিনি বলেন, বাজারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে গুটি কয়েক লোক আমদানিকারক। আরও আমদানিকারক বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ব্যতীত, বাজারে একে অপরকে দোষারোপ করে এবং আহ্বান জানিয়ে কিংবা কারো ওপর চাপ তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমদানিকারক বাড়াতে হবে। অন্যথায় ভোক্তার কর্মকর্তাদের দৌড়াদৌড়িতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

কালের চিঠি / আলিফ