তিনি আরও বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ধারণাটি থার্ড জেন্ডার হিসেবে চালিয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনোক্রমেই ভালো বলে মনে হচ্ছে না।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে “শরীফা” গল্পের বিতর্কিত দুটি লাইন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সপ্তম শ্রেণির বইয়ের শরিফার গল্পে মাত্র দুইটা লাইন.. ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলতো, কিন্তু আমি নিজে এক সময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মতো হলেও মনে মনে একজন মেয়ে। এটা হল একটা মানসিক বিষয়। এটাকে অন্তর্ভুক্ত করে এখানে উদ্দেশ্য যেটা এ সংসদে বলতে চাই না, আপনিও মাননীয় স্পিকার নিজে বোঝেন। এটা যেহেতু ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাই দুটো লাইন পরিবর্তন করা হলে এ দেশের মানুষের কোনো আপত্তি থাকবে না।”
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মুজিবুল হক চুন্নু। এদিন যথারীতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, “ইদানিং একটা বিষয় পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবখানে আলোচিত হচ্ছে- সে আলোচনায় দেখা যায় অনেক সময় ভুল আলোচনা হয়, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত আসছে। তাতে ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা হলো সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি গল্প- শরীফার গল্প।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী যাতে বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক উল্টাপাল্টা কথা হচ্ছে। সামান্য জিনিস যাতে বড় না হয়, শিক্ষামন্ত্রী অংশীজনের সঙ্গে বসে লাইন দুটো যদি প্রত্যাহার করা হয় তাহলে কোনো বিতর্ক থাকে না।”
গল্পটি পড়ে “ট্রান্সজেন্ডার”, “তৃতীয় লিঙ্গ” এবং “হিজড়া”র মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “নিজেকে নিজের জন্মগত লিঙ্গ বাদে অন্য কোনো লিঙ্গ মনে করাটাই ট্রান্সজেন্ডার। এ বিষয়টা পুরোপুরি মানসিক। হিজড়া যারা তারা হল থার্ড জেন্ডার, সে বিষয়টা জন্মগত। এটা মানসিক, শারীরিক উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এরাই থার্ড জেন্ডার অথবা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। ট্রান্সজেন্ডার একটি শ্রেণির মতবাদ, এটা প্রবর্তিত হয়েছে গতানুগতিক, সামাজিক ও ধর্মকে ধারণা অর্থাৎ পরিবার, ধর্মকে ভেঙে সামাজিক একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। এদের মতবাদ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যে কোনো সময় যে কোনো লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের কী লিঙ্গ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন সেটা তাদের কাছে কোনো বিষয়ই না। তবে পশ্চিমাদের অনেকেই এ মতবাদের বিরোধী।”
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “ট্রান্সজেন্ডার ধারণাটি থার্ড জেন্ডার হিসেবে চালিয়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনোক্রমেই ভালো বলে মনে হচ্ছে না। এ ট্রান্সজেন্ডার ধারণাটি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ এরই মধ্যে মতামত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলও দলীয়ভাবে ট্রান্সজেন্ডার ধারণার বিরোধী।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাই বিশ্বাস করি, যারা হিজড়া তারা নিজ থেকে হিজড়া না। তারা জন্মগতভাবে হিজড়া, আল্লাহপাক তাদের এভাবে সৃষ্টি করেছেন। এদের অধিকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম স্বীকার করে। ইসলাম ধর্মেও তাদের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে। এমনকি সৌদি ফতোয়া বোর্ড তাদেরকে অপারেশন করে স্পেসিফিক জেন্ডারে রূপান্তরিত করাকে সহি বলে অনেক আগে মতামত দিয়েছেন। হিজড়াদের নিয়ে কারো কোনো আপত্তি নেই।”
“শরীফা” গল্পটি সম্প্রতি নতুন করে সামনে আসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক একটি অনুষ্ঠানে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কালের চিঠি / আশিকুর।