বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিদের অবৈধ আয় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান টিআইবির

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের কারও অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি বিধি-বহির্ভূত মালিকানাধীন জমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানিয়েছে।

 

টিআইবি বলছে, দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দ্বাদশ সংসদ সদস্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। একশত কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন সংসদ সদস্য সংখ্যা ১৫। সংসদের সদস্যদের অস্থাবর সম্পদের সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গড় অস্থাবর সম্পদের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে দশম সংসদের তুলনায় একাদশ সংসদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি।

 

 

২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৪ সালে বৃদ্ধির হারও প্রায় ৭০.৪১ শতাংশ। আবার বছরে এক কোটি বা তার বেশি টাকা আয় করেন এমন ১১২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন এবারের সংসদে, যা পুরো সংসদের প্রায় ৩৮ শতাংশ। আর ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা আয় করেন ৫২ শতাংশ সংসদ সদস্য।

 

নতুন সংসদ সদস্যদের ৬৫ শতাংশই ব্যবসায়ী, যা সর্বশেষ চারটি সংসদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নবম জাতীয় সংসদে ৫৬.৮৩ শতাংশ, দশম জাতীয় সংসদে ৫৭.৫৯ শতাংশ এবং একাদশ জাতীয় সংসদে ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্যই ছিলেন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ১৮ শতাংশ।

 

 

টিআইবির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের আইন (ল্যান্ড রিফর্ম অ্যাক্ট, ২০২৩) একজন ব্যক্তির ভূমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা (কৃষি জমির ক্ষেত্রে ৬০ বিঘা এবং অকৃষি জমিসহ যা ১০০ বিঘা পর্যন্ত যেতে পারে) বেঁধে দিলেও আইনি সীমার বাইরে জমি আছে ১৩ জন সংসদ সদস্যের কাছে। সম্মিলিতভাবে এই ১৩ জন সংসদ সদস্যের আইনি সীমার বাইরে বাড়তি জমি রয়েছে ৮০০ একর (৩ বিঘায় ১ একর বিবেচনায়)। সংসদ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক, হলফনামায় তার প্রদর্শিত জমির পরিমাণ ৩৮০.৭৫ একর।

 

 

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ২০২৪ নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত অঙ্গীকারের (পৃষ্ঠা ৪২, বুলেট ২) যথার্থতার দৃষ্টান্ত হিসেবে সংসদ সদস্যদের অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে, আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি জমি বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যদের অনেকের মালিকানাধীন রয়েছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের আহ্বান জানাই আমরা।

 

টিআইবি নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা এই আট ধরণের তথ্যকে বিশ্লেষণ করে ‘নো ইউর ক্যান্ডিডেট’ নামে ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করে টিআইবি। সেই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Tag :

এমপিদের অবৈধ আয় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান টিআইবির

Update Time : ০৫:৩১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের কারও অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি বিধি-বহির্ভূত মালিকানাধীন জমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানিয়েছে।

 

টিআইবি বলছে, দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দ্বাদশ সংসদ সদস্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। একশত কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন সংসদ সদস্য সংখ্যা ১৫। সংসদের সদস্যদের অস্থাবর সম্পদের সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গড় অস্থাবর সম্পদের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে দশম সংসদের তুলনায় একাদশ সংসদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি।

 

 

২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৪ সালে বৃদ্ধির হারও প্রায় ৭০.৪১ শতাংশ। আবার বছরে এক কোটি বা তার বেশি টাকা আয় করেন এমন ১১২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন এবারের সংসদে, যা পুরো সংসদের প্রায় ৩৮ শতাংশ। আর ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা আয় করেন ৫২ শতাংশ সংসদ সদস্য।

 

নতুন সংসদ সদস্যদের ৬৫ শতাংশই ব্যবসায়ী, যা সর্বশেষ চারটি সংসদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নবম জাতীয় সংসদে ৫৬.৮৩ শতাংশ, দশম জাতীয় সংসদে ৫৭.৫৯ শতাংশ এবং একাদশ জাতীয় সংসদে ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্যই ছিলেন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ১৮ শতাংশ।

 

 

টিআইবির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের আইন (ল্যান্ড রিফর্ম অ্যাক্ট, ২০২৩) একজন ব্যক্তির ভূমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা (কৃষি জমির ক্ষেত্রে ৬০ বিঘা এবং অকৃষি জমিসহ যা ১০০ বিঘা পর্যন্ত যেতে পারে) বেঁধে দিলেও আইনি সীমার বাইরে জমি আছে ১৩ জন সংসদ সদস্যের কাছে। সম্মিলিতভাবে এই ১৩ জন সংসদ সদস্যের আইনি সীমার বাইরে বাড়তি জমি রয়েছে ৮০০ একর (৩ বিঘায় ১ একর বিবেচনায়)। সংসদ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক, হলফনামায় তার প্রদর্শিত জমির পরিমাণ ৩৮০.৭৫ একর।

 

 

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ২০২৪ নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত অঙ্গীকারের (পৃষ্ঠা ৪২, বুলেট ২) যথার্থতার দৃষ্টান্ত হিসেবে সংসদ সদস্যদের অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে, আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি জমি বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যদের অনেকের মালিকানাধীন রয়েছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের আহ্বান জানাই আমরা।

 

টিআইবি নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা এই আট ধরণের তথ্যকে বিশ্লেষণ করে ‘নো ইউর ক্যান্ডিডেট’ নামে ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করে টিআইবি। সেই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।